ভারতীয় দুই নাগরিকের বাংলাদেশী দাবির সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চগড়ে ক্ষোভ

news paper

সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ৫-৭-২০২৫ দুপুর ২:৫৭

93Views

 ভারতীয় দুই নাগরিক ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করে গত ২৭ জুন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এই খবর সংবাদপত্রে দেখে পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই ভাই পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা দাবি করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) স্থগিতাদেশ বাতিলের আবেদন জানান। তারা বলেন, ১৯৭২ সালে তাদের বাবা জলধর রায় প্রধানকে সন্ত্রাসীরা পৈতৃক সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাবার হত্যার পর তারা প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন এবং পরে ফিরে এলেও হত্যাকারীদের সন্তানেরা তাদের হুমকি দিয়েছিল।

তবে জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিক ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান মূলত জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামের মৃত জলধর রায়ের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, মোস্তফা কামাল তাদের ভারত থেকে পাসপোর্ট ভিসায় নিয়ে এসে জালিয়াতির মাধ্যমে বোদা মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সাজিয়েছেন। এতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, সচিব, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও পরিষদের হিসাব সহকারীর সহযোগিতা ছিল। স্থানীয় দুই ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ ঘষামাজা করে ভারতীয়দের নামে জন্ম নিবন্ধন করা হয়, হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ নেওয়া হয় এবং পরিষদ থেকে নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করলে তারা বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র পান।

পরবর্তীতে এই জালিয়াতির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের আবেদনে তাদের জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা হয় এবং নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন করা হয়। এরপর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনে এনআইডি বাতিলের আবেদন করলে কমিশন তাদের কার্ড দুটি স্থগিত করে দেয়।

এনআইডি স্থগিতের আগে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ওয়ারিশ সনদ নিয়েছেন, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন, মোবাইল সিম কার্ড গ্রহণ করেছেন, কৃষি ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন এবং আয়কর ফাইলও করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, মোস্তফা কামাল ওই ভারতীয়দের ব্যবহার করে স্থানীয়দের ভোগদখলি ও বন বিভাগের জমি লিখে নেওয়ার জন্য দলিল প্রস্তুত করেন, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তারা জমি লিখে না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এমন অভিযোগ তুলে মোস্তফা কামাল ও মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান আদালতে সাজানো মামলা দায়ের করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ওই দুই ভারতীয় নাগরিকের বাবা দেশভাগের আগে বাংলাদেশে ছিলেন এবং তার কিছু জমি ছিল যা তিনি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে যান। এখন কয়েক যুগ পর তার দুই ছেলে বাংলাদেশে এসেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, মোস্তফা কামাল জালিয়াতি করে তাদের এনআইডি কার্ড তৈরি করেছেন এবং জমি রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। তারা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ার পরেও ভারতীয় এই দুই সহোদর কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিও তাদের ক্ষোভ রয়েছে। তারা দুই সহোদরসহ মোস্তফা কামাল, মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান এবং নাসিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন