ভোমরা সীমান্তে বেপরোয়া হালিম মাস্টার
প্রকাশিত: ২২-৬-২০২৫ বিকাল ৫:৪
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মাদক ব্যবসা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শুরু হয় কোটি টাকার মাদকের অবাধ বেচাকেনা ও চোরাচালান। সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই মাদক সিন্ডিকেট। সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন ভোমরার আলোচিত মাদক সম্রাট হালিম মাস্টার।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সীমান্তে জারি করা হয় অঘোষিত রেড এলার্ট। তবুও বন্ধ হয়নি মাদকের ঢল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভোমরা, হাড়দ্দহা, লক্ষ্মীদাড়ি, ঘোষপাড়া, ঘোনা-গাজীপুরসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দেশে ঢুকছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, এলএসডি ও বিদেশি মদসহ নানান ধরনের মাদক। বিনিময়ে ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ।
ভোমরা সীমান্তের শ্রীরামপুর এলাকার পুরনো মাদক কারবারি আরশাদ আলী ওরফে ভোদু দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পরিবারসহ জড়িত এই ব্যবসায়। তার ছেলে শামীম বিজিবির হাতে মাদকসহ আটক হয়ে বর্তমানে জেলে। জামাই হালিম মাস্টার এলাকায় বসেই গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী মাদক নেটওয়ার্ক। ভোমরা টাওয়ার মোড়ে তার বাসা থেকেই চালান হয় খুচরা ও পাইকারি মাদক। সহকারী দু’জনের মাধ্যমে প্রতিদিন চলে মাদক বেচাকেনা।
জানা গেছে, পুলিশের ক্রসফায়ারের ভয়ে ভোদু এক সময় ভারতে পালিয়ে গেলেও তিন বছর আগে ফিরে এসে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার পরিবারের সদস্যরা এখন লাখপতি। গড়েছেন দালান-কোঠা, কিনেছেন বিঘার পর বিঘা জমি।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, একাধিক মাদকের মামলার পরও কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই এত খোলামেলা ভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হালিম মাস্টার?
ভোমরা সীমান্তের আরও কিছু চিহ্নিত মাদক কারবারির মধ্যে রয়েছেন নাটাপাড়া এলাকার আবু তালেবের ছেলে তুহিন, বশির কারিকরের ছেলে আজিজুল ইসলাম পলতা, সাইদুল, হান্নান, ফারুক, রমজান, হাসান, বকুলসহ অন্তত ডজনখানেক ব্যক্তি। তারা বছরের পর বছর ধরে গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ মাদক সিন্ডিকেট।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, মাদক চোরাকারবারিদের সাথে পুলিশের ডিবি, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবি’র কিছু অসাধু সদস্যের গোপন চুক্তির কারণেই এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোমরা বন্দরের একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় দিনদিন সীমান্তে মাদক আগ্রাসন ও কারবারিদের দাপট বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফুল হক জানান, “বিজিবি প্রতিদিন মাদকবিরোধী বিশেষ টহল পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করছে। সীমান্তে অপরাধরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, “ভোমরা সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ চাইলেও সেখানে স্বাধীনভাবে অভিযান চালাতে পারে না। তবুও আমরা মাদক দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এটি সম্ভব নয়।”
সীমান্তের মানুষ এখন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে—এত মামলা, এত অভিযোগ, তারপরও কীভাবে বহাল তবিয়তে চলছে হালিম মাস্টার ও তার সিন্ডিকেটের মাদক সাম্রাজ্য? প্রশাসনের জবাব চায় এলাকাবাসী।