সংবাদ প্রকাশের পর মীর হেলালের নির্দেশে সেই মুক্তিযোদ্ধার কবরে পুনরায় সাইনবোর্ড

news paper

সুমন পল­ব, হাটহাজারী

প্রকাশিত: ৫-৬-২০২৫ বিকাল ৬:৫

44Views

হাটহাজারীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের সাইনবোর্ড উধাও শিরোনামে দৈনিক সকালের সময়ে( অনলাইন পোট্রাল)নিউজ প্রকাশের পর  বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের নজর আসার পর তার নির্দেশে সেই স্থানে কবরস্থানের পবিত্র রক্ষায় পুনরায় সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) দুপুরের দিকে উল্লেখিত স্থানে মীর হেলালের নির্দেশে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুনরায় সাইনবোর্ডটি লাগিয়ে দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বর্তমানে হজ্ব পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করা বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। কবরের প্রতি সম্মান রক্ষা করা প্রতিটা মুমিনের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন। এরপর যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনর্জীবিত করবেন।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ২১-২২)

এছাড়াও একাধিক হাদিসে কবরের ওপর বাসা, জুতা পায়ে কবরের ওপর হাঁটা ইত্যাদি কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যার দ্বারা কবরের সম্মান প্রমাণিত হয়। 

জানা যায়, বুধবার বিকেলের দিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, হাটহাজারী পৌরসভার মীরের হাট বাজারের পশ্চিমে রেললাইনের পাশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটে শহীদ হওয়া এক অজ্ঞাতনামা ইপিআর সদস্যের সমাধিস্থলে (কবরে) লাগানো সাইনবোর্ডটির বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব নেই এবং স্থানটিতে কোরবানির হাটের জন্য আনা গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। এর আগে সমাধিস্থলের আশেপাশে বেশ কিছু দোকানও নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, মীরেরহাটের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন ‘ঝিনুক ক্লাব’-এর পক্ষ থেকে এক অজ্ঞাত ইপিআর সদস্যের সমাধিস্থলের পবিত্রতা রক্ষার জন্য “বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর, পবিত্রতা রক্ষা করুন” লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্লাবটি বিভিন্ন জাতীয় দিবসে, যেমন ১৬ই ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি ও ২৬শে মার্চ, ওই কবরে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানাত। ঝিনুক ক্লাবসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হাটহাজারীতে শহীদ অপর একজন ইপিআর সদস্যসহ দুজনের কবর পাকা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন। তারা এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও দোকানদার জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের (২০২৪) পর হঠাৎ করেই কে বা কারা ওই সমাধিস্থল থেকে সাইনবোর্ডটি সরিয়ে বা ফেলে দেয় এবং এরপর সমাধিস্থলের আশেপাশে বেশ কয়েকটি দোকান নির্মাণ করা হয়। সাইনবোর্ড না থাকায় এবং স্থানটি অচিহ্নিত হয়ে পড়ায় কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করতে আসা গ্রামের সাধারণ মানুষজন সমাধিস্থলের সামনে ও আশেপাশে গরু বেঁধে রাখছেন, যা শহীদের প্রতি চরম অবমাননাকর।

ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাকিস্তানি বাহিনীর এক অফিসারের নির্দেশে স্থানীয় আনোয়ার ও আবু তাহের লেদুসহ আরও কয়েকজন মিলে রাস্তার পাশে আনোয়ারের ভোগদখলকৃত রেলওয়ের জমিতেই তাকে দাফন করেন। দাফনের সময় তার গায়ে “ইপিআর” লেখা গেঞ্জি দেখে তিনি যে ইপিআর সদস্য ছিলেন, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হন। সেই কবরটি এখনো সেখানে বিদ্যমান।

শহীদের সমাধিস্থলের/কবরের পবিত্রতা রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেয়ায়  বীর মুক্তিযোদ্ধা  সাংবাদিক এম দিদারুল আলম দুলাল বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ হেলালসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা লাভের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই অজ্ঞাত শহীদ ইপিআর সদস্যের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় মেলেনি বা তার খোঁজে কেউ আসেনি। সম্মিলিত সামরিক বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই অজ্ঞাত শহীদের স্মৃতি রক্ষা এবং তার প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো সম্ভব হবে। 


আরও পড়ুন