বাংলাদেশ ও ছাত্র রাজনীতি

news paper

মিরাজ হাসান রানা

প্রকাশিত: ২৯-৬-২০২৫ বিকাল ৫:৪৮

872Views

ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন ও প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করাকে ছাত্ররাজনীতি বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, 'ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা উত্থাপন, এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ এবং সেই এজেন্ডার পক্ষে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আদায়ে কর্তৃপক্ষের উপর প্রভাব বিস্তারকারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছাত্র রাজনীতি।' এই সংজ্ঞাটি বৈশ্বিক পর্যায়ে স্বীকৃত।

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সংজ্ঞায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এখানে ছাত্ররাজনীতি কেবল ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণ সাধনেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি অতিক্রম করে সমগ্র দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়ে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে। নিজ প্রতিভা ও কারিশমা বলে অসংখ্য ছাত্রনেতা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে উন্নীত হয়েছেন।

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষাপট স্বতন্ত্র। এখানকার ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস অনন্য। এদেশের ছাত্রসমাজ স্বাধীনতা অর্জনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের কল্যাণার্থে ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে থাকে। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিপীড়িত-শোষিতের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হস্ত প্রসারিত করে।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস ও অসংখ্য ঐতিহাসিক অর্জন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন এবং ২০২৪ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলন যা পরবর্তীতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় - এসব ঐতিহাসিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ ও অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতির এই সকল অর্জন বিশ্বের অন্য কোনো দেশে বিরল। এই বৈশিষ্ট্যই আমাদের ছাত্ররাজনীতিকে অনন্য মহিমায় ভূষিত করেছে।

এ কারণেই বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও এখানে জনসংখ্যার আধিক্য, রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব, সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, নেতৃত্বে ক্ষুদ্রস্বার্থের প্রাধান্য এবং শিক্ষার হার এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এই পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।

ছাত্ররাজনীতি নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করে। সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সমস্যা উপলব্ধি করতে শেখায়। বৃহত্তর স্বার্থের মূল্যবোধ জাগ্রত করে। শোষক শ্রেণীর হাত থেকে নিপীড়িতদের মুক্তির প্রেরণা যোগায়। অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি করে। দেশের প্রকৃত প্রয়োজন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করে। নেতৃত্বে নৈতিকতার ভিত্তি স্থাপন করে। বৈশ্বিক রাজনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গঠনমূলক রাজনীতি শিক্ষা দেয়। এই বহুমুখী অবদানের কারণে ছাত্ররাজনীতিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।

তবে বর্তমান সময়ে ছাত্ররাজনীতির মধ্যে যেসব বিচ্যুতি ও অপব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেগুলো দৃঢ়হস্তে নির্মূল করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির মহত্ত্ব ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। এ দেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা এখনো ব্যাপক। আগামী দিনের ছাত্ররাজনীতি হবে আরও সমৃদ্ধ, গঠনমূলক এবং অমিত সম্ভাবনায় ভরপুর।

 লেখক :
যুগ্ম আহ্বায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কালীগঞ্জ পৌর শাখা, গাজীপুর।
 বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।


আরও পড়ুন