হোটেলে নারীর লাশ উদ্ধার ঘিরে ধীর গতি তদন্ত

news paper

আরিফুর রহমান

প্রকাশিত: ১৬-৮-২০২৫ দুপুর ১:৩১

19Views

হোটেল কক্ষ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধারের এক মাস অতিবাহিত হলেও মৃত্যুর রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ বলছে অপমৃত্যু। কিন্তু নারীর প্রকৃত পরিচয়, হোটেলে ওঠার উদ্দেশ্য এখনো অজানা। ভুয়া জন্ম সনদ দিয়ে হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেন ওই নারী। ভুয়া জন্ম সনদ অনুসারে নারীর নাম প্রাথমিকভাবে শান্তা ইসলাম (৪২) বলে জানা যায়।
গত ৪ঠা জুলাই খুলনা নগরীর ‘ওয়েস্টার্ন ইন’ আবাসিক হোটেল থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার হয়। ঝুলন্ত অবস্থায় নারীর লাশ উদ্ধার হওয়ায় পুলিশ বলছে অপমৃত্যু। কিন্তু জন্মসনদ ভুয়া হলেও নারীর আসল পরিচয় এবং কী কারনে তিনি হোটেলে ওঠেন তা এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি পুলিশ।
‘ওয়েস্টার্ন ইন’ কর্তৃপক্ষ জানায়, শান্তা ইসলাম (৪২) ৩রা জুলাই বিকাল ৫ টায় হোটেলের ২০৮ নং কক্ষ ভাড়া নেন। তিনি পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে এ হোটেলে এসেছেন। পূর্ব পরিচিত বিধায় ওই নারী কিছু সময় পর ভোটার আইডি কার্ড জমা দেয়ার শর্তে জন্মসনদ নেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরবর্তীতে হোটেল কর্তৃপক্ষ ভোটার আইডি কার্ড নেননি। এরপর ৪ঠা জুলাই বিকাল ৪ টায় খুলনা সদর থানা পুলিশ ওই নারীর লাশ কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় হোটেল কক্ষের বিছানায় ৩—৪ পাতা ঘুমের ওষুধও পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, ‘ওয়েস্টার্ন ইন’ হোটেলে গত প্রায় চার বছর ধরে ওই নারী প্রায় সময় আসতেন। হোটেল সংশ্লিষ্টদের সাথে নারীর গভীর যোগাযোগ ছিলো। এজন্য ওই নারীকে ভুয়া জন্ম সনদের ওপর ভিত্তি করেও রেখেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। একটা সময় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের জমজমাট যাতায়াত ছিলো হোটেলে। ওই নারীরও তখন যাতায়াত ছিলো। তবে এ মৃত্যুর ঘটনায় হোটেল কতৃর্পক্ষ নিরবে কিছু করার চেষ্টা করছে। ময়না তদন্ত রিপোর্টে কিছু কারিশমা করার চেষ্টা চলছে।

‘ওয়েষ্টার্ন ইন’ আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, শান্তা ইসলাম ৩রা জুলাই বিকাল ৫ টায়  একটি জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট জমা রেখে হোটেলের ২০৮ নং কক্ষ ভাড়া নেন। পূর্বেও করোনার পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে তিনি আমাদের হোটেলে এসে থেকেছেন। হোটেলে পূর্বে কর্মরত আরিফ নামে একজন হোটেল বয়কে জানিয়ে ওই নারী সব সময় ফোন দিয়ে আসতেন। আরিফ বর্তমানে এখানে কাজ করেন না। আমরা ওই নারীর কল দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করলে জানতে পারি যে তিনি, ঢাকায় যে বাসায় কাজ করতেন, সেখানকার নাম্বার এটি। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সকালে একবার রুম থেকে বের হয়ে ওই নারী নিচে যেয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে তার কক্ষে যান। এরপর তাকে নাস্তা দেয়া হয়। পরবর্তীতে হোটেল বয় ক্রোকারিজ আনতে গেলে নক করলে দীর্ঘক্ষন দরজা না খোলায় আমাদের সন্দেহ হয়। অপেক্ষা করে আমরা বিকালে পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ এসে দরজা ভেংগে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। এসময় বিছানায়  ৩—৪ পাতা ঘুমের ওষুধের পাতা ছিল। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর খোজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে ওই নারী বিভিন্ন হোটেলে রাত্রি যাপন করে টাকা না দিয়েই হোটেল ত্যাগ করে চলে যান। আসলে ফ্রড টাইপের ছিলেন ওই নারী।

খুলনা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার নান্নু মন্ডল বলেন, সুরতহাল অনুযায়ী আমরা অপমৃত্যু হিসেবে ধরেছি। বাকিটা তদন্তের পরে জানা যাবে।

এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই পিংকি বলেন, হোটেলের ২০৮ নং কক্ষটির ভিতর থেকে সিটকেনি দিয়ে দরজা লক করা ছিলো। আমরা এজন্য রুমের দরজা ভেংগে প্রবেশ করে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়ে তিনি হোটেল কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু জন্ম নিবন্ধনের স্থানে খোজ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ওই নারী পূর্বেও এই হোটেলে এসে থেকেছেন। তিনি আরো বলেন, ওই নারীর কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না। দুইটি এক্টিভ সিম ছিলো। তাও অন্যের এনআইডি কার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা। সেই এনআইডি বরাতে খোজ নিয়ে জানা যায় গৃহপরিচারিকার কাজ দেয়ার সূত্রে তার সাথে পরিচয়। তিনি বলেন, তদন্ত কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে আসল রহস্য জানা যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।


আরও পড়ুন