জগন্নাথপুরে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ভূমি জোরপূর্বক বিক্রি ও দখলের অভিযোগ

news paper

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৬-৬-২০২৫ দুপুর ৪:৪৮

79Views

জগন্নাথপুরে ভূয়া দলিল সৃষ্টি করে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ভূমি জোরপূর্বক বিক্রি ও দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভোক্তভোগী লন্ডন প্রবাসী আছকির মিয়া বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আর্মি ক্যাম্প ও র‌্যাব অধিনায়ক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ৩০৫৭ নং সাফ কাবলা দলিল মূলে ও পরবর্তীতে একখন্ড দলিলমূলে বিবাদী গয়াছ মিয়া গংদের সাথে খরিদা সূত্রে জমির মালিকানা পান আছকির মিয়া। তবে তিনি প্রবাসী হওয়ায় এই জমিগুলো তার আপন ভাইসহ নিকটাত্মীয়দের ভোগ দখলে রেখে যান। আর এই সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপন ভাইসহ আত্মীয় স্বজনরা মিলে একাধিক জাল দলিল সৃষ্টি করে ভোক্তভোগী আছকির মিয়াকে অবগত  না করেই তার জমি অন্যত্রে বিক্রি ও দান করতে থাকেন। 
এ বিষয়ে জানার পর আছকির মিয়া তার আত্মীয় স্বজনের কাছে অন্যায়ভাবে জমি বিক্রির কারন জানতে চাইলে তাকে প্রাননাশের হুমকি দেয় তারা। গ্রাম্য শালিস বা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি কোন সমাধান না হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ভোক্তভোগী আছকির মিয়া। এদিকে দীর্ঘ বছর পর দেশে ফিরে তার শেষ সম্বল ভিটা তৈরীর জায়গাটুকু দেখেতে গিয়ে তিনি একটি টিনশেড এর বাসা দেখতে পান। আছকির মিয়ার নামে দলিল থাকার পরও কিভাবে বাড়ি নির্মাণ করেছেন জানতে চাইলে দখলদার ব্যাক্তি ওই জায়গা তার বলে দাবী করে। বৈধ কাগজাদি থাকার পরেও আছকির মিয়ার জায়গায় জোরপূর্বক জায়গা দখল করে রেখেছে তারই ভাগনা আলফু মিয়ার পুত্র  সিরাজ মিয়া।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক প্রবীণ মুরুব্বী বলেন, লন্ডন প্রবাসী আছকির মিয়ার ভাই ও আত্মীয় স্বজনরা যে জমিগুলো বিক্রি করছে তা সবই আছকির মিয়ার ক্রয় করা। সে লন্ডন যাওয়ার পরই জায়গাগুলো ক্রয় করে। নিজের ভাই, ভাগ্নাসহ আত্মীয় স্বজনদের কাছে ওই জমিগুলো সে ভোগ দখলের জন্য রেখে যায়। যাতে তার আত্মীয়-স্বজনরা জমিগুলো চাষ করে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে। পরিবার নিয়ে যাতে ভালো করে বাঁচতে পারে ওই মহানুভবতার কারনে তাদের ব্যবহারের জন্য জমিগুলো সমজিয়ে যান। আর এই সুযোগে তারা ভূয়া দলিল সৃষ্টি করে আছকির মিয়ার জমিগুলো বিক্রি করতে থাকে। তবুও আছকির মিয়া তাদের কিছু বলে নি। তবে সম্প্রতি আছকির মিয়ার শেষ অবলম্বন ওই ভিটার জায়গাটাও তার ভাগ্নে দখল করে রেখেছে। আমাদের দাবী প্রশাসন যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আছকির মিয়া জমি ফিরে পেতে সাহায্য করে। 
এ ব্যাপারে লন্ডন প্রবাসী আছকির মিয়া জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমি লন্ডনে বসবাস করে আসছি। প্রবাসে থাকার সুবাধে আমার আপন ভাইসহ আত্মীয় স্বজনরা জাল দলিল সৃষ্টি করে আমার মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রয় ও দান করে। দীর্ঘদিন পর আমি দেশে ফিরে এসে ১০ বছর আগে মাটি কেটে ভরাট করে রেখে যাওয়া ভিটায় বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে সেখানে একটি টিনশেডের ঘর দেখতে পাই। আমার নামীয় সব সম্পত্তি তারা বিক্রি করে আমাকে ভিটেমাটি ছাড়া করতে চায়। আমার নামীয় সকল জমি আমার অনুমতি ছাড়া বিক্রি করে শেষ অবলম্বন এই ভিটেটাও দখল করে রেখেছে। আমি এই দেশে বসবাস করি এটা তারা চায় না। সবকিছু বিক্রি করে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার নামে দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজাদি থাকার পরেও কিভাবে তারা তাদের জমি দাবী করে বিক্রি করতে পারে। আমি আমার জমি ফেরত চাই। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও অবৈধ দখলধাররা আমার জমি ছাড়তে নারাজ। জমিতে গেলে তারা আমাকে প্রাননাশের হুমকি দেয়। তাই আমার কাগজাদি ঠিক থাকলে আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি। সঠিক তদন্ত করে যার কাগজপত্র সঠিক হয় প্রশাসন যদি থাকে দখলদারি দিয়ে আসে তাতে আমার কোন আপত্তি নাই। তবুও আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত সিরাজ মিয়া বলেন, আমি জোরপূর্বক কোন জায়গা দখল করি নাই। আমরা জায়গা ক্রয় করে মালিক হয়েছি। আমার দলিল আছে, ডকুমেন্ট আছে বলেও জানান তিনি। তবে জায়গাটা কবে কিনছেন জানতে চাইলে সবকিছু স্বরণ থাকে না বলে সেটাও স্বরণ নেই বলে জানিয়ে দলিল দেখতে বলতে পারবেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ জানান, জায়গা দখল সংক্রান্ত একটা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরও পড়ুন