বিএনপির ৪৭ বছরের পথচলা ও জিয়াউর রহমান

news paper

জহিরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২-৯-২০২৫ দুপুর ১:৩৫

59Views

১৯৭৫ সালে মর্মান্তিক এক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছিল। দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করে। তিনটি সেনা-অভ্যুত্থান আর ঘাত-প্রতিঘাতে দেশে এক অনিশ্চয়তা নেমে আসে। সেই সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে আবির্ভাব ঘটে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পদচারণা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল বিএনপির। স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাপ্রধান এবং বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, সেই সাথে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই পার হয়ে সে দলটি ৪৭ বছরে পদার্পন করল। এত বছরের মধ্যে দলটি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেমন ছিল, তেমনি বিরোধী দলেও ছিল দলটি। বিএনপির আজকের অবস্থা এবং অবস্থান নিয়ে কথা বলতে গেলে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন কথা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা অনস্বীকার্য যে, দেশের এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জন্ম হয়েছিল বিএনপির। 
 
 ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর, আমাদের দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠে এবং মূল শিল্প-কল-কারখানা গুলোর  উৎপাদনশীলতা স্বাধীনতার পূর্ববর্তী স্তরে ফিরে আসেনি। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মূল্যের সাহায্যের প্রবাহ সত্ত্বেও, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র ঘাটতি ছিল এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে দরিদ্রতম অসহায় মানুষের  কাছে সাহায্য বিতরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ১৯৭৪ সালে, খাদ্যশস্যের প্রাপ্যতা সত্ত্বেও এক ভয়াবহ বন্যার পর, দুর্ভিক্ষ শুরু হয় যার ফলে প্রায় দশ লক্ষ লোক মারা যায়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পরিস্থিতি বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে সংবিধান সংশোধন করেন এবং স্বৈরশাসনকে "প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ " করেন এবং বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেন। বাকশাল তথা একদলীয় শাসনের কবলে পড়ে প্রিয় স্বদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন মাতৃভূমি অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাকশালি স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়ে। 
 
সাংবিধানিক সংশোধনীর আট মাস পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের দিকে এক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব তার পরিবারের সদস্যদের সাথে নিহত হন , যা দেশকে আরও গভীর অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। আওয়ামী লীগ তার সহকর্মীদের একটি অংশ, খুনিদের সমর্থনে, তার দীর্ঘদিনের বন্ধু খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করে । ৩ নভেম্বর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি পাল্টা অভ্যুত্থানের ফলে সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী হন, নিজেকে সেনাবাহিনীর প্রধান করেন এবং রাষ্ট্রপতি মোস্তাক আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হন তার মনোনীত প্রার্থী আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে। কিন্তু তিনি পরিস্থিতির উপর তার নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার আগেই, ৭ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত করে , যা জিয়াউর রহমান কে মুক্ত করে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
 
৭ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর, রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক করে একটি সামরিক প্রশাসন গঠিত হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জিয়াউর রহমান নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অন্য দুই প্রধানের সাথে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন । তবে, বাংলাদেশের সংবিধানে এই ব্যবস্থাগুলির জন্য কোনও বিধান ছিল না।  
 
রাষ্ট্রপতি সায়েম দেশ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করেন যেখানে জিয়াকে অর্থ, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  নতুন রাষ্ট্রপতি জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। তবে, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছিল, কারণ তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তুলনায় মূলত অপ্রস্তুত ছিল। এটি রাষ্ট্রপতির জন্য পরিস্থিতিকে কঠিন করে তোলে।
১৯৭৭ সালের গোড়ার দিকে, রাষ্ট্রপতির পিত্তথলিতে সমস্যা ধরা পড়ে এবং তার ডাক্তার তাকে দীর্ঘ বিশ্রামের পরামর্শ দেন, যার ফলে তিনি তার পদ থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হন। ২১শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম পদত্যাগ করেন এবং জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠমোর মধ্যে ২৫ বছর ধরে এই অঞ্চলের নাগরিকরা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। নিয়মিতান্ত্রিক এ লড়াইয়ের বিজয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পথে অর্জনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পাক সমরজান্তার হথকারিতা আমাদেরকে ঠেলে দিয়েছিল যুদ্ধের পথে। প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ সহয়তা নিয়ে সেই যুদ্ধে জিততে হয়েছিল বলে স্বাধীনতার পর আমাদের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতির ওপর ভারত আধিপত্যের থাবা বাসায়। শেখ মুজিবের আওয়ামী সরকার সেই থাবা থেকে জনগণের অধিকার ও বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করবাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের আগমন অনিবার্য হলেও আকস্মিক এবং অকল্পনীয় ছিল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি বাংলাভাষী পাকিস্তানি সৈনিক হিসেবে প্রবল বিক্রম লড়েছিলেন খেমকারান রণাঙ্গনে। স্বদেশ ও শত্রুপক্ষের কাছে তার সেদিনের অবিস্মরণীয় যুদ্ধ বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল। আবার ১৯৭১-এ তিনি এক ঘোর দুঃসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল। প্রয়োজনের মুহূর্তে কি করতে হবে; জীবনবাজী রেখে সে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেয়ার এক সহজাত ক্ষমতা তাঁকে নেতৃত্বের আসনের দিকে সব সময় ঠেলে দিয়েছে। 
 ১৯৭৫-এর নভেম্বরের উন্মাতাল রাজপথে অভিষেক ঘটে তাঁর রাষ্টতিনি স্বাধীনতার ঘোষক ও যোদ্ধা; আবার সুশৃঙ্খল আইন অনুগত সৈনিক। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। তার আচমকা তার কাধে অর্পিত হয় এক বিশৃঙ্খল দেশের শাসনভার। তখন সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খল ছিল না। উস্কানি ও চক্রান্তে জর্জরিত সশস্ত্র বাহিনীকে তিনি কঠোর পদক্ষেপে সুশৃঙ্খল করলেন। দেশে রাজনীতি ছিল না, জিয়া রাজনৈতিক দলের পুনরুজ্জীবন ঘটালেন। রাজনীতিকদের জারি করা সামরিক শাসন তুলে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন। 
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শন উদ্ভাবন করে তিনি জাতিকে উপহার দিলেন পরিচয় ও আদর্শের পতাকা। সময়ের দাবি মেটাতে তিনি সৃষ্টি করলেন নতুন রাজনৈতিক দল। ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্ত্বরে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)’ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধমে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে যে শূন্যতার সৃষ্টি করা হয় তা পুরনে ইতিহাসের দাবী, দেশবাসীর আকাংখায় বিএনপির অভ্যুদয় ঘটে। বিএনপির ঘোষণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, ব্যাপক জনভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, এক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ অধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি গঠিত হয়েছে।
 
১৯৭৮-এর ৩০ নভেম্বর সরকার ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবিতে দু’দফায় পিছিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এই প্রথম সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং ৩৯ টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ (মালেক) প্রধান বিরোধী দল হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেন, বিএনপির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা।’ মালয়েশিয়ার ‘বিজনেস টাইমস’ লেখে, ‘অতীতে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত করেছিল যে মহাপ্লাবনী সমস্যাগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়া কার্যত সেগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।’ এসময় নিউইয়র্ক টাইমসের বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং স্বনির্ভরতা অর্জন এবং উৎপাদন দ্বিগুণ করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়।‘৮০ সালেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থানান্তরিত করা হয় নয়াপল্টনে। ‘১৯৮১-র ২৯ মে প্রেসিডেন্ট জিয়া চট্টগ্রাম সফরে গেলে ৩০ মে ভোরে সার্কিট হাউজে কিছু বিপদগামী সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। তবে নানা পদক্ষেপে ও কর্মকাণ্ডে জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ে উঠেছে অভিন্ন। ব্যক্তিগত সততা, উন্নয়ন, ঐক্য এবং সুসম্পর্কের রাজনৈতিক দর্শণের কারণে রাজনীতির ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।
প্রেসিডেন্ট জিয়া'র শাহাদাতের পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পরে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন এবং দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮২-এর ২৪ মার্চ এরশাদ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ৩ মাস আগে নির্বাচিত একটি সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করে। বিএনপি’র কিছু নেতা এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিতেও কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা আসে। কর্মীদের দাবি এবং কিছু শীর্ষ নেতার অনুরোধে ১৯৮২– এর ৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধু থেকে রাজনীতিতে আসেন। বিএনপিকে ষড়যন্ত্র ও নিষ্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার উদ্যোগের ফলে পার্টির সিদ্ধান্তে বেগম জিয়া ৮৩-র মার্চে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন।
এরশাদের পুরো শাসনামলে বিএনপি’র রাজনীতি ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। ৮২-র ৩০ মে শহীদ জিয়ার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে জিয়ার মাজারে গিয়ে তিনি বক্তব্য দেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে মাজার প্রাঙ্গনে ছাত্রদলকে শপথ বাক্য পড়ান। ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করলে বিএনপি তার বিরোধিতা করে এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে আন্দালনের সূচনা করেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত হিসাবে ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষাদিবসে স্বৈরাচারবিরোধী প্রথম মিছিলটি করে ছাত্রসমাজ। ছাত্রদলের ব্যানারে ছিল: এরশাদের পতন চাই। ৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে শপথ পড়ান, পরদিন ক্যাম্পাসে মিছিল হয়। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ছাত্রদলের বর্ধিত সভা ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট করে। ছাত্রদলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপি’র নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য ছাত্রদলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাবি ক্যাম্পাসের বটতলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, আইউব, দিপালী সাহা, ফারুকসহ ৭ জন শহীদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে ১৫জন নিহত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা গায়েবানা জানাজা, ১৯ ফেব্রুয়ারি মৌন মিছিল এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল করে। বৈঠক থেকে ১৫ দলীয় জোট নেতাদের এবং কর্ণেল অলিসহ বিএনপি নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্ররা পলাতক, নেতারা কারাবন্দী তবু খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মৌন মিছিল শহীদ মিনারে যায়, তাকে প্রধান অতিথি করে বটমূলে হয় জাসাসের আলোচনাসভা। ঘরোয়া রাজনীতি সুযোগে খালেদা দেশ সফরে বের হয়ে প্রথম সভা করেন খুলনায় ইউনাইটেড ক্লাবে। ’৮৩-র ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ৭ দলীয় ও ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের মধ্যে বৈঠকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৫ দফা প্রণীত ও ৬ সেপ্টেম্বর তা ঘোষিত হয়। ২৮ নভেম্বর উভয় জোটের সচিবলায় ঘেরাও কর্মসূচিতে আহত খালেদা জিয়া এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। ২৮ নভেম্বর রাতেই খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে ১ মাসের আটকাদেশ দিয়ে স্ব-স্ব বাসভবনে আন্তরীন রাখা হয়। এরশাদ তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে লোভ ও ভয় দেখান। ’৮৪-র ৭ জানুয়ারি এরশাদ ৫৫টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকলে বিএনপি,আওয়ামী লীগ ও জামায়ত জোট তা বর্জন করে। ’৮৪-র ১২ জুনায়ারি খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন মনোনীত হন এবং ১লা মার্চ খালেদা-হাসিনা গ্রেপ্তার হন। ’৮৪-র ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদ ১২ জুলাই জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিলে দুই জোট তা প্রত্যাখান করে। ৭ দলীয় জোট ২৫ জুলাই প্রতিরোধ দিবস পালন করে। ৫ আগস্ট জোটের জনসভা ও ২৭ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল হয়। ২৭ আগস্ট জামায়াতের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়। ৩ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময়সূচী ঘোষণা করে। ’৮৪-র ১৫ অক্টোবর যৌথ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকার জোট ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ স্লোগানে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। প্রেসিডেন্ট রেডিও ও টিভির ভাষণে ১৯৮৫ সারের প্রথম সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে ও সংবিধানের আংশিক পুনর্জীবনের ঘোষণা দেন।
 
’৮৫-র ৬ এপ্রিল বিচারপতি নুরুল ইসলাম তফসিল ঘোষণা করে ও সরকার সামরিক আদালত বিলুপ্ত করে। ১১ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে দলের বর্ধিত সভায় খালেদা জিয়া নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলেন। ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে খালেদা জিয়া অবাধ রাজনীতির সুযোগ দাবী করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল, ১৪ ফেব্রুয়ারি জনসভা থেকে নির্বাচনের তারিখ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান করেন খালেদা। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের সভায় ৫ দফার কোন ‘আপস’ অস্বীকার করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি উভয় জোটের জনসভায় একই দাবী পুনর্ঘোতি ও ৮ মার্চ হরতাল হয়। ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে শেখ হাসিনা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বলেন, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। কিন্তু শেখ হসিনা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ২১ মার্চ রাত ১টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ৩১ মার্চ ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে বিএনপি’র বর্ধিত সভা হয়। ২ মে খালেদা জিয়াকে অসম্মানজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮৭-এর ৭মার্চ যুবদলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি বলেন ‘ক্ষমতা চাইলে এখানে, ঠিক এখানে এসে হাজির হবে। কিন্তু ক্ষমতা নয় সংগ্রাম।’ এ সময় ছাত্রদল সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলুকে হত্যা ও ছাত্রদলের উপর অপরিসীম নির্যাতন নেমে আসে। খালেদা জিয়া আখ্যায়িত হন ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধায়। ১১নভেম্বর দুপুরে পূর্বানী হোটেলের বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করে গৃহবন্দি করা হয়। ‘৮৮-র ১ জানুয়ারি সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এদিন টিএসসিতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খালেদা ‘এক দফার’ ঘোষণা দেন। সে সঙ্গে ২২টি ছাত্রসংগঠন নির্বাচনকে সামাজিক ও রাজনৈতিকবাবে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ১২ জানুয়ারি থেকে একদফায় অনঢ় থেকে খালেদা জিয়া দেশব্যাপী জনসংযোগ শুরু করে। একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিন-চতুর্থাংশ আসন পায়। ২৪ মার্চ ২৫ এপ্রিল, ২৮ নভেম্বর হরতাল এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় সমাবেশে খালেদা জিয়া জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েমের আহ্বান জানান।
 
৮৯-র ৮ ও ৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের বিভক্তি নিয়ে যুগান্তকারী এক রায় আসে। ’৮৯-র ২৫ মে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিল করেন। ১ নভেম্বর ৭ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গুলিস্তানে ১০ ঘন্টা প্রতীক অনশন করে। এ সময় জেহাদের লাশকে সামনে রেখে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠিত ও ক্যাম্পাসে ডাঃ মিলন ও নূর হোসেন নিহত হলে সেনাসদর দপ্তরে সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক করে তিন বাহিনী প্রধান এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরশাদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাতে চান। তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন এবং ১৫ দিন আগে নিরপেক্ষ উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বিবিসিকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অবিলম্বে এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয়, ১টি প্রেসিডেন্ট, ১টি গণভোট ও ২টি উপজেলা নির্বাচনের সবই প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে বেগম  খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি’র প্রকৃত বিকাশ ঘটেছে। তিনি বিএনপিকে শুধু রক্ষাই করেননি, প্রতিকূল পথ বেয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি প্রধান শক্তি হিসাবে।
‘৯১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ ৯ বছর পর মুক্ত পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন হয়। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে খালেদা জিয়া হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার থেকে রাতদিন টানা চষে বেড়ান সারাদেশ। ১৮০০ জনসভা ও পথসভা শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সমাবেশে নির্বাচনীয় প্রচারণা শেষ করেন। এ সময় দিনে ৩৮টি জনসভায় বক্তৃতা, নির্ঘুম ৪৮ ঘন্টা কাটিয়ে রেকর্ড করেন তিনি। নোয়াখালীতে রব ওঠে-‘আঙ্গো মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা।’ ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ, বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপি ১৪৪টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্টতা অজন করে। খালেদা জিয়া ৫টি আসনে নির্বাচন করে সবকটিতে জয়ী হন। বিএনপি জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে। ১৯ মার্চ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১১ জন কেবিনেট মন্ত্রী ও ২১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ গঠন হলে ২০ মার্চ তিনি শপথ নেন। সেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর নয়, নিজের গাড়িতেই স্মৃতিসৌধে যান। প্রধানমন্ত্রীত্বের ১২তম দিন ১ এপ্রিল মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীত্বের ৩৯ দিনের মাথায় ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রলয়ংকরী ঘূণীঝড় হলে খালেদা জিয়া ৬ মে থেকে ৯ মে তার দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে ঐতিহাসিক বিল ৬ আগস্ট সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির। বিএনপি সরকারের উদার নীতির নানা অর্থনৈতিক সংস্কারে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ থেকে বাংলাদেশ ‘ইমার্জিং টাইগার’-এ পরিণত হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে বিএনপি সরকারই প্রথম মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু, প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক, কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠাসহ নান উদ্যোগ নেন। এসময় আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন শুরু করে এবং আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল পালন করে। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে নির্দলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে খালেদার প্রস্তাব কমনওয়েথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের মধ্যস্থতা ফর্মুলা (নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের ৫ জন করে এমপি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন) প্রস্তাব ও পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের নেয়া উদ্যোগ আওয়ামীলীগ গ্রহন না করায় ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে সেনাপ্রধান নাসিমের নেতৃত্বে একটি ব্যর্থ সেনা অভ্ত্থূানেরও ঘটনা ঘটে। ‘৯৬-র ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন করে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ২৫ মার্চ রাতব্যাপী সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাশ করে বিএনপি। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে আসে-তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা। ‘৯৬-র ১২ জুন সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে বিএনি পায় ১১৬ আসন পেয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যায়। পরবর্তী ৫ বছরে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মামলা, গ্রেপ্তার, হত্যার শিকার হন। আওয়ামী সরকারেরর দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সারাদেশে সভা সমাবেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ, দেশব্যাপী রোডমার্চ, গণমিছিল, মহাসমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট করে। ‘৯৯-র ৩০ নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের জোট হিসেবে গঠিত হয়– চারদলীয় জোট। তবে এরশাদ জোট ছাড়েন। ২০০১-র ২৯ মার্চ নাজিউর রহমান মঞ্জু আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে জোটে থাকেন। অবশেষে ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
২০০১-র ১ অক্টোবর বিএনপি জোট ২১৫টি আসন পেয়ে নির্বাচিত হয় এবং ১০ অক্টোবর সরকার গঠন করে। নানা প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও চারদলীয় জোট সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নকলমুক্ত পরীক্ষা, মেয়েদের বিনামূল্যে পড়ালেখাসহ শতাধিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও উন্নীত করে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেয়া হয় ব্যাপক পদক্ষেপ। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্থাপন ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠা এবং গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটে এ সময়।
 
