পঞ্চগড়ে ভারতীয় নাগরিকদের এনআইডি করার মুলহোতা মোস্তফা ও মিরাজ ধরা ছোঁয়ার বাইরে

news paper

সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ৩০-৬-২০২৫ দুপুর ১:৩৮

12Views

পঞ্চগড়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির মূলহোতা মো. মোস্তফা কামাল ও মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশন ওই দুটি পরিচয়পত্র ব্লক করে দিলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই মোস্তফা কামাল ভারতীয় ওই নাগরিকদের কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়ার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা মোস্তফা কামালসহ এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিক ভবেন্দ্র নাথ রায় প্রধান ও বজেন্দ্র নাথ রায় প্রধান পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি থানার পশ্চিম মাগুরমারী গ্রামের মৃত জলধর রায়ের ছেলে। মোস্তফা কামাল তাদের ভারত থেকে পাসপোর্ট ভিসায় বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর জালিয়াতির মাধ্যমে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের জায়গীরপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সাজিয়ে চেয়ারম্যান, সচিব, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও পরিষদের হিসাব সহকারীর সহযোগিতায়, স্থানীয় দুই ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ ঘষামাজা করে ভারতীয়দের জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেন। হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ নিয়ে এবং পরিষদ থেকে নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করলে, তারা বাংলাদেশের এনআইডি লাভ করেন।

বাংলাদেশের পরিচয়পত্রে ভবেন্দ্রের এনআইডি নম্বর ১০৪৬৭৪৬২২৬ এবং বজেন্দ্রের এনআইডি নম্বর ৭৩৭৯১১৩০৭৪। অথচ এই দুই ভাইয়ের ভারতের নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভবেন্দ্রের আধার কার্ড নম্বর ৪৪১৭০৩৯৫৪৩৯৪ এবং ভোটার নম্বর WB/03/015/222490। বজেন্দ্রের আধার কার্ড নম্বর ৬৪৬৭২৫৮০৯৪৩৪ এবং ভোটার নম্বর JLG3534427।

পরবর্তীতে এই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে ওয়ারিশ সনদ নেন। এমনকি পাসপোর্টের জন্য আবেদন, মোবাইল সিম কার্ড গ্রহণ, কৃষি ব্যাংকে হিসাব খোলাসহ আয়কর ফাইলও খুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, মোস্তফা কামাল ভারতীয়দের ব্যবহার করে স্থানীয়দের ভোগদখলি ও বন বিভাগের জমি লিখে নেওয়ার জন্য দলিল প্রস্তুত করেছিলেন, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তারা জমি লিখে না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এমন অভিযোগ তুলে মোস্তফা কামাল ও মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান আদালতে মামলাও করেছেন।

অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল দেবীগঞ্জ রামগঞ্জ বিলাসি মেলাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে। মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভার মোহাম্মউল্লাহ বিএসসি বাড়ি মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা কামাল আগে নিজেকে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথিত ভাগিনা হিসেবে পরিচয় দিতেন। বর্তমানে তিনি নিজেকে বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা আরও বলেন, ভারতীয় ওই দুই নাগরিকের বাবা দেশভাগের আগে বাংলাদেশে ছিলেন এবং তাদের কিছু জমি ছিল, যা স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে তারা ভারতে চলে যান। এখন কয়েক যুগ পর তার দুই ছেলে বাংলাদেশে এসে জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি তৈরি করে জমি রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। মোস্তফা কামাল জমির বিরোধে মামলা করতে না পেরে নিরীহ মানুষদের রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মুসলিম অভিযোগ করে বলেন, মোস্তফা ও মিরাজ আমাদের জমি জালিয়াতি করে দখলের চেষ্টা করছেন। এতে ব্যর্থ হয়ে আমাকে কয়েকটি রাজনৈতিক মামলার আসামি করা হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়ায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের সাথে আমাকেও আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা মোস্তফা কামাল, মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান এবং নাসিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। মিরাজ মোহাম্মদ তারেকুল হাসান সাংবাদিক পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন।


আরও পড়ুন