তীব্র গরমে স্বস্তি দিচ্ছে তালের শাঁস

news paper

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭-৬-২০২৫ দুপুর ১:৪৩

47Views

ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আর এই গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে রসালো তাল শাঁসের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকেই। প্রশান্তি আর তৃষ্ণা মেটাতে তাই মানুষ ঝুঁকছে তাল শাঁসের দিকে। ফলে বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা বেড়েছে তাল শাঁসের।

বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসছেন। প্রচুর পরিমাণে ছোট তাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করে উপজেলা সদর ও জেলা শহরে সরবরাহ করছেন। এ এলাকায় দুই রকম তালের জাত দেখা যায়। একটি কালছে রঙ্গের আর একটি ধুষর হলদে বর্ণের। স্থানীয় বাজারে এক একটি গোটা তাল খুচরা ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটি তালে দুই থেকে চারটে আটি হয়। প্রতিটি আটির ভিতরে থাকে শাঁস। এসব তাল শাঁস আকৃতি ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে গাছ চুক্তি ৪’শ থেকে ১২’শ টাকায় তাল ক্রয় করছেন।

সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখাগেছে, বিভিন্ন হাট-বাজার এমনকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে তাল শাঁস। গোটা এক পিস তালের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে ছোট বড় সব শ্রেণি পেশার মানুষ তালের শাঁস কিনতে ভিড় করছেন।

উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজার, আসমা বাজার, বাউসী বাজার, রায়পুর বাজার, দশধার বাজারে তাল শাঁস কিনতে আসা ক্রেতার সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, তালের শাঁস খেতে দারুন মজা। তাই অনেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই খাচ্ছেন। কেউবা আবার পরিবারের লোকজন ও শিশুদের জন্য বাড়িতে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমি ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় এর প্রতি আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। তাই প্রতি বছরই তালের শাঁসের কি‌নে খাওয়ার চেস্টা করেন।

তাল শাঁস ক্রেতা আরিফুল ইসলাম, জামাল মিয়া, গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতি বছর গরমে তাল শাঁস কিনে খাই। নরম শাঁস খেতে অনেক ভালো লাগে। ছেলে-মেয়েরা তাল শাঁস খেতে পছন্দ করে তাই বাড়ির জন্য কয়েকটা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। আকৃতি ভেদে প্রতিটি তাল ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারের মেইন রোডে দাঁড়িয়ে ভ্যান গাড়িতে তাল শাঁস বিক্রেতা রুস্তম আলী, আসমা বাজারের নুরুজ্জামান, বাউসী বাজারের নিজাম উদ্দিনের সাথে কথা বললে তারা সাকলের সময়কে জানান, গরম সিজনে তাল শাঁসের চাহিদা সব সময়ই বাড়ে। এবার নজিরবিহীন গরমে তাল শাঁসের চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল সংগ্রহ করে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে এনে বিক্রি করছেন তারা। প্রতি পিস তাল ৪০-৫০ টাকা এবং প্রতি পিছ শাঁস বিক্রি ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে ভালোই লাভ হচ্ছে। প্রতিদিন তারা ১’শ থেকে দেড়শ তাল বিক্রি হচ্ছে। তারা অরো জানান, সারা বছরই তারা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন ফল বিক্রি করেন। পাশাপাশি প্রতি বছরই তাল শাঁস বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে তালগাছ কমে যাওয়ায় সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারা পাইকারি হিসেবে তাল কেনেন।

এ দিকে গাছ মালিকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছে ফলের সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে। তাই তালের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। তবে নতুন গাছগুলো বড় হলে এবং ফলন ধরলে এ মৌসুমি ফলের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কথা হয় উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক শামস উদ্দিন আহমেদ বাবুলের সাথে তিনি বলেন, প্রতিটি তালে আকার ভেদে ৩-৪ টি চোখ বা বিচি থাকে। সেই বিচিতে থাকে রস। তালের মিষ্টি রস খেতে শিশুরাতো বটেই সবাই বেশ পছন্দ করে। ছোট তালের বিচিতে রস বেশি থাকে। বড় হলে শাঁস শক্ত হয়ে যায়। খেতে ভালো লাগে না। সাধারণত ছোট ও মাঝারি সাইজের তাল ভালো চলে। সবাই ছোট সাইজের তাল বেশি পছন্দ করে। তাই ছোট তালের চাহিদাও অনেক বেশি। আমার পরিবারের সবাই তাল শাঁস খুব পছন্দ করে। তাই সুযোগ পেলেই তাল শাঁস কিনে নিয়ে যাই। সুমিষ্ট এ ফলটি অল্প সময়ের জন্য মেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। তালের শাঁস পানি শূন্যতা দূর করে। দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। খাবারে রুচি বাড়িয়ে দেয়। তাল শাঁসে থাকা উপকারী উপাদান লিভার সমস্যা ও রক্ত শূন্যতা দূরিকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করে। তাল শাঁস বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে ভূমিকা রাখে।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধে সাহায্য করে এ ফলটি। অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করে। তালের শাঁস গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও দূর করে। এতে রয়েছে আয়োডিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস। তাছাড়া ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তাল শাঁস। বিভিন্ন রোগের পথ্য হিসেবেও কাজ করে তাল শাঁস। ত‌বে অবশ‌্যই পরিস্কার পরিছন্নভাবে খে‌তে হ‌বে নয়‌তো ডায়েরিয়ার ঝুঁকি থাকবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, তাল শাঁস শুধু সুস্বাদু ফলই নয়। বজ্রপাত থেকে রেহাই পেতেও তাল গাছ প্রয়োজন। তাই তাল গাছ রোপণের জন্য বিশেষভাবে উদ্বোদ্ধ করা হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে।


আরও পড়ুন