চাকরি নয়, কৃষিই স্বপ্নপূরণ: ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করে সফল পাঁচবিবির শিপলু
প্রকাশিত: ১৭-৮-২০২৫ দুপুর ৩:১২
জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে ৪৫ বিঘা জমিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা হেদায়েত হোসেন শিপলু। তার এই বিশাল বাগানে প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন, যা নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তিনি একদিকে যেমন নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ড্রাগন বাগান দেখতে ও ফল কিনতে আসেন। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ড্রাগন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ড্রাগন চাষ আরও বাড়লে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে এই ফল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কোকতাড়া তালতলী এলাকার বাসিন্দা হেদায়েত হোসেন শিপলু। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি তিনি ২০২৪ সালে কোকতাড়া তালতলীর ছোট যমুনা নদীর পাশে ৪৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন ড্রাগন বাগান, যার নাম দিয়েছেন 'গ্যালাক্সি ড্রাগন বাগান'। এখানে স্থানীয় আদিবাসী নারীসহ প্রায় অর্ধশত বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৪৫ বিঘা বাগানে রয়েছে প্রায় ১ লাখ গাছ। বর্তমানে গাছে ড্রাগনের সাদা-হলুদ ফুল ঝুলছে এবং ফলনও শুরু হয়েছে। উৎপাদিত ড্রাগন বিক্রি করে তিনি ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন। এই ফলের মান ভালো ও চাহিদা থাকায় স্থানীয় বাজার ছাড়াও সারা দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই বাগান দেখতে এবং কিনতে আসছেন।
হেদায়েত হোসেন শিপলু বলেন, “২০২১ সালে একটি মিশ্র ফলের বাগান করি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২৪ সালে ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগনের বাগান করি। এক বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসা শুরু করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে ও অনলাইনের মাধ্যমে অন্য জেলাতেও ফল বিক্রি করছি। প্রতি কেজির দাম ১৮০ টাকা। এই মৌসুমে আমি প্রায় দেড়শো টন ফল পাবো বলে আশা করছি। এখানে আদিবাসীসহ প্রায় ৫০ জন বেকার নারী-পুরুষ কাজ করে। আগামীতে এই বাগান আরও বড় করার চিন্তা আছে, এতে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। এছাড়া এই ড্রাগন বিদেশে রপ্তানি করারও পরিকল্পনা করছি।”
সদরের তেঘর গ্রামের শাওন হোসেন বলেন, “জয়পুরহাটের মাটিতে এত বড় ড্রাগন বাগান গড়ে উঠেছে, তা আমি ধারণাই করতে পারিনি। তাই দেখতে এসেছি। বাগানে ফুল ফুটে ফল ধরা শুরু করেছে, যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।” পাঁচবিবির বাগজানা গ্রামের রেজুয়ান হোসেন জানান, “আমাদের এলাকায় এত বড় বাগান আগে কখনো দেখিনি। দেশে ৪৫ বিঘার ড্রাগন বাগান কটা আছে, তা আমার জানা নেই। বাগানে এসে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। শিপলু যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে এমন বাগান গড়ে তুলতে পারি।”
বাগানের শ্রমিক শিউলী রানী বলেন, “আমি কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করে প্রতিদিন ৪শ টাকা পাই। এতে আমার লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারকে কিছুটা সাহায্য করতে পারি। আমার মতো অনেক মেয়ে এখানে কাজ করে সংসার চালায়।” ফরিদুল ইসলাম নামে আরেক কর্মচারী বলেন, “আমরা এই বাগানে প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করি। এর মধ্যে অনেক আদিবাসী নারী ও বেকার ছেলে রয়েছে। এই বাগান গড়ে ওঠায় তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই, যা দিয়ে আমার সংসার চলে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, “চাকরির পাশাপাশি ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান করে হেদায়েতুল ইসলাম শিপলু সফল হয়েছেন। এই ড্রাগন যাতে নিরাপদভাবে উৎপাদিত হয়, সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার-কীটনাশক ব্যবহারসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবো।” পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শ্রী তরুণ কুমার পাল বলেন, “ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর। এতে প্রচুর ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি নিয়মিত খেলে রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে, কোলেস্টেরল কমায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।