শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা রনিকে যেন ভুলে না যায় বিএনপি

news paper

জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ২৩-৮-২০২৫ দুপুর ১:৫৭

429Views

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির অন্ধকার অধ্যায়ে সাহসিকতার এক উদাহরণ হয়ে আছেন যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি। ২০১৮ সালে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানানোর কারণে তাকে গুম করে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। রনির জীবন তখন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে গেছে, যা আজও তার পরিবার ও পরিচিতদের মনে শিউরে ওঠার মতো স্মৃতি জাগায়।

২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফতুল্লায় এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘যে দলের নেতা তারেক রহমানের কোমর ভাঙ্গা, সেই নেতা ও দলের কর্মীরা শেখ হাসিনার সঙ্গে কী লড়বেন? আমি একাই যথেষ্ট তাদের জন্য।’এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সেই দিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন মশিউর রহমান রনি। তিনি প্রকাশ্যে শামীম ওসমানকে ‘নারায়ণগঞ্জের গডফাদার’ আখ্যা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং রাজপথে পুলিশ ছাড়া নামার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। মূলত ওই সময় শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে মুখ খোলা ছিল এক বড় দুঃসাহস।

শামীম ওসমানকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জেরেই রনিকে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার আরামবাগ  থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ তুলে নিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। হাত-পায়ের নখে ঢুকানো হয় সুচ। শরীরের বিভিন্ন অংশে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। ঝুলিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় তার বাম হাত। মুখে কালো কাপড় বেঁধে ওজু করানো হয় এবং কলেমা পড়ানো হয়। তাকে ফতুল্লার এক খালি মাঠে ক্রসফায়ারে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ভাগ্যের জোরে রনি প্রাণে বেঁচে যান। সেই দিন ফতুল্লার এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন, যার ফলে ক্রসফায়ারের পরিকল্পনা কার্যকর করা যায়নি।

বীভৎস নির্যাতনের পরও রনির বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ১০৪টি মামলা। রনির পরিবারের উপরও নেমে আসে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা। রনির বড় বোনের স্বামীকেও হত্যা করে ডোবায় ফেলে দেয়া হয়। রনির মা রেহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি দিলে ছেলেকে ঘরে রাখা সম্ভব হতো না। তারেক রহমানকে ‘কোমর ভাঙ্গা নেতা’ বলায় শামীম ওসমানকে চ্যালেঞ্জ জানানোয় আমার ছেলেকে কঠিন জের দিতে হয়েছিল।’নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিটন জানান’ নারায়ণগঞ্জের সবাই জানত রনি গুম হয়ে গেছে। আমি ওই দিন ফতুল্লার মাঠে কাজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি পুলিশের হায়েস থেকে রনিকে নামানো হয়েছে। তখন রনি তার হাত-পায়ের মরে যাওয়া কালো নখ দেখিয়ে বলল, ‘সুঁই ঢুকানোর কারণে নখগুলো মরে গেছে।’ বাম হাতের ভাঙা হাতে মোটা সেলাই দেখিয়ে বলেন, ‘ঝুলিয়ে পিটিয়ে রাখার কারণে হাত ভেঙে গেছে। ব্যথায় সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
রনির কাহিনি শুধু একজন যুবকের নয়। এটি দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দমন-পীড়নের চিত্র, সাহসিকতার প্রতীক এবং রাজনৈতিক ত্যাগের স্মারক। এমন ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না।


আরও পড়ুন