নেছারাবাদে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সফরের রেশ আজও এলাকাবাসীর মুখে মুখে

news paper

বদরুজ্জামান সুজন, নেছারাবাদ

প্রকাশিত: ১৯-৭-২০২৫ দুপুর ১:৩৪

110Views

বাংলাদেশ-আলজেরিয়া বন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে উঠেছে গতকাল (১৮ জুলাই) পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে ঘটে যাওয়া এক মানবিক ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

গণপ্রজাতন্ত্রী আলজেরিয়ার সম্মানিত রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল ওয়াহাব আস সায়দানী গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় পিরোজপুরের ঐতিহ্যবাহী আটঘর কুড়িয়ানার শতবর্ষী নৌকার হাট পরিদর্শনে পৌঁছান। তার সফরের প্রভাব ও হৃদয়স্পর্শী মুহূর্তগুলোর রেশ আজও ছড়িয়ে আছে এলাকাবাসীর মুখে মুখে, সামাজিক পরিমণ্ডলে এবং আঞ্চলিক গর্বে।

ভাসমান এই নৌকার হাটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীবন্ত ঐতিহ্যে রাষ্ট্রদূত মুগ্ধ হয়ে বলেন, "এ হাট শুধু পণ্যের বিনিময়স্থল নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।" তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা ও নৌকাভিত্তিক অর্থনীতির বহমান ধারায়ও বিস্ময় প্রকাশ করেন।

নেছারাবাদের এই শতবর্ষী ভাসমান হাট এখন শুধুই বাণিজ্যের স্থান নয়, এটি পর্যটকদের কাছেও এক আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে সারি সারি কাঠের নৌকা, যার প্রতিটিতে চলছে নৌকা বিক্রির হাট—এ এক অনন্য দৃশ্য। প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ, নদীর ওপর ভাসমান পণ্যের জগৎ, আর স্থানীয় লোকজ সংস্কৃতির প্রাণবন্ত রূপ পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে বহুদিন ধরে। রাষ্ট্রদূতের সফরের পর এটি আরও বেশি আলোচনায় এসেছে।

পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রদূত ছারছীনা দরবার শরীফে গমন করেন, যেখানে তিনি পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন এবং দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর সাহেবের কবর জিয়ারত করেন।

রাষ্ট্রদূতের আগমন উপলক্ষে দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে এক হৃদয়গ্রাহী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমীরে হিযবুল্লাহ, ছারছীনা দরবার শরীফের হযরত পীর সাহেব হুজুর কেবলা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন (মা.জি.আ.)। এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল হুজুর কেবলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং দরবার শরীফের তিন মহান অলির পবিত্র মাজার জিয়ারত। অনুষ্ঠানে হুজুর কেবলার পক্ষ থেকে ড. আব্দুল ওয়াহাব আস সায়দানীকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, যা বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার মধ্যে আধ্যাত্মিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দুই দেশের বন্ধন, পারস্পরিক সম্মান এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের এক বিরল দৃশ্যপট তৈরি হয় এই সফরে। রাষ্ট্রদূতের এই পদার্পণ শুধু ধর্মীয় পরিমণ্ডলে নয়, বরং আঞ্চলিক জনগণের মাঝেও এক গর্বের অনুভব ছড়িয়ে দিয়েছে।

আজ শনিবার (১৯ জুলাই) পিরোজপুরবাসী এখনও আলোচনায় রেখেছে রাষ্ট্রদূতের গতকালের সফরকে। স্থানীয়রা বলছেন, "এমন সফর আমাদের এলাকার জন্য বিরল এবং গর্বের বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে এমন আধ্যাত্মিক সংযোগ আমাদের সংস্কৃতির মর্যাদাকেই বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।"

রাষ্ট্রদূতের সফর যেমন কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনি মানবিকতা, আন্তরিকতা ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে রইল বাংলাদেশের ইতিহাসে।


আরও পড়ুন