চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছেলুন জোয়ার্দ্দার মারা গেছেন
প্রকাশিত: ১৪-৬-২০২৫ দুপুর ২:৩
চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন মারা গেছেন। ১৩ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। শিক্ষা অনুরাগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভারর্সিটি অফ বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গার ক্যাম্পাসে গতকাল ১৪ জুন সকাল ১১টায় নামাজে জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।
সুলাইমান হক জোয়াদ্দার সেলুনের জীবন কাহিনী :
বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন’ যাকে সবাই মেজো ভাই হিসেবেই জানতেন। যিনি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের একজন প্রাণ পুরুষ, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া সংগঠক এবং চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের বটগাছসম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন (২৯ ডিসেম্বর ২০০৮- ৬ আগস্ট ২০২৪) সাবেক এই সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (জন্ম: ১৫ মার্চ ১৯৪৬ জন্মগ্রহণ করেন ) তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের (সংসদীয় আসন ৭৯) একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০২৪ শের জুলাই আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার ফলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।
সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন মিয়ার সহধর্মিনী আক্তারি বেগম (জোয়ার্দ্দার) ও তার একমাত্র সন্তান তাবশিনা জান্নাত প্রথমা । তিনি ছিলেন মরহুম সিরাজুল ইসলামের ৭ কন্যা ও ৫ ছেলের মধ্যে মেজো। তাইতো সকলে তাকে মেজো মিয়া বা মেজো ভাই বলেই ডাকতেন । ছাত্রজীবন হতেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার পর তিনি চুয়াডাঙ্গা মহকুমার সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে চুয়াডাঙ্গা যুবলীগের সভাপতি, ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের জেলা সেক্রেটারী নির্বাচিত হন । দলের জন্য একনিষ্ঠ কর্দমক্ষতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় পরবর্তীতে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর বারবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি তাকে ঘিরে এই আবর্তিত হয়েছিল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেই ছিলেন।
তিনি চুয়াডাঙ্গা ভি.জে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাস করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে উচ্চতর শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। পেশায় ব্যবসায়ী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন) রাজনীতির সঙ্গে ও তিনি সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ছেলুন জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা রাইফেল ক্লাব, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ( দীর্ঘ ২ যুগের বেশী সময় ধরে) সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা ফুটবলের গৌরবময় সোনালী অতীত ছেলুন মিয়ার হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে থেকে অংশ নিয়ে পরাজিত হলেও প্রচণ্ড ধৈর্যের মুর্তমান প্রতীক হিসেবে তিনি রাজনীতি থেকে পিছপা হননি। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তিনি সামাজিক উন্নয়নে যে কাজগুলো করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের প্রথম বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভারর্সিটি অফ চুয়াডাঙ্গার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্মুখ সমরে চুয়াডাঙ্গার যে ৮ অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে দামুড়হুদার নাটুদা আট কবর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ, চুয়াডাঙ্গার খেলাধুলার উন্নয়নে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুর আধুনিক মানের একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ, যুব ভবন ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা সহ চুয়াডাঙ্গার সামাজিক উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
শনিবার সকাল ১১টায় ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি তে নামাজে জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে তখন কার্য সম্পন্ন করা হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক পক্ষ থেকেও বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোরদার সেলুন এমপি কে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন। সকল সংগঠনের মধ্যে ছিল জেলা জাসদের পক্ষ থেকে তৌহিদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে আবু হোসেন ও নুরুল ইসলাম মালিক ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।