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারীতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে। এদেশের জনগণ গতো তিনটি ইলেকশনে ভোট দিতে পারে নাই। মানুষ উন্মুখ হয়ে বসে আছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর নেতৃত্বে বিএনপি আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপি আজও  রাজপথে দীর্ঘ ১৬ বছর। 
শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও একজন বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ জিয়া ছিলেন বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পিড়িত জনগণ শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর যখন শুধু অনিশ্চয়তা আর হতাশা ছাড়া কিছুই চোখে দেখছিল না, ঠিক তখনই জিয়া জ্বালিয়েছিলেন আশার আলো, বাংলাদেশের জনগণ বুকে বেঁধেছিল অনেক বড় স্বপ্ন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। 
বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত করে জিয়া ইতিহাসে নিজের অক্ষয় স্থান নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহুদলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, সময়োপযোগী গতিশীল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অবস্থান ও গতিপথ নির্ধারণ এসব বহুমাত্রিক সাফল্যের কথা সুবিদিত এবং বহুল চর্চিত। শহীদ জিয়া ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। এ দেশের গরিব মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ছিল তার অন্যতম জীবন সাধনা।
 
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তি ও মহান রাষ্ট্রনায়ক। জিয়া বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। জাতীয় ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে একজন পরিত্রাণকারী হিসেবে রাজনীতিতে জিয়ার আবির্ভাব। তিনি শতধা বিভক্ত জাতিকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করেছেন। জিয়া দেশপ্রেমে উজ্জ্বল এক অনুভূতির নাম। ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’- ছিল জিয়ার বিশ্বাস ও ধ্যান। তিনি আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শুধু রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেননি, স্বাধীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন। ইতিহাস থেকে কারো অবদান জোর করে মুছে দেয়া যায় না। সাময়িকভাবে আজ জিয়াকে হেয় করা, তার সোনালি অবদানকে অস্বীকার করার অপতৎপরতা আমরা দেখছি। কিন্তু এ অপপ্রয়াস সফল হবে না। জিয়াকে ভুলিয়ে দেয়া, তার অবদানকে মুছে ফেলার সাধ্য এ দেশে কারো হবে না। জিয়া থাকবেন দেশপ্রেমিক বিবেকবান প্রতিটি মানুষের অন্তরে এক জীবন্ত প্রত্যয় হিসেবে। বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। 
 
লেখক:
সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
বি.এস.সি ইন ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এল.এল.বি 

আরও পড়ুন