পৌরসভার অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি দিলেন এসিল্যান্ড
প্রকাশিত: ১৩-৮-২০২৫ দুপুর ৪:৫৩
অনুমতি ছাড়া বড়াল নদীর ৫ কিলোমিটার অংশে সংস্কারে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প ঘিরে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিতর্কিত ওই প্রকল্পের সংবাদ প্রকাশ করায় সংবাদকর্মীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভার প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
হুমকি-ধামকির একটি অডিও ক্লিপও সামনে এসেছে। গত রবিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বনপাড়া পৌর প্রশাসকের কার্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৫জন সংবাদকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পৌর সচিবসহ পৌর সভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। হুমকি-ধামকি এক পর্যায়ে পৌরসভার দুই কর্মচারী মো. কাবিল হোসেন (বিদ্যুৎ লাইনম্যান) ও মো. আকুল হোসেন (কার্য সহকারী) অশ্লিল ভাষায় গালি দিতে দিতে সংবাদকর্মীদের দিকে মারতে তেড়ে আসেন।
মোহনা টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ও কালবেলার গুরুদাসপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী কমিশনের অনুমতি ছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ নদী সংস্কার করতে পারে না। তাছাড়া প্রকল্পটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও নানা ধরণের বিতর্ক চলছে। এনিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদটি সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নজরে এলে তিনি বিক্ষীপ্ত হয়ে পড়েন।
তিনি আরো বলেন, ‘একটি ভিডিও বক্তব্য নেওয়ার জন্য এ্যাসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছিল। তিনি এই প্রকল্পের ব্যপারে তথ্য দিতে অনিহা প্রকাশ করছিলেন। সবশেষ বক্তব্য দেওয়ার কথা বলে রবিবার তিনিসহ আরো দুজন সংবাদকর্মীকে পৌর কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়া মাত্রই ব্যক্তি আক্রোশে ইত্তেফাকের সাংবাদিকসহ উপস্থিত সংবাদকর্মীদের আক্রমণ করে কথা বলতে থাকেন। এমন কি সাংবাদিকদের বেয়াদব বলে গালি দেন। এনিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এ্যাসিল্যান্ডের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে পৌর সভার দুইজন কর্মচারী মো. কাবিল হোসেন (বিদ্যুৎ লাইনম্যান) ও মো. আকুল হোসেন (কার্য সহকারী) অশালিন ভাষায় গালি দিতে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে মারার জন্য তেড়ে আসেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে এ্যাসিল্যান্ডের উদ্ভট আচরণের বিষয়টি দুঃজনক বলে মন্তব্য করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। তিনি বলেন, মূলত ‘বি এম ডব্লিউ এস এস পি’ প্রকল্পের আওতায় এই বড়ালের বনপাড়া হাওড়া মিঠুর বাড়ি থেকে নটাবাড়িয়া বকুলতলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বনপাড়া পৌরসভা। এর সঙ্গে হাওরা থেকে বিলচিনিডাঙ্গা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার জিয়া খালও সংস্কার করা হচ্ছে। কাজটি শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল। ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ের এই কাজটি পেয়েছেন নাটোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এ্যান্ড কোং।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিফাত করিম বলেন, বনপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ বড়ালের ৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করছে। এই বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে এ বিষয়ে পৌরসভা পানি উন্নয়ন বের্ডের বা নদী কমিশনের অনুমতি নেয়নি। তিনি বলেন, ৫২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে বড়াল ও নারদ নদী দখলমুক্ত করে খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের পরও পৌরসভার বড়াল নদী ড্রেজিংয়ে বিষয়টি তার বোধগম্য নয়।