তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃক্ষরোপনের বিকল্প নাইঃ উপ প্রধান বন সংরক্ষক
প্রকাশিত: ২১-৬-২০২৫ দুপুর ১১:৫৩
পৃথিবীব্যাপী তীপ্রতা বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে একটি ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যাতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন করলেও সেগুলো টিকসহ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ন্যাচারাল বেজ সলিউশনের কথা মাথায় রেখে বন অধিদপ্তর বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন উপ প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়।
১৯৬০ সাল থেকে বন অধিদপ্তর ক্লিন বেইজ তৈরি করার মধ্য দিয়ে উপকূলবাসীকে বিভিন্ন ভাবে পুনর্বাসিত করেছে। বোন সংরক্ষণ বন সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে প্রান্ত এলাকার মানুষ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে, অন্যদিকে জীব ও বৈচিত্রের একটি বিশাল সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন এই বন বিভাগের কর্মকর্তা। উপকূল এলাকাতে মৎস্য সম্পদের একটি ভালো প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে এর ফলে উপকূলবাসী স্বাবলম্বী হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিবছরই বৃক্ষরোপণ পালন করা হয় বলে জানান।
বাংলাদেশে বর্তমান তীব্র তাপদাহে জলছে মানুষ খুজছে নিস্তার পাওয়ার উপায়। ভয়াবহতার বাস্তব চিত্র এখন দেশের সকল জেলা উপজেলাতে চলছে। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে বড় বড় বিল্ডিং গড়ে উঠছে পশ্চিমা বিশ্বের সহিত তাল মিলিয়ে কিন্ত আমাদের দেশের অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনা করা হয়নি সমান তালে। ফলে বিগত পাঁচ বছর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল মাসেই দেশের সব জেলাতে বর্তমান ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা বিরাজমান যা জনমানব এবং প্রানীকুলের জন্য ভয়ানক অবস্হায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটি কেন হচ্ছে এবং পরিত্রানের উপায় কি তা যদি বুঝতে ব্যর্থ হয় তাহলে জনজীবন শুধু অতিষ্ট নয় বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে আবহাওয়া যদি ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপর যত বেশী বাড়বে অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রী বা তার উপরে তখন বাতাসের আদ্রতা বাড়ার সাথে ভাইরাসের পরিমানও বেড়ে যায়, ফলে ভাইরাস জনিত রোগের পরিমানও বেড়ে যায়।
আমরা বর্তমান উন্নতশীল দেশের সাথে তাল মিলাতে যেয়ে প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে হারিয়ে শুধু শহরে গড়ে তুলছি বড় বড় বিল্ডিং গরম থেকে বাচার জন্য কৃত্রিমতার উপর নির্ভরশীল এসি ব্যবহার, যানবাহন হিসাবে বড় বড় গাড়ি শহরে প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছি কিন্ত ভাবছি না পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রায় ২ কোটি জনগনের বাস করতে বিপুল সংখ্যক বিল্ডিং এর চাপ সেই সাথে ব্যবহার কারী গাড়ী থেকে বের হওয়া ধুঁয়াতে পরিবেশ দুষন হচ্ছে এছাড়া দেশের আবাদী জমির উপর নির্ভরশীল হওয়ার চাইতে পর নির্ভরশীল অন্য দেশের উৎপাদিত খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া প্রতিনিয়ত গাছ কেটে উজাড় করে ফেলা, ইটভাটাতে ব্যবহার করা, খঁড়ির কাজে বাগান কেটে ফেলাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা,এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য, এর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের