বাঘায় পড়াশোনা না পারায় শিক্ষকের বেধড়ক মার, পঙ্গু প্রায় শিশু শিক্ষার্থী
প্রকাশিত: ৩০-৬-২০২৫ দুপুর ৪:৩৬
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী কাসেমুল উলূম ক্বওমী মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোঃ আব্দুল রহমান (১৪) এক নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনার শিকার হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক বেলাল ক্বারীর বেধড়ক মারধরে গুরুতর আহত হয়ে সে বর্তমানে পঙ্গুত্বের পথে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার ঘাড়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, এবং তা রক্ত সঞ্চালনে গুরুতর বাধার সৃষ্টি করছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জরুরি অপারেশন প্রয়োজন, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা।
আব্দুল রহমান উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের চক-বাউসা গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। পবিত্র কুরআনের শিক্ষার্থী হিসেবে আড়ানী কাসেমুল উলূম মাদ্রাসায় সে অধ্যয়ন করছিল। গত ৩ মে হঠাৎ মাদ্রাসা থেকে ফোন পেয়ে তার বাবা ছুটে যান আড়ানী বাজারের একটি ফার্মেসিতে, যেখানে ছেলেকে অচেতন ও হাত-পা বাঁকা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
প্রথমে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার কারণ গোপন রাখার চেষ্টা করলেও পরে স্বীকার করে, শিক্ষক বেলাল ক্বারী “পড়া না পারার” অজুহাতে আব্দুল রহমানকে নির্মমভাবে প্রহার করেন। পরে তাকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, সে এক পর্যায়ে কোমায় চলে যায়। এরপর রাজশাহী ও ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় জানা যায়, তার ঘাড়ের স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপারেশন ছাড়া তার সুস্থ হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
অসহায় পিতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "আমি একজন দিনমজুর কৃষক মানুষ। ছেলেকে ভালো করতে পাঁচ-ছয় লাখ টাকার অপারেশন দরকার, এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ যারা ছেলেকে এই অবস্থায় নামিয়েছে, তারা কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।"
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে এখনও কোনো ধরনের আর্থিক বা চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দোষী শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, "একটি শিশু যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন বর্বরতার শিকার হয়, তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবে আমাদের সন্তানরা?"
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি, আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
অপরদিকে, এখন পর্যন্ত স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়নি বলেও জানা গেছে। তবে এলাকার মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে উচ্চমহলে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।