কসম করা নিয়ে আমাদের ধারণা
প্রকাশিত: ২১-৯-২০২১ দুপুর ১১:৪১
মানুষ খুব আবেগপ্রবন। কথায় কথায় মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য কসম কেটে থাকে। আমাদের অনেকেই দেখা যায় মায়ের কসম,বাবার কসম,পবিত্র কোরান ছুয়ে কসম,মসজিদ ছুয়ে কসম, সন্তানের মাথায় হাত রেখে কসম করে থাকে। এছাড়া আরো অনেকভাবে কসম করতে দেখা যায়।
অথচ যে ব্যক্তি মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন সত্তা বা বস্তুর নামে কসম বা শফত করে যে, মুলতঃ আল্লাহর সম্মান ও অধিকারের ঔ সত্তাকে শরিক ও অংশীদার করলো এজন্য এটা শিরক হবে।
তবে আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করা কবিরা গুনাহ। তবে তা শিরক নয়।যারা এই ভুল গুলো করে তাদের আজকেই ভুলগুলোর জন্য তওবা করে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।কসম অর্থ শফত,আল্লাহ তায়ালার কোন সৃষ্টি নিয়ে শফত করা, যেমন- কাবা শরীফ,নবী,,আমানত, জীবন,প্রতিমা, অথবা আউলিয়া এ প্রকার শফত হারাম ও শিরক।শুনে রাখ, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাপ- দাদার নামে শফত করতে নিষেধ করেছেন।
তোমাদের কেউ শফত করলে আল্লাহর নামেই কর অথবা নিরবতা অবলম্বন করো।( বুখারী -৬১৫৫) কথায় কথায় কসম করা,বিনা প্রয়োজনে কসম করা,এই সব কিছুই ঠিক নয়।আর কসম করার প্রয়োজন দেখা দিলে শুধু আল্লাহর নামেই কসম করবে। অন্য কারো বা কিছুর নামে কসম করা জায়েজ নয়।
নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম করলো সে শিরক করলো ( আবু দাউদ-২৮২৯)
এই ধরনের হারাম কসম ভঙ্গ করলে কোন কাফফারা নেই। কেননা গাইরুল্লাহর নামে শফত করা শিরক।তা ভঙ্গ করা তাওহীদ। এই কারনে যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শফত করে তার তওবা করা উচিত।
ইরশাদ হচ্ছে - " আল্লাহ তায়ালা কসমের ক্ষেত্রে নিরর্থক কসমের জন্য পাকড়াও করবে না। কিন্তু তিনি তোমাদের ঐ কসমের জন্য পাকড়াও করবেন যেগুলোকে তোমরা দৃঢ় কর।( সুরা মায়েদা- ৮৯)
কসম শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
কসম বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত হলো - "আল্লাহ" নাম নিয়ে বা তার গুনবাচক নাম নিয়ে কসম করা।
আল্লাহর ইজ্জতের কসম,আল্লাহর মর্যাদার কসম, এই জাতীয় শব্দ দ্বারা কসম করা যেতে পারে।কিন্তু আল্লাহর ইলমের কসম, আল্লাহর রাগের কসম, আল্লাহর রহমতের কসম, এই জাতীয় কসম করা শুদ্ধ নয়।
সন্তানের মাথায় বা পিতা মাতার মাথায় হাত রেখে কসম কি শরীয়ত সম্মত?
সন্তানের মাথায় হাত রেখে অথবা পিতা মাতার মাথায় হাত রেখে কসম করা শিরক।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে কসম করতে নিষেধ করেছেন এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর দ্বারা কসম করাকে শিরক বা কুফরী আখ্যা দিয়েছেন ( আবু দাউদ হা/৩২৪৮,৩২৫১)
কোরান স্পর্শ করে কসম করা যাবে কি?
একটু থেকে একটু হলেই দৌড়ে গিয়ে কোরান স্পর্শ করে বলে থাকি। অন্যের বিশ্বাস অর্জনের জন্য এই কাজ করে থাকি। অনেকে মনে করেন সত্য কথা বলে থাকলে কোরান স্পর্শ করতে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই।
বিশিষ্ট আলেম ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ এক বেসরকারি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দর্শকদের প্রশ্ন উত্তরে বলেন- কোরান কারীমকে স্পর্শ কসম করার কোন বিধান নাই। কসম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামে হয়। কিন্তু কোরানকে স্পর্শ করে যদি কেউ কসম করে, যেহেতু আল্লাহর কালাম,আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা তাই এটি ও এক ধরনের কসম। এই কসম যদি কেউ করে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই কসমটি পুরন করতে হবে। ভঙ্গ করা যাবে না। কারন এটি আল্লাহর কালাম।
কসমের কাফফারা আদায় করবেন যেভাবেঃ
কসম পূর্ণ করতে না পারলে কাফফারা ওয়াজিব হবে।কসম ভঙ্গের আগে কাফফারা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না বরং কসম ভঙ্গ করার পরই কাফফারা আদায় করতে হবে।
কাফফারা আদায় করার দুটি পদ্ধতি -
১। ১০ জন মিসকিন কে দুই বেলা পেট ভরিয়ে খানা খাওয়ানো।
২। ১০ জন মিসকিন কে ১০ সেট পোশাক প্রদান করা।
এই দুটির যে কোন একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে।
এর কোনটিতেই সক্ষম না হলে ধারাবাহিক ভাবে তিনটি রোজা রেখে কাফফারা আদায় করতে পারে ( সুরা মায়িদা, আয়াত ৮৯,দুররুল মুখতার - ৩/৭২৫)
কথায় কথায় কসম করে কিছু বলার অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া উচিত।