দেশে তীব্র তাপদাহের ফলে হিট স্ট্রোকের সাথে অনেকে পরিচিত হচ্ছেন,কিন্ত কেন হচ্ছে তার প্রতিকার কি তা নিয়ে মাঝে মাঝে কাজ করলেও স্হায়ী সমাধানের কোন উদ্দ্যোগ নেই। বিষয়টি বিজ্ঞানভিত্তিক আমাদের শরীরে গরমে জলশূন্যতা বা পানিশুন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে শরীরে ঘামের সাথে লবন বের হলে শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি এবং সেল ইমবেলেন্স হয়। ফলে হিট স্ট্রোক হতে পারে যার কারনে এ সময়ে বিনা কারনে বাইরে বের না হওয়া এবং সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও বেশী বেশী পানি পান করা প্রয়োজন অথবা পরিষ্কার স্যালাইনযুক্ত পানি পান করা উচিত।
আমাদের দেশের অনেক শ্রমিক আছে যাদের দিন আনা দিন খাওয়া তাদের এই আবহাওয়াতে মাঠে, ঘাটে কলকারখানাতে কাজ করতে হচ্ছে ফলে পানি পিপাসা মেটাতে বাইরে পানি পান করতে হচ্ছে এমনকি রোডের পাশে গড়ে উঠা বানিজ্যিক বরফ দিয়ে তৈরী শরবত পান করে পিপাসা মেটাচ্ছে যে সকল বিক্রিতাদের নিকট হতে শরবত পান করে, তারা যে বরফ দিয়ে শরবত বানাই তা মোটেও খাবারের উপযুক্ত নয়, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বরফ দিয়ে বানানো শরবত পান করে অনেকে পেটের পিড়াতে পড়ছে। এর ফলে অনেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েডে, ঠান্ডা কাশিতে ভুগছে। এর জন্য ব্যস্ততম স্হান নির্বাচন করে মেডিকেল টিমের মাধ্যমে স্যালাইন, নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্হা করলে সাধারন জনগন উপকৃত হতে পারে। বিগত দিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন সচেতন মহল সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়ায়েছিল তাপদাহের এই সময়টিতেও তেমন ভাবেই সহযোগি মানসিকতা নিয়ে সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
তীব্র তাপদহে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির পরিমান বেড়ে যায়,কিন্ত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি (অতিবেগুনী রশ্মির)মাত্রা ১০ থেকে ১১ যা ত্বকের উপর তীব্র প্রভাবের মধ্যে পড়ে কেননা সহনশীল মাত্রা ৩/৪,মাত্রা ৪/৫ হলে ত্বকের উপর প্রভাব পড়ে,৭/৯ মাত্রা ত্বকের উপর বেশ প্রভাব পড়ে, ১০ এর উপরে মাত্রা হলে ত্বকের অতিমাত্রায় প্রভাব পড়ে, যা বিগত ২/৩ দিন অতিমাত্রায় অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব বিদ্যমান।এর ফলে ত্বকের উপর মারাত্বক প্রভাব পড়ে এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
বর্তমানে বিপুল জনসংখ্যার শহর ঢাকাতে যে পরিমান উচুতলাএবং গ্লাসযুক্ত বিল্ডিং গড়ে উড়ছে তাতে গরমে বাস করার জন্য ফ্যান, আইপিএস এবং এসি ব্যবহারিত হয়। তথ্যমতে ১০ টি এসিতে যে পরিমান জায়গা ঠান্ডা করে একটি মাঝারি সাইজের গাছ তার চাইতে বেশী জায়গা ঠান্ডা করে। অন্য একটি পরিসংখ্যান মোতাবেক জানা যায় যে, একটি এসি ১০০ স্কোয়ার ফুট জায়গা ঠান্ডা করলেও বাইরে ১১০ স্কোয়ার ফুট জায়গা গরম করে। পক্ষান্তরে জানা যায় একটি গাছ ১৭০০ স্কোয়ার ফুট জায়গা ঠান্ডা করে পাশাপাশি ৭৫০ স্কোয়ার ফুট জায়গার কার্বন ডাই অক্সাইডকে শোষনও করে যা প্রানিকুলের জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে আনে।
বর্তমান পরিস্হিতি উপলদ্ধি করে নতুন করে বিল্ডিং অনুমোদন দিতে শুধু টবে ফুল গাছ লাগানোর পরিবর্তে গাছ লাগানোর প্রয়োজন। এর জন্য আইন করা এবং যে শহরে জনসংখ্যা বেশী সেই আনুপাতিক হারে বেশী বেশী গাছ লাগাতে সকলকে বি়ভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করা উচিত। কারন আমাদেরকে এখন থেকে সচতন না হলে সামনে ভয়াবহতার মধ্যে পড়তে হবে।