পিআর পদ্ধতি নিয়ে হঠাৎ এতো আলোচনা

news paper

এম. এ. মান্নান, গবেষক ও বিশ্লেষক

প্রকাশিত: ৭-৯-২০২৫ দুপুর ২:৫৪

25Views

প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি হলো একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা জোট জনগণের ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন লাভ করে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত দল-ভিত্তিক তালিকা ব্যবহার করা হয়, যেখানে ভোটাররা কোনো ব্যক্তি-প্রার্থীকে নয়, বরং একটি দল বা জোটকে ভোট দেয়। যে যে দেশে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন হয়: বিশ্বের গুটিকয়েক দেশে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।যেমন: জার্মানি: (মিশ্র পিআর) সুইডেন, নরওয়ে,ডেনমার্ক,(স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো) ইসরায়েল (সম্পূর্ণ দল-তালিকা ভিত্তিক) ,দক্ষিণ আফ্রিকা,নিউজিল্যান্ড (মিশ্র পিআর ),নেদারল্যান্ডস,স্পেন।  প্রার্থী কীভাবে নির্বাচিনের পদ্ধতি: পিআর পদ্ধতিতে প্রধানত দুটি উপায়ে প্রার্থী নির্বাচিত হয়: (১) দল-তালিকা পদ্ধতি: প্রতিটি দল একটি পূর্বনির্ধারিত তালিকা জমা দেয়। দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন পায়। তালিকার শীর্ষ থেকে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত দলীয় তৈলবাজ ও চাঁদা প্রদানকারীদানগন প্রাধান্য পেতে পারে। (২) মিশ্র-সদস্য আনুপাতিক: কিছু আসন সরাসরি ভোটে (এফপিটিপি) এবং বাকিগুলো দলীয় তালিকা থেকে নির্বাচিত হয়।  উদাহরণ: জার্মানি, নিউজিল্যান্ড।   নির্বাচিত প্রার্থীদের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা: পিআর পদ্ধতিতে প্রার্থীরা সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি নন, তাই তাদের দায়বদ্ধতা মূলত দলের প্রতি বেশি।  তবে কিছু দেশে (যেমন জার্মানি) "মিশ্র পদ্ধতি"থাকায় কিছু প্রার্থী সরাসরি ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ও নীতিমালা প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতির গ্রহনযোগ্যতা: ইতিবাচক দিক: (ক)ক্ষুদ্র দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পেতে পাওে,(খ)সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপব্যবহার কমতে পাওে, (গ) জাতীয় সংসদে বৈচিত্র্য আসতে পারে। নেতিবাচক দিক: (ক) বাংলাদেশে ব্যক্তি-ভিত্তিক রাজনীতি প্রাধান্য বিস্তার করে, তাই দল-তালিকা পদ্ধতি জনপ্রিয় নাও হতে পাওে, (খ)স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব কমে যেতে পারে।  (গ)দলীয় নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দল/প্রতীকের সম্ভাবনা: (ক)পিআর পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ও মধ্যবর্তী দলগুলো, যেমন:-জাতীয় পার্টি,ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ,এনসিপি লাভবান হতে পারে। কারণ তাদের ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন মিলবে, (খ)আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র মতো বড় দলগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য কমতে পাওে,(গ)ধর্মভিত্তিক বা আঞ্চলিক দলগুলোও সুবিধা পেতে পাওে, যেমন: জামায়াত ইসলামি, ইসলামিআন্দোলন,ইসলামি ঐক্যজোট। সর্বোত্তম সমাধান: বাংলাদেশের জন্য "মিশ্র নির্বাচন পদ্ধতি সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে। যেখানে:অর্ধেক আসন সরাসরি ভোটে (এফপিটিপি) এবং  অর্ধেক আসন দলীয় তালিকা থেকে নির্বাচিত হবে।  এতে স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব ও জাতীয় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব উভয়ই নিশ্চিত হবে। প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির সুফল ও কুফল:-প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি একটি জনপ্রিয় নির্বাচনী ব্যবস্থা, যা বিশ্বের অনেক দেশে ব্যবহৃত হয়। তবে এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ১) এ পদ্ধতির সুফল: ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব- পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি দল ভোটের অনুপাত অনুযায়ী আসন পায় ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকে। ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট পদ্ধতির মতো "ভোটের অপচয়"হয় না, যেখানে একটি দল ৪০% ভোট পেয়েও ৬০% আসন পেতে পারে।  (খ) রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি: বহুদলীয় গণতন্ত্রে পিআর পদ্ধতি ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ ও মতাদর্শগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে।  উদাহরণ সরুপ বলা যায়, জার্মানি, সুইডেনে ছোট দলগুলোও সংসদে জায়গা পায়। (গ) সংখ্যালঘু ও নারী প্রতিনিধিত্ব: দলগুলো তালিকায় নারী ও সংখ্যালঘু প্রার্থী রাখতে বাধ্য হয়, ফলে সংসদে তাদের উপস্থিতি বাড়ে। অনেক দেশে জেন্ডার কোটা (যেমন ৩০% নারী প্রার্থী) প্রয়োগ করা হয়।  (ঘ) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: পিআর পদ্ধতিতে জোট সরকার গঠিত হয়, যা একদলীয় একনায়কত্ব রোধ করে। উদাহরণসরুপ নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কে জোট সরকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।(ঙ) ভোটারদের কাছে দলীয় জবাবদিহিতা। যেহেতু দলগুলো তালিকা ভিত্তিক নির্বাচন করে, তাই তারা তাদের ইশতেহার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকে।  দলীয় শৃঙ্খলা বেশি থাকে, যা দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করে। (২)পিআর পদ্ধতির কুফল: ক) দলীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ। দলীয় নেতারা তালিকা প্রণয়ন করেন তাই সাধারণ সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের প্রভাব কমে যায়।  প্রার্থীরা দল প্রধানদের খুশি রাখতে বাধ্য হয়, ভোটারদের নয়।  (খ) স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের অভাব: পিআর পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সরাসরি প্রার্থী থাকে না ফলে স্থানীয় সমস্যা সমাধানে দুর্বলতা দেখা দেয়। এফপিটিপিতে যেমন প্রতিটি আসনের নিজস্ব এমপি থাকে, পিআর পদ্ধতিতে তা থাকে না।  (গ) জোট সরকারের অস্থিরতা: পিআর পদ্ধতিতে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না ফলে জোট সরকার গঠিত হয়, যা দুর্বল ও অস্থির হতে পারে।  উদাহরণসরুপ ইসরায়েল ও ইতালিতে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হয়।  (ঘ) চরমপন্থী দলের উত্থান: পিআর পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র চরমপন্থী দলগুলোও সংসদে ঢুকতে পারে। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায়।  উদাহরণসরুপ জার্মানিতে কিছু চরমপন্থী দল পিআর সুবিধা নেয়। (ঙ) জটিল গণনা পদ্ধতি: পিআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও আসন বণ্টন জটিল। সাধারণ ভোটাররা প্রায়ই বুঝতে পারেন না কীভাবে আসন বণ্টন হচ্ছে। (৩)বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতি উপযোগীতা: ইতিবাচক দিক: (ক) ক্ষুদ্র দলগুলোর (যেমন: জাতীয় পার্টি,ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ) প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। (খ)সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একচ্ছত্র আধিপত্য কমবে।  নেতিবাচক দিক: (ক)বাংলাদেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রাধান্য বিস্তার করে, তাই দল-তালিকা পদ্ধতি জনপ্রিয় নাও হতে পারে। (খ)স্থানীয় পর্যায়ে সরাসরি প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে।  সর্বোত্তম সমাধান: পিআর পদ্ধতির সুফল ও কুফল উভয়ই রয়েছে। এটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে ভালো কাজ করে, তবে স্থানীয় প্রতিনিধিত্বহীনতা ও জোট সরকারের অস্থিরতা এর প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশের মতো দেশে মিশ্র পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে।ব াংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে  পিআর (প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশে বর্তমানে এফপিটিপি পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, যেখানে জয়ী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ভোট প্রয়োজন হয়, কিন্তু ক্ষুদ্র দল ও ভোটারদের একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব হারায়। পিআর পদ্ধতি চালু হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। (১) বাংলাদেশে ডাব্লিউসিএভিআই পদ্ধতি প্রয়োজন কি? (ক) হ্যাঁ, প্রয়োজন কারণ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি: বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেন্দ্রিক দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় ছোট দলগুলো (জাতীয় পার্টি,ওয়ার্কার্স পার্টি,  জাসদ, এলডিপি, বিকল্পধারা) প্রান্তিক। ডাব্লিউসিএভিআই পদ্ধতিতে তাদের ভোটের অনুপাতে আসন মিলবে। (খ)ভোটের সঠিক প্রতিফলন: ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ৪৬% আসন পেয়েছিল মাত্র ৩৯% ভোটে ডাব্লিউসিএভিআই হলে দলের আসন ও ভোটের অনুপাত সমানুপাতিক হতো।  (গ) জোট সরকার ও সমঝোতা রাজনীতি: ডাব্লিউসিএভিআই একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমবে, ফলে জোট সরকার গঠনের প্রবণতা বাড়বে।  এতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। (ঘ)নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব: দলগুলো তালিকায় নারী ও আদিবাসী প্রার্থী রাখতে বাধ্য হবে (বর্তমানে সংরক্ষিত আসন সীমিত)।  (২) না, প্রয়োজন নেইÑকারণ: স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে: বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ। ডাব্লিউসিএভিআই নির্দিষ্ট এমপি না থাকায় স্থানীয় সমস্যার সমাধান কঠিন হবে।  (ক)দলীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা বৃদ্ধি:---দলীয় প্রধানরা তালিকা ঠিক করবেন,ফলে গণতন্ত্র দলীয় নেতাদের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে। (খ) জোট সরকারের অস্থিরতা: বাংলাদেশে জোট সরকারের ইতিহাস  ভালো নয় (যেমন: ১৯৭৩,১৯৯৬, ২০১৯-বর্তমান সংসদে অকার্যকর বিরোধী দল)।  (গ)চরমপন্থী দলের উত্থান:---ডঈঅঠও-এ ধর্মীয় বা চরমপন্থী দলগুলোও বেশকিছু আসন পাবে(যেমন:--- জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত )। (৩) ডাব্লিউসিএভিআই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জনগণ কীভাবে লাভবান হবে?(ক)লাভের ক্ষেত্র বর্তমান ঋচঞচ, ডঈঅঠও পদ্ধতিতে পরিবর্তন (খ) প্রতিনিধিত্ব বড় দলগুলোর আধিপত্য।ছোট দলও ভোটের অনুপাতে আসন পাবে। (গ)ভোটের মূল্য, অনেক ভোট অপচয় হয় (যেমন: পরাজিত প্রার্থীর ভোট)প্রতিটি ভোটের মূল্য সংসদে প্রতিফলিত হবে। (ঘ)নারী/সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব: সংরক্ষিত আসনে সীমিত। দলগুলোকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য।(ঙ) জবাবদিহিতা: ব্যক্তি-প্রার্থীর ওপর নির্ভর। দলের ইশতেহার বাস্তবায়নের চাপ। (চ)রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: একদলীয় শাসনের ঝুঁকি। জোট সরকারে সমঝোতা বাড়বে।(৪) বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম সমাধান কী?ডঈঅঠও পদ্ধতি পুরোপুরি চালু না করে হাইব্রিড মডেল (মিশ্র পদ্ধতি) প্রয়োজন: অর্ধেক আসন (স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের জন্য)। অর্ধেক আসন ডাব্লিউসিএভিআই (জাতীয়ভাবে ভোটের ন্যায্য বণ্টনের জন্য)।  (৫) সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রভাব:-- আওয়ামী লীগ/বিএনপির আসন কমবে কিন্তু ছোট দল ( জামায়াত, জাতীয় পার্ট, ইসলামী আন্দোলন, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, এলডিপি,) লাভবান হবে। জোট সরকার গঠনের প্রবণতা বাড়বে।  সংসদে বিরোধী দলের শক্তিশালী উপস্থিতি হতে পারে।  বাংলাদেশে ডাব্লিউসিএভিআই পদ্ধতি চালু হলে রাজনৈতিক নেতাদের লাভ ও ক্ষতি: প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতি চালু হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে।  বড় দল, ছোট দল ও স্বতন্ত্র নেতাদের সম্ভাব্য লাভ ও ক্ষতি বিশ্লেষণ দেখা যায় , ১) বড় দলগুলোর নেতাদের উপর প্রভাব (আওয়ামী লীগ, বিএনপি)। লাভ (ক) দলীয় শৃঙ্খলা বৃদ্ধি: দলীয় তালিকা থেকে প্রার্থী বাছাই হয়, তাই নেতারা অনুগত কর্মীদের প্রাধান্য দিতে পারবেন।  বিদ্রোহী প্রার্থী কমবে।  (খ)জোট গঠনে সুবিধা: বড় দলগুলো ছোট দলদের সাথে আলোচনা করে জোট বানাতে পারবে (যেমন: ১৯৯১,১৯৯৬, ২০০৮ সালের জোট)।  (গ) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা বৃদ্ধি: দলীয় প্রধানরা তালিকা তৈরি করবেন, এতে পাচাটা তেলবাজ,কালো টাকার মালিক, দলীয় চাঁদাবাজদের আধিপত্য বাড়বে। ফলে দলের ভিতরে  তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে।  ক্ষতি বিশ্লেষনে দেখা যায়, ক) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো: বর্তমানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ৪০% ভোট পেয়েও ১৩০-১৪০% আসন পায়  (খ)স্থানীয় নেতাদের প্রভাব কমা: বর্তমানে এলাকাভিত্তিক নেতারা শক্তিশালী, কিন্তু তাদের গুরুত্ব কমে যাবে।  (গ)জোট সরকারের চাপ:- একক সরকার গঠন কঠিন,তাই নেতাদের ছোট দলদের সাথে দরকষাকষি করতে হবে।  (২) ছোট দল ও মধ্যবর্তী নেতাদের প্রভাব (জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, এলডিপি)।লাভ (অফাধহঃধমবং):-(ক)সংসদে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি:-জামায়াত,জাতীয় পার্টি,ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, এনসিপি'র মতো দল ১০% ভোট পেলে ১০% আসন পেতে পারে (বর্তমানে (৫-৭%) আসন পায়)।  (খ)রাজনৈতিক মর্যাদা বাড়া: জোট সরকারে মন্ত্রী বা কমিটি চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পাবেন ছোট দলের নেতারা। (গ)নীতিনির্ধারণে প্রভাব: ছোট দলগুলো সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভোটারনহয়ে উঠতে পারে (যেমন: বাজেট পাসে ভূমিকা)।  ক্ষতি: ক)তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রতিযোগিতা:-দলীয় তালিকায় শীর্ষে থাকতে হবে, নইলে নির্বাচিত হওয়া কঠিন। ফলে দলীয় কোন্দল বাড়তে পারে।  (খ)দলপ্রধানদের উপর নির্ভরশীলতা:---তালিকা তৈরি করবেন দলপ্রধান, তাই নেতারা দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছার উপর বেশি নির্ভরশীল হবেন।  (৩)স্বতন্ত্র/বিদ্রোহী নেতাদের প্রভাব: এক দল ত্যাগ করেও তালিকায় জায়গা পেতে অন্য দলে যোগ দিতে পারবেন।  ক্ষতি: স্বতন্ত্র প্রার্থীর সুযোগ কমা: দল-তালিকা ভিত্তিক নির্বাচন:হয়, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জায়গা নেই বললেই চলে।  (৪)স্থানীয় জনপ্রিয়তা কাজে লাগানো কঠিন: বর্তমানে অনেক নেতা নির্দিষ্ট এলাকায় জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জেতেন। ৫) ধর্মীয়/চরমপন্থী দলগুলোর সম্ভাবনা: লাভ: জামায়াত ইসলামি ,ইসলামী আন্দোলন,হেফাজত বা ইসলামী ঐক্যজোটের মত দলগুলো ৫% ভোট পেলেও সংসদে আসন পেতে পারে।  ক্ষতি: মূলধারার দলগুলো তাদের জোটে নিতে বাধ্য হতে পারে, যা সমাজে বিভেদ বাড়াতে পারে। (৬) নারী নেতাদের প্রভাব ও লাভ: দলগুলোকে তালিকায় নারী কোটা পূরণ করতে হবে, ফলে নারী নেতৃত্ব বাড়বে।  ক্ষতি: নারী নেতারা দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনুগত  হয়ে উঠতে বাধ্য হতে পারেন।  সর্বোচ্চ লাভবান কারা হবে? লাভ/ক্ষতি: বড় দল (আ. লীগ/বিএনপি) দলীয় শৃঙ্খলা বাড়বে  একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমবে   ছোট দল (জাতীয় পার্টি) সংসদে প্রতিনিধিত্ব বাড়বে, দলীয় কোন্দল বৃদ্ধি পাবে। স্বতন্ত্র নেতা: দল পরিবর্তনের সুযোগ নির্বাচিত হওয়া কঠিন হবে। ধর্মীয় দল: সংসদে প্রবেশের সুযোগ রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়বে। নারী নেতা: কোটা সুবিধায় আসন পাবেন দলীয় নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল হবেন। উপসংহার:বড় দলগুলোর নেতারা ডঈঅঠও পদ্ধতিতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে পারবেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন।ছোট দলের নেতারা লাভবান হবেন, কিন্তু দলীয় কোন্দল বাড়বে।  স্বতন্ত্র ও স্থানীয় নেতাদের গুরুত্ব কমবে। নারী ও সংখ্যালঘু নেতাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও দলীয় নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। সবচেয়ে বড় লাভ হবে  ক্ষুদ্র দল ও নারী নেতাদের। সবচেয়ে বড় ক্ষতি স্বতন্ত্র ও এলাকাভিত্তিক নেতারা। বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম পথ,মিশ্র পদ্ধতি যেখানে অর্ধেক আসন স্থানীয় এবং অর্ধেক আসন জাতীয় তালিকা থেকে নেওয়া হবে।

 


আরও পড়ুন