শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে অপকর্ম

কর্ণফুলীতে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সিডিএ’র জমিতে গ্যাস সংযোগ

news paper

এসএম পিন্টু

প্রকাশিত: ২২-৬-২০২৫ দুপুর ৩:৪৮

202Views

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) ঘুষ বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মালিকানাধীন জমিতে ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে মো. দুলা মিয়া নামে এক ব্যক্তির নামে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সরকারি পাহাড়েও মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন সিটি গার্ডেন আবাসিক এলাকার চান্দগাঁও মৌজার বিএস ৩ নম্বর খতিয়ানের ৮ নম্বর দাগভুক্ত জমির মালিক সিডিএ। কিন্তু ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ওই জমিকে নিজের দাবি করে দুলা মিয়া নামের এক ব্যক্তি আটটি দ্বিমুখী চুলার গ্যাস সংযোগ নেন। দুলা মিয়া বোয়ালখালী উপজেলার চর খিজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার গ্যাস সংযোগের কোড নম্বর ১ডি-৫১-৪০০১।

তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় তার নাম ব্যবহার করে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়। সংযোগ কার্যক্রমে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছে মোমিন রোডের ‘মেসার্স শফী এন্টারপ্রাইজ’। কেজিডিসিএলের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জোন-২ এর তৎকালীন বিক্রয়োত্তর বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রইস উদ্দীন আহমেদ। সাক্ষী ছিলেন উপব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আলীম ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দীন।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দুলা মিয়া জমির নামজারির জন্য ১০৭/১৪ নম্বর মিস মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সার্ভেয়ারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, তার জমির দলিলে বিএস ৮ নম্বর দাগ উল্লেখ নেই। ফলে আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়। অর্থাৎ, দুলা মিয়া ওই জমির মালিক নন—তবু সেখানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যা ঘুষ লেনদেনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী ও বর্তমানে সহকারী প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, “আমরা যখন অনুমোদন দিয়েছি, তখন ফাইলে সব কাগজ ছিল। কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়েছে কিনা, তা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।”

অন্যদিকে, কেজিডিসিএলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে এই জমি অধিগ্রহণ করে সিডিএ। কিন্তু সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায় জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও চক্র। কেউ কেউ সেখানে ভবন নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য করছে। অভিযোগ রয়েছে, সিডিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসব থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকেন।

সরেজমিন তদন্তেও এসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। সিডিএর সিনিয়র এস্টেট অফিসার চৌধুরী মো. আবু হেলা বলেন, “অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। তিনি চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দিয়েছেন ব্যবস্থা নিতে, তবে এখন কী অবস্থায় আছে, বলতে পারছি না।”

এদিকে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস বলেন, “আমার কাছে এমন কোনো ফাইল আসেনি।”

চট্টগ্রামের সিডিএ ও কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের এ ধরনের দায়সারা মনোভাব এবং ঘুষ বাণিজ্যের বিস্তৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তারা অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন