তানোরে লালপুর মডেল কলেজে ব্যাক ডেটে ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ
প্রকাশিত: ১৬-৮-২০২৫ দুপুর ১:১৭
রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন ইউপির লালপুর মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মুনসুর রহমান ব্যাক ডেট ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি শূন্য পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।এঘটনায় লালপুর গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক ও তানোর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বাদি হয়ে অধ্যাক্ষ মুনসুর রহমান কে বিবাদী করে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এর আগে বিগত ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ইউপি বিএনপির সভাপতি শামসুদ্দিন মেম্বার ও সম্পাদক জিল্লুর রহমান নান্নু এবং উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নানের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অর্থের বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের পদে পদায়ন করা হয় মুনসুরকে।
এঘটনায় ওই সময় সিনিয়র প্রভাষক আক্তারুজ্জামান বাবু বাদি হয়ে ইউএনওর নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু নেতাদের চাপের কারনে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। সেটি ধামাচাপা পড়ে গেছে। বহাল তবিয়তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মুনসুর। তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের পদে বহাল থাকায় নিয়োগ জালিয়াতি করতে তীল পরিমান দিধা করেন নি বলে স্থানীয়দের অভিমত। কলেজের কোন ধরনের কমিটি না থাকলেও প্রয়াত ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ এবং গভর্নিং বডির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রদর্শক (জীব বিজ্ঞান) পদে আবুল কালাম আজাদ , অফিস সহায়ক পদে মতিউর রহমান কে অবৈধ ভাবে নিয়োগ দিয়ে নতুন রুপে আলোচনায় এসেছেন এই দূর্নীতি বাজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ। এতে করে কলেজ শিক্ষকদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, ব্যাহত হয়েছে পাঠদান। অধ্যাক্ষসহ নিয়োগ জালিয়াতিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।অভিযোগে উল্লেখ, বিগত ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর লালপুর মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠা অধ্যাক্ষ সফিকুল ইসলাম মারা যান।
সেই পদে নিয়োগ পান মতিউর রহমান। তিনি বিগত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে অবসরে যান। জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর কলেজটির এক প্রকার কর্তা বনে যান লালপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নান্নু। মতিউর রহমান অবসরে যাওয়ার পর কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে মুনসুরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ পদে পদায়ন করা হয়। সম্প্রতি চলতি বছরে মে মাসের দিকে প্রদর্শক জীব বিজ্ঞান পদে আবুল কালাম আজাদ ও অফিস সহায়ক পদে মতিউর রহমানের E,F,T তে বেতনভূক্ত হয়। হঠাৎ তারা বেতন ভুক্ত হওয়ার কারনে হতবাগ হয়ে পড়ে কলেজ শিক্ষকরা। অধ্যাক্ষসহ নেতাদের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। বিএনপির দলীয় ফোরামেও এনিয়োগ নিয়ে তোপের মুখে পড়ে ইউপি বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকরা।শরিফুল অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, বিগত ১৯৯৮ সালে মুনসুর রহমান মুন্ডুমালা মহিলা কলেজে অধ্যাক্ষ থাকা অবস্থায় নানা অনিয়ম দূর্নীতির কারনে তাকে অব্যহতি দিয়ে স্থানীয়রা তাড়ানি দেয়। এরপর ২০১০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপিএড শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন এবং ওই পদে থাকাকালীন ২০০৩ সালে লালপুর মডেল কলেজে রাস্ট্র বিজ্ঞান পদে নিয়োগ নিয়ে দুই জায়গার বেতন তুলতেন, যা সম্পূর্ণ রুপে বেআইনি।
মুনসুর রহমানের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি সহ একাধিক মামলা বিচারাধীন।২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে প্রদর্শক জীব বিজ্ঞান ও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর হতে মে মাসের মধ্যে অফিস সহায়ক হিসেবে মতিউর রহমান কে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডি আই এ কর্তৃক জরিপে বা কলেজে উপস্থিত সংক্রান্ত কোন তথ্য শিক্ষক, কর্মচারী কিংবা কমিটি বা এলাকাবাসী অবগত না। যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।স্থানীয়রা সকালের সময়কে জানান, আমরা জানতে পারি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান, ইউপি বিএনপির সভাপতি শামসুদ্দিন মেম্বার ও সম্পাদক জিল্লুর রহমান নান্নু, যুবদল নেতা জামালসহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মুনসুর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জালিয়াতি ভাবে নিয়োগ দিয়েছে। অথচ কলেজে কোন কমিটি নেই। এটাই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান মুল চেতনা। কিভাবে লুটেপুটে খাওয়া যায়।এমন জালিয়াতির নিয়োগের বিষয়ে জানতে সম্প্রতি কলেজ গিয়ে অধ্যাক্ষ মুনসুর রহমানের খোঁজ করা হলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। মোবাইল করা হলে তিনি জানান আমি চাপাইনবয়াবগঞ্জ আদালতে আছি। আপনি কিভাবে নিয়োগ দিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান পরে কথা বলা হবে। গত বুধবার অভিযোগ হওয়ার পর নিয়োগের বিষয়ে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি জানান, যে অভিযোগ করেছে সে তুলে নিতে বাধ্য হবে। কেন তুলে নিবে আর আপনার নামে কতটা মামলা আছে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, স্বাক্ষাতে কথা হবে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে তার মোবাইলে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়।নিয়োগ বিষয়ে তালন্দ ইউপি বিএনপির সভাপতি শামসুদ্দিন মেম্বারের সাথে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি জানান আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা। পরে তিনি পুনরায় ফোন করে থানা মোড়ে ডাকেন, সেখানে যাওয়া হলে তিনি জানান আমি কলেজের একজনের কাছ থেকে শুনেছি। আপনি ও নান্নু, আহবায়ক হান্নান এবং যুবদল নেতা জামাল সবকিছু জানেন প্রশ্ন করা হলে কোন উত্তর না দিয়ে নান্নুর সাথে কথা বলতে বলেন।ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নান্নুর সাথে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি সকালের সময়কে জানান, আগে নিয়োগ দেয়া ছিল। কয়জনকে দেয়া ছিল জানতে চাইলে তিনি জানান একজনকে তার বেতনভুক্ত হয়েছে। আরেকজনের কিভাবে বেতন হয় জানতে চাইলে তিনি জানান কলেজে কমিটি নেই নিয়োগ হবেনা। মুনসুর ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হতে পারে না কিভাবে করলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমাদের দলের লোক এজন্য করা হয়েছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে করা যায় কি জানতে চাইলে তিনি জানান, অতীতে এমন অনেক কিছু হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ বলেছেন কোন নিয়োগ ছিল না তাহলে হয় কিভাবে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি জানান, এতকিছু আমার জানা নেই।