ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধি ভাঙনে ঝুঁকিতে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

news paper

মজিবর রহমান, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ৪-৬-২০২৫ বিকাল ৫:৫৯

115Views

টানা প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি ব্যাহত থাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামো। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙনে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ফুলছড়ি উপজেলার সাত ইউনিয়নেই বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দেয়। নদী ভাঙনে সর্বহারা হয় নদী পাড়ের মানুষগুলো। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয় তাদের। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বাড়ি-ঘর, গাছপালা ও আবাদী জমি। সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে, উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি, কাবিলপুর গ্রামে। এছাড়াও ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকায় ভাঙনের গতি বেড়েই চলছে। বাড়ি ঘর, গাছ কেটে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন নদী পাড়ের মানুষ। এলাকার ভাঙন রোধের কাজ শুরু না হওয়ায়, চরম আতঙ্কে কাটছে প্রতিটা মুহূর্ত। হুমকি মুখে পড়েছে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাড়িয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া কয়েকটি মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক অবকাঠামো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের শিকার লোকজনের অভিযোগ, এলাকায় ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা গ্রামের বিন্দু রাণী বলেন, গত সাত দিনের ভাঙনে এই এলাকার ১০ টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। নদী ভাঙনরোধে এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এবছর আমাদের বাড়িঘরও থাকবে না। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা আসলেই এই এলাকার মানুষের মাঝে আতংক দেখা দেয়। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দু:চিন্তাও বেড়ে যায়। আমাদের দুঃখে কেউ খোঁজ নিতে আসেনা।’

কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপি রাণী বলেন, ভাঙন এলাকা থেকে বিদ্যালয়ের দুরত্ব ৫০ মিটার। বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতংকে থাকতে হয়। ভাঙনরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে দ্রুতই বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে।

উড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রতিবছর নদী ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা দেখা যায়। বিগত সময়ে নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহনের কথা শুনেছি কিন্তু পরবর্তীতে সেই প্রকল্পের কাজ কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে পারি নাই। তিনি ভাঙনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানান।  গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রক্ষায় বরাদ্দের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে।


আরও পড়ুন