জাবিপ্রবিতে প্রক্সি, চূড়ান্ত ভর্তির সময় জাককানইবি শিক্ষকদের কাছে ধরা

news paper

এস এম মোজতাহীদ প্লাবন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ৮-৮-২০২৫ বিকাল ৬:৮

61Views

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে গিয়ে ৩ জন আটক হয়েছেন। এই ঘটনা জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘটে, যেখানে পরীক্ষা দেওয়ার পর সন্দেহভাজন এক শিক্ষার্থীকে আটকের পর খোঁজ মেলে একটি বৃহৎ জালিয়াতি চক্রের। আটকরা হলেন- পাভেল, সিয়াম, এবং আফিক।

এদের মধ্যে পাভেল ও সিয়াম প্রক্সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং আফিক নামে এক শিক্ষার্থী এই চক্রের মাধ্যমে ভর্তির চেষ্টা করেন। পাভেল, যিনি ঢাকার বিক্রমপুর এলাকার বাসিন্দা, এবং সিয়াম, যিনি ময়মনসিংহ নগরের বাসিন্দা, একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার চুক্তিতে যুক্ত ছিলেন।

আফিক, যিনি ত্রিশালের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে, ৭ আগস্ট চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষার দিন সন্দেহজনক আচরণ করলে শিক্ষকরা তার সাক্ষর চেক করেন এবং কিছু প্রশ্নে ব্যর্থ হন। এর পর তিনি প্রক্সি জালিয়াতি চক্রের সদস্য পাভেলকে নিয়ে আসেন। পাভেলের ফোনে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বিসিএস, ব্যাংকসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার কাজ করছিল একটি বড় চক্র।

এদিকে, পাভেলের ফোন থেকে আরো অনেক তথ্য উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে পরীক্ষার এডমিট কার্ড, প্রার্থীদের ছবি, এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সংযোগ পাওয়া যায়। এই গ্রুপে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. মো. সুজন আলী জানান, ফোনের লক খুলতে ৪-৫ ঘণ্টা চেষ্টা করার পরও পাভেল সফল হননি। তবে ফোনের ভিতরে থাকা তথ্য আরও অনেক বড় চক্রের তথ্য প্রকাশ করতে পারে।

এছাড়া, আফিক ও পাভেলের মধ্যে ১ লাখ টাকার চুক্তি ছিল, যার মাধ্যমে আফিককে ভর্তি করানোর শর্ত ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ৭ আগস্ট আফিকের বাবা পাভেলকে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল।

এই চক্রের মাধ্যমে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত আরও দুই শিক্ষার্থী প্রক্সি দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাভেল ও সিয়াম এমন আরো অনেক পরীক্ষা এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে।

এছাড়া, চক্রের মূল হোতা বাবু ভাই নামের একজন ব্যক্তি, যিনি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা, জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে চক্রের পরিচালক হিসেবে দাবি করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই মামলা দায়ের করে আটককৃতদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে, এবং এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও  জানা যায় গুুচ্ছভূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে প্রক্সি পরীক্ষার সবগুলোই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাটি জামালপুরে ঘটেছে, কিন্তু এখানে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টায় ধরা পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি প্রস্তাব করেছি। আগামী রবিবার এই তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হবে এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো চক্রের সন্ধান বের করার চেষ্টা চলবে। আশা করি তদন্তের মাধ্যমে বিষয়গুলো উঠে আসবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 


আরও পড়ুন