বরেন্দ্রের কৃষকের এবার বর্ষায় আমন চাষে কোটি টাকা সাশ্রয়

news paper

সোহানুল হক পারভেজ, তানোর

প্রকাশিত: ২-৯-২০২৫ দুপুর ১২:৩৩

119Views

বরেন্দ্র অঞ্চলে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। সবুজ সতেজে ভরে উঠেছে আমনের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ প্রান্ত। কখনো রোদের ঝাপটা আবার কখনো নেমে আসছে মুসুলহারে বৃষ্টি। প্রকৃতির এমন রুপে ক্ষেতে সবুজ আমন ধানের পাতাও যেন গাছাড়া দিয়ে বেড়ে উঠছে। আমনের বেড়ে উঠা দেখে সোনালী স্বপ্নে ভরছে কৃষকের মন প্রান।

উঁচুনিচু সিড়ির মত ঢেও খেলানো বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূমি। এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। ৪০ ভাগ জমি সেচ নির্ভর হলেও বাকি ৬০ ভাগই বর্ষা পানির উপর নির্ভরে আমন চাষাবাদ হতে থাকে এঅঞ্চলে।

তবে অন্যসব বছরের চেয়ে এবার সেচ ছাড়াই শতভাগ জমিতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে আমন চাষ করতে পেরেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। তাতে কয়েক কোটি টাকা সেচ খরচ বেচেছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা বলছেন,অন্যবছর গুলোতে আষাড় মাস শেষ হতে গেলেও বৃষ্টি দেখা মেলে ভার। বীজতলা বীজ বয়স হয়ে নষ্ট হয়ে যায়\ সময়ের মধ্যে আমন চাষ করতে বরেন্দ্রর গভীর নলকূপ,মিনি ডিপ সার্বমাসেবল পাম্প সহ খাল বিল পুকুর হতে সেলো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হতো। যা আমন উৎপাদনের অর্ধেক খরচ সেচে লেগে যেত।

এবার বাস্তবতা ভিন্ন। এ বছর আষাড়ের শুরু থেকে শ্রাবন মাস পুরো দুইমাস যাবত প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি ঝরছে। ভাদ্র মাস পরেও একের পর এক নিম্ম চাপে কারণে  সকাল সন্ধা অঝরে বৃষ্টি নামছে। তাতেই বরেন্দ্র অঞ্চলে উঁচু হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর,গোদাগাড়ী,চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল, রহনপুর নওগাঁর পোরশা নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলার প্রায় চার লাখ হেক্টর জমিতে এবার সেচ ছাড়াই শুধু বৃষ্টির পানিতে আমন চাষ হচ্ছে। এতে করে দেশের বিদুৎ সাশ্রয় ও জালানি তেলের খরচ কম লেগেছে। আর কৃষকের সেচ খরচ বেছেছে কয়েক কোটি টাকা।

মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা এবার বর্ষাকে কৃষকের জন্য আর্শিবাদ হিসাবে দেখছেন। তারা বলছেন,বরেন্দ্র অঞ্চল দেশে উচু অঞ্চল হিসাবে পরিচিতি। এখানে সেচ ছাড়া শতভাগ জমিতে আমন চাষ করা যায়না। এ সেচ খরচ সর্বনিম্ম বিঘাপ্রতি পাঁচশত টাকা খরচ হতো কৃষকের। এবার সেচ ছাড়া শতভাগ জমিতে আমন রোপন করতে পেরেছেন কৃষকেরা। সে খরচ আষাড়ের বৃষ্টিপানি বাচিয়ে দিয়েছে কৃষকের।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামে বিধবা হানুফা বেওয়া চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। হানুফা বেওয়া বলেন,তার দুই বিঘা জমি একেবারে উঁচু(চাড়া)। এখানে সেচ ছাড়া কোন বছর আমন রোপন করতে পারিনা। সেচ খরচ প্রায় দেড় হাজার টাকা লেগে যায়। কিন্ত এবছর আকাশে বৃষ্টিতেই তার দুই বিঘা জমিতে আমন রোপন করেছেন। তার এ বছর আমন রোপনে সেচে এক টাকাও খরচ হয়নি।

সেচ ছাড়াই শুধু কৃষক হানুফা বেওয়াই নয়,পুরো বরেন্দ্র অঞ্চরে কৃষকেরা এবার গভীর নলকূপ,মিনি ডিপ সার্বমার্সেবল পাম্প ও খাল বিল পুকুর হতে কেউ আমন রোপনে সেচ দেওয়া লাগেনি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন,বরেন্দ্রে এবার শতভাগ জমিতে আমন চাষ হয়েছে আষাড়ের বৃষ্টিতেই। সেচ খরচ বেচে যাওয়াই কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে। ফলনও ভাল হবে। কৃষকেরা এবার লাভবান হবে । তবে  নিম্ন অঞ্চলে অতি  বৃষ্টিতে সবজি চাষীদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।


আরও পড়ুন