ভবানীপুর ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা লতিফের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

news paper

ত্রিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯-৭-২০২৫ বিকাল ৫:২০

58Views

হবিগঞ্জের লোক ভারতে থেকে কানিহারী ইউনিয়ন থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের অভিযোগে বদলি হওয়া কানিহারী ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বর্তমানে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা) আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে এবার সরকারি প্রকল্পের কাজ করিয়ে বিল পরিশোধ না করে সেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও, প্রকল্পের কাজে ভুয়া ও অতিরিক্ত টাকার ভাউচার করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শাহজালাল ওরফে শাহু ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-নগদ অর্থ) কর্মসূচীর আওতায় ১ম ও ২য় পর্যায়ের উপজেলা ভিত্তিক গৃহীত প্রকল্পের আওতায় ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নে ১২টি প্রকল্পের রাস্তা সংস্কারে মাটি ভরাটের কাজ স্থানীয় বিএনপিনেতা ও ভেকু ব্যবসায়ী মোঃ শাহজালাল ওরফে শাহুকে দেওয়া হয়। কাজ শুরু করার পর থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র ভেকুর তেল খরচ বাবদ চার লাখ ৯৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তৎকালীন ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ। ভেকু মালিক ও কাজের হিসাব অনুযায়ী ছয় লক্ষাধিক টাকা পাওনা রয়েছে ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের কাছে।

প্রকল্পগুলো হলো: বালিদিয়া আঃ রহমানের বাড়ি হতে ছফির উদ্দিন খাঁ এর বাড়ি রাস্তা সংস্কার, কানিহারী বহুলাকান্দা শাহা আলমের দোকানের মোড় হতে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, কানিহারী বহুলাকান্দা কারী আব্দুলের বাড়ি হইতে তালতলা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ, বিয়াত্তাপাকা রাস্তা হইতে কে.বি.আই রোড পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ, উজ্জা ফকিরের দরগা হইতে সিরাজ আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ, ডাক বাঘাদাড়িয়া কেবিআই রোড হতে মাজাহারুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও সলিংকরণ, জিলকী আব্দুল ফকিরের বাড়ি হতে শাহা মৃর্ধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারসহ চারটি রাস্তা সংস্কার, আহাম্মদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের সাথে পুকুরসহ দুটি পুকুর সংস্কার, বড়মা পাকা রাস্তা হইতে জসিমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, বালিদিয়া নামাপাড়া পাকা রাস্তার মসজিদ হতে শামসুদ্দিন মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, শামসুদ্দিন মেম্বারের বাড়ি নূরুল ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, নূরুল ডাক্তারের বাড়ি হতে তমিজ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, শামসুদ্দিন মেম্বারের বাড়ি হইতে হামিদ সেক্রেটারীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, উত্তর কানিহারী পাগলার মোড় হইতে জামে মসজিদ হয়ে বড় পুকুরপাড় পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, তিরখী ঢালিবাড়ি স্কুল হতে সোহেলদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ।

প্রকল্পগুলোর কাজ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে শেষ হয়। ভেকুর তেল বাবদ তিন লাখ উনত্রিশ হাজার টাকা প্রদান করে বাকি টাকা পরিশোধ করতে আব্দুল লতিফ টালবাহানা শুরু করেন। "আজ নয় কাল টাকা দেব" বলে শুধু তারিখ পরিবর্তন করে ঘোরাতে থাকেন। উপায়ন্তর না দেখে আব্দুল লতিফের কাছ থেকে কৌশলে টাকা আদায়ের জন্য তাঁর মাধ্যমে বিশ হাজার ইট নিয়ে নেন ভেকু মালিক। এরপর থেকে আব্দুল লতিফ শুধু বলতে থাকেন যে, এখনও বিল হয়নি, বিল পায়নি। প্রকল্পের টাকা পেলে দিয়ে দিবেন। বিশ্বস্ত সূত্রে ভেকু মালিক জানতে পারেন যে, আব্দুল লতিফ সকল প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন। তখন তাঁকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে মেয়ের বিবাহের কথা বলে আবারও শুধু তারিখ পরিবর্তন করতে শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি আর ভেকু মালিকের ফোন রিসিভ করছেন না, টাকাও পরিশোধ করছেন না। পরবর্তীতে জানা যায় যে আব্দুল লতিফকে কানিহারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।

কানিহারী বহুলাকান্দা শাহা আলমের দোকানের মোড় হতে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান জানান, এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল চার লক্ষ টাকা। তিনি প্রকল্প চেয়ারম্যান হলেও কোনো চেক পাননি। সচিব আঃ লতিফ ত্রিশাল খবর দিয়ে নিয়ে এসে প্রকল্প রেডি করার কথা বলে পিআইও অফিসে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে ডিলার মোস্তাকের অফিসে নিয়ে আবার একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। এরপর থেকে সচিব আর কোনো কথা বা কাজের খোঁজ দেননি। হঠাৎ করে একদিন একটি ভেকু এসে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ শুরু করে। সচিব আঃ লতিফ চেক উত্তোলন করে নিজের মতো করে প্রকল্পের কাজ করিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই রাস্তায় ভেকু দিয়ে ৬৯ ঘণ্টা কাজ করিয়েছেন, যার খরচ এক লাখ চব্বিশ হাজার টাকা। চার লক্ষ টাকার প্রকল্প সোয়া লক্ষ টাকা দিয়ে শেষ করে বাকি টাকা সচিব আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বদলি হওয়া কানিহারী ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বর্তমানে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা) আব্দুল লতিফকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কানিহারী ইউপি প্রশাসক মুশফিকুর রহমান জানান, "সচিব বদলি হওয়ার পর ওই ভেকুর মালিক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছি।"

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, "এবিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।"


আরও পড়ুন