গণমুখী নানা দাবী নিয়ে রাজশাহী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আত্মপ্রকাশ

news paper

শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান

প্রকাশিত: ২৮-৬-২০২৫ দুপুর ২:৫৫

33Views

রাজশাহী শহর ও জেলার সব অঞ্চলের  কৃষক, শ্রমিক সহ সব পেশার মানুষের তথা রাজশাহীর জনমানুষের আকাঙ্খা ও বহুমুখী সৃজনশীল কর্মের জনহিতকর রাজশাহী গড়ার প্রত্যয়ে "রাজশাহী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি"র আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। 

শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর মাস্টার সেফ রেস্টুরেন্টের হলরুমে ""রাজশাহী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি"র এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ জানান, গত ২০ জুন (শুক্রবার) স্হানীয় গ্রান্ড তোফা কনভেনশন হলে রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্হিতিতে বিস্তৃত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জনস্বার্থে রাজশাহীবাসীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে নাগরিক অধিকারের বিভিন্ন দাবি আলোচনা এবং পর্যায়ক্রমে স্মারকলিপি, মানব-
বন্ধন, সভা-সমাবেশ ও সেমিননার- শিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

দাবিসমূহ:
গণশুনানী ব্যাতিরেকে রাজশাহীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স কমাতে হবে। ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ফি কমাতে হবে । অটো ও অটোরিক্সার নিবনন্ধন ফি কমাতে হবে । অটো ও অটোরিক্সা চালকদের ট্রাফিক আইন বিষয়ে ট্রেনিং এর ব্যবস্হা করতে হবে । রাজশাহী মহানগরীর গুরুত্বপুর্ন স্থানে অটো সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্নে ও যানজট নিরসনে ফুটপাত ও রাস্তার উপর হকার ও ব্যবসায়ীদের পুণর্বাসন সাপেক্ষে তুলে দিতে হবে । স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রীদের রাস্তায় চলাচল ও বখাটে ছেলেদের ইভটিজিং এর কবল থেকে রক্ষা করতে হবে । রেলগেট, ভদ্রা, তালাইমারী এবং কোর্ট সহ সকল জনবহুল এলাকায় যাত্রী ছাউনি, বসার ব্যবস্থা, সুপেয় পানী এবং গণসৌচাগার স্হাপন করতে হবে । সকল স্কুল এবং কলেজগুলোতে শৌচাগার সহ সকল সংস্কার করতে হবে । কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৫২ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ আদায়ের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করতে হবে।
রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে । অবিলম্বে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে । রুয়েট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাবজেক্ট চালু করতে হবে । রাজশাহীতে স্থাপিত আইটি ভিলেজকে পূর্ণাঙ্গরুপ দিতে পর্যাপ্ত ফান্ড বরাদ্দ করতে হবে ।
রাজশাহীতে আমসহ কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে । বন্ধ রেশম শিল্প কারখানাকে পুনরায় চালু করতে হবে ।
বন্ধ পাটকল পূর্ণ উদ্দ্যেগে চালু করতে হবে । কৃষকদের সমবায় ভিত্তিতে সংগঠিত করে কৃষকদের জন্য কৃষি বাজার প্রতিষ্ঠা করে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। বৈদেশিক চাকুরীতে আঞ্চলিক বৈষম্যদূর করে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের বেকার যুবকদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে হবে । নির্বাচিত যুবকদের বৈদেশিক চাকুরীর জন্য ব্যাংক ঋণ প্রদান করতে হবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, আর.ডি.এ, বরেন্দ্র, পানি উন্নয়ণ বোর্ড সহ ডিপার্টমেন্টের গত ১৫ বছরের উন্নয়ণ
কাজের হিসাব দিতে হবে। বিসিক-২ তে বরাদ্দ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুনঃবন্টন করতে হবে । অবিলম্বে চিকিৎসা নীতি প্রণয়ন করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকিকরণ বন্ধ করতে হবে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ সকল সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাকে সহজলভ্য ও জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করতে হবে । অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল চালু করতে হবে । বেসরকারী উদ্দ্যেগে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হার্ট ফাউন্ডেশন ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। যাত্রীদের যাত্রাপথে নিরাপদ করতে বনপাড়া থেকে সোনামসজিদ পর্যন্ত রাস্তাটিকে চারলেনে উন্নীত করতে হবে ।
রেল যাত্রীদের হয়রানি বন্ধের জন্য ডুয়েল রেল লাইন স্থাপন করতে হবে। ব্রডগেজ রেল লাইনের মধ্য দিয়ে মিটার গেজ রেল লাইন স্থাপন করতে হবে। রেল যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজশাহী থেকে সান্তাহার রেল জংশন পর্যন্ত সরাসরি ব্রডগেজ এবং মিটার গেজের মাধ্যমে সংযোগ দিতে হবে। রাজশাহীতে টেলিভিশন রিলে সেন্টারটিকে পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন ষ্টেশনে রুপান্তরিত করতে হবে। রাজশাহীর শিল্পকলা একাডেমিকে বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত
লোকবল নিয়োগ করতে হবে। রাজশাহীতে খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাঠের ব্যবস্হা করতে হবে। রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রিড়া সংস্হার গত ১৫ বছরের খরচের হিসাব প্রদান করতে হবে।
স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব ও ঘুষ-দূর্নীতিমুক্ত হয়ে সুষ্ঠুভাবে ভূমি জরিপ কাজ (বি,ডি,এস) সুসম্পন্ন করতে
হবে । ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে। রাজশাহী মহানগরসহ সমগ্র জেলায় তালিকাভুক্ত পুকুরসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে। মরণ বাঁধ ফারাক্কার প্রভাবে শুকিয়ে যাওয়া নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, পুস্করিনি পুনঃখনন করতে হবে। মরুকরণ রুখতে ব্যাপক বৃক্ষ রোপন করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলের সকল ঐতিহাসিক স্হাপনাসমূহ সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নবগঠিত সামাজিক সংগঠনটির সদস্য সচিব মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল। রাজশাহী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির
আহবায়ক এডভোকেট এনামুল হক'র সভাপতিত্বে এসময় রাজশাহীর সুশীল সমাজের একাংশ উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য,রাজশাহী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এনামুল হক। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন ১৩ জন বিভিন্ন পেশাজীবী । সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিক মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল। যুগ্ম সচিব হিসেবে রয়েছেন ১২ জন বিভিন্ন পেশাজীবী। উপদেষ্টা মন্ডলীতে রয়েছেন রাজশাহীর ২০ জন বিশিষ্ট প্রবীণ নাগরিক৷


আরও পড়ুন