গোপালগঞ্জে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে - মহাসচিব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
প্রকাশিত: ১৬-৭-২০২৫ রাত ১১:২০
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেছেন, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, "নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব করেছিল। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির আমূল সংস্কার হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। প্রতিহিংসা দূরা হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু ক্ষমতা লোভী কিছু মানুষ ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করায় সুস্থ রাজনীতির প্রত্যাশা আজ ফিকে হয়ে গেছে। সোহাগ হত্যা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে আমরা কোনোভাবেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি না। এই ঐক্যমতে না পৌঁছার কারণ কী? পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়তে না পারা, নাকি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গ্রহণ করতে অনাগ্রহ?"
আজ ১৬ জুলাই’২৫ বুধবার বিকাল ৩টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব’২৪ এর শহীদ পরিবার ও আহতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ এর সভাপতিত্বে ও জয়েন্ট সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেনের সঞ্চালনায় উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করীম।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, শহীদ জিল্লু শেখের পিতা হাসান শেখ, শহীদ আনোয়ারের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মারুফ, নগর উত্তর সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, অ্যাড. মুস্তফা আল মামুন মনির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, জামাতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, মুফতী মোঃ মাছুদুর রহমান, মুফতী নিজামুদ্দীন, মুফতী আব্দুল কুদ্দুস রশিদী, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার অব. আমিনুল হক তালুকদার, আলহাজ আলাউদ্দীন, মাসুম বিল্লাহ, নাজমুল হাসান, হাজী ইসমাঈল প্রমুখ।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, "আজকের এই দিনেই ১৬ জুলাই’২৪ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা আবু সাঈদ, মুগ্ধ, খুবাইবসহ সকল শহীদদের মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের যথাযথ সুচিকিৎসা রাষ্ট্রীয়ভাবে করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।"
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, "ফ্যাসিস্ট এখনো বিদ্যমান। ৫ আগস্ট’২৪ ছিল ফ্যাসিস্ট পতনের নির্ধারিত দিন। কিন্তু আমরা সেটা চূড়ান্তভাবে করতে পারিনি। তাহলে আজ দেশবাসীকে ১ জন ব্যবসায়ীকে পৈশাচিকভাবে পাথর মেরে হত্যা করার চিত্র দেখতে হতো না। আমরা কি এজন্যই বেঁচে আছি? গাজাসহ সারা পৃথিবীতে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নারী, শিশুসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করছে, তারা আসছে বাংলাদেশে মানবাধিকার শেখাতে! গাজায় যারা হত্যা চালায় এবং তাদেরকে যারা সহযোগিতা করে, তাদের পা বাংলাদেশের মাটিতে পড়বে না।"
ড. রেজাউল করীম বলেন, "জুলাই’২৪ এর বিপ্লব ছিল নতুন বাংলাদেশ আবিষ্কার। বিপ্লবীদের স্লোগান ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিজ। ইমাম-খতীবদের জুমার খুতবা ছিল ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক বাক্সে ভোটের মাধ্যমে সেই কাঙ্ক্ষিত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ। সংস্কার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। জুলাই সনদের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠুক সে প্রত্যাশা সকলের।"
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, "জুলাই আন্দোলন শুধু নির্বাচন, পুলিশের পোশাক বদল আর প্রশাসনিক রদবদলের জন্য নয়। বরং রাষ্ট্র সংস্কার, রাজনৈতিক দলের সংস্কার, নিজেদের চরিত্র ও মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু পুলিশের শুধু পোশাক পরিবর্তন হয়েছে; চরিত্র বা মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা এখনো মামলা বাণিজ্য করে, গ্রেফতার বাণিজ্য করে। আমরা এটা আর দেখতে চাই না।"
গোপালগঞ্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, "গোপালগঞ্জ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। হাসিনা প্রেমিক যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদেরকে পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছি, হাসিনার কোনো প্রেতাত্মাকে বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে দেখতে চাই না। হয় ভালো হও। না হয় হাসিনার পথ খোঁজো। হাসিনা গেছে যে পথে তোমরা যেতে হবে সে পথে।"