চামড়ার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত সচেতন: বিসিক চেয়ারম্যান

news paper

ইউসুফ আলী বাচ্চু

প্রকাশিত: ৪-৬-২০২৫ দুপুর ৩:১৬

25Views

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সরকার এবছর যে কাজটি করেছে তা পূর্বে কোন সরকার করেনি। চামড়া নিয়ে এবার সরকার অত্যন্ত সচেতন। সোমবার বিসিক ভবনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের অফিসে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমরাও দেখেছি এই সাত আট বছর আগে একটি চামড়া ২ আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সমসাময়িক কালে আমরা কি দেখেছি খুবই কম দামে তা বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে চামড়ার একেবারে দাম নেই বললেই চলে। এটার মূল কারণ ছিল মার্কেটপ্রাইজটা একেবারেই কম। আসলে লবন দেওয়া চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা গেলে বা সংরক্ষণ করা চামড়ার যে এবারে দাম কমে গেছে তা কিন্তু না। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে কিছু র’হাইটসের চামড়ার কমেছে, যেভাবে আমাদের দেশের চামড়া অ্যাবিউজ হচ্ছে, আসলে এই জিনিসটা এরকম পর্যায়ে নাই। ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেন কাচা চামড়ার একটা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ১৩৫০ টাকা গ্রামে ১১৫০ টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়া ২২ টাকা থেকে ২৭ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাও কিন্তু কম না। এই সরকার যেভাবে চিন্তা করছেন, যে এটা গরিবের হক, এতিমের হক, এই হকটা যেন নষ্ট না হয়। তারা জাতীয় উপযুক্ত মূল্যটা পায় এজন্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে। এজন্য বিভিন্ন মিডিয়া কাভারেজের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমরা বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। ফেসবুক বুস্টিং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার, টিভির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালো একটা ভিডিও তৈরি করেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিসিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আশা করা যায় যে এ বছরে চামড়া ম্যানেজমেন্ট লবন দিয়ে সংরক্ষণের মাধ্যমে ভালো একটা ফলাফল পেতে পারি।

চামড়া শিল্পের নীতিমালা প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়ার জন্য একটি নীতিমালা আছে, আমাদের সাভারে সিপিটি আছে টেনারি গুলিতে, সিইটিপি আছে, এগুলো বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি। তাছাড়া মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা, লিল্লা বোডিং এর বিনামূল্যে লবণ দেয়া এ বছরের একটা উদ্যোগ, এই উদ্যোগ বিগত দিনে কোনদিনই নেওয়া হয়নি। এখাতে সরকার এবার বিশ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সরকার প্রয়োজন বোধে আরো হয়তো দেবে। এই ২০ কোটি টাকার লবণ সারা বাংলাদেশে যতগুলো মাদ্রাসা, লিল্লাহবোর্ডিং আছে এখানে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সারা বাংলাদেশের জেলা প্রশাসকরা লবণ সংগ্রহ করে ফেলছে। এছাড়া অনেক জায়গায় লিল্লাবাডিং ও এতিমখানায় লবণ বিতরণ করে ফেলেছে। আশা করা যায় এবার ১ কোটি ৩ লক্ষ চামড়া পাওয়া যাবে। এই তথ্য আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পেয়েছি কোরবানি যোগ্য পশুর। তবে আমরা মনে করি এখানে ৯০ লাখ অথবা কম বেশি হতে পারে। এই চামড়াগুলো সংরক্ষণ করার জন্য মাঠ পর্যায়ে যত লবণ লাগে আমরা তা সরবরাহ করব। যাতে লবন ছাড়া কোন চামড়া সংরক্ষণ করা না হয়। নিয়ম হল চামড়া ছাড়াবার পরে ভালভাবে পরিস্কার করে, লবণ দিয়ে উঁচু জায়গা সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে চামড়া সংরক্ষণ করলে চামড়ার গুনাগুন ভালো থাকবেন। এভাবে রাখলে প্রায় তিন মাসের মত সংরক্ষণ করা যাবে।

চামড়া শিল্পের রুগ্ন আছে কথাটি ঠিক না এটা একটা সামস্ট্রিক শব্দ। সবাই যদি  যার যার দিক থেকে  কাজ করে, এরপর পরিবেশের যে বিষয়গুলো আছে তাদের পক্ষ থেকেও প্রতিপালন করতে হবে। আমরাও আমাদের লেভেল থেকে চেষ্টা করছি। আমরা সরকারের কাছে জানানোর চেষ্টা করছি। আমাদের যে সক্ষমতা আছে সেটা বৃদ্ধির জন্য মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন বাজার ঠিক করা, পণ্যের বৈচিত্র করণ করা, ফিনিশ লেদার রপ্তানি করা, চামড়াযাত পণ্য রপ্তানি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করে। পণ্যের বহুমুখীকরণ, বৈচিত্র আনা, এক্ষেত্রেও কাজ করছে। 

আপনি জানেন যে বিসিক ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর যে সমস্ত কার্যক্রম চলছে সেটি জডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শুরু থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বিসিকের স্বর্ণালী যুগ ছিল। সম্প্রতি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, গার্মেন্টস হয়েছে, বেপজা হয়েছে, বিডা হয়েছে, বেজা হয়েছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে বিসিককে খুব ছোট মাইক্রো লেভেলের অথবা মজারি মানের মনে হবে। বাস্তবিক হিসাব করলে জানা যায় যে, বিসিকের অবদান জিডিপিতে অনেক। আমি এখানে দায়িত্ব পালন শুরু করেছি, গত জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ থেকে। আমি দেখলাম বিসিকে বেশ কিছু সমস্যা আছে, এর মধ্যে তাদের ঋণের সমস্যা, ঋণ পেতে সমস্যা। আমাদের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে যেমন, লবণ, লবণ চাষী যারা ঋণ পায় না, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা আছে তারা ঋণের সমস্যা ভোগ করছেন। আরেকটি বিষয় হলো যে বৃহৎ শিল্প  প্রতিষ্ঠান যেন থেকে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানে দরকারী মালামাল তাদের থেকে কেনে। আরো কিছু বিষয় হলো যেমন ধরেন ট্রেনিং এর বিষয়, শিল্প প্লট পাওয়ার, বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। তারপর রাষ্ট্রীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন পাওয়া, ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া, নারকোটিক্রের অনাপত্তি, ড্রাগের ক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়া, পরিবেশের অনুমোদন পাওয়া, অনেকগুলি রিকয়ারমেন্ট আছে। এগুলি পেতে সমস্যা হয় যদিও আমাদের অনস্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। অনস্টপ সার্ভিস এ্যাক্ট আছে ২০১৮ সালের এবং সরকারের অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে কাজ করে। 
তার পরেও ক্ষেত্র বিশেষে সমস্যা হয়। আমি যে কাজটুকু করেছি তা সংক্ষেপে বলছি, বিসিকে কিছু ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ দিয়ে থাকে। সেটা ৫ লাখ ১০ লাখ ২০ লাখ টাকা। ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের আমরা ঋণ দিয়ে থাকি, বিসিকের ঋণের কলেবর প্রায় ৪০০ কোটি মত। তাছাড়া আমাদের ১৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র আছে, এই জায়গাগুলোতে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদার ভিত্তিতে, ওয়েল্ডিং এর উপরে রেফ্রিজারেটর, মোবাইল সার্ভিসিং, এছাড়া আরো বিভিন্ন ট্রেড কোর্সে, তিন মাস ছয় মাস এক বছরের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের ট্রেনিং প্রাপ্তরা দেশেও চাকরি করছে আবার বিদেশেও কাজ করছে।

ঋণের বিষয় নিয়ে যে কাজগুলো করছি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠাকে চিঠি দিয়েছি, যাতে করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও তার আওতাধীন যে সমস্ত অনুশাসন ব্যাংক আছে বিসিকের উদ্যোক্তাদের যাতে, বিশেষ করে যারা প্লট নেয়, তাদেরকে ঋণ দেয়। আরেকটি বিষয় হলো জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য যে সমস্ত কর্তৃপক্ষ আছে যাদের কাছ থেকে উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারে। এছাড়া মার্কেটিং এর জন্য সিপিটি ও আছে, অন্যান্য আইএমইডি এবং সংস্থা আছে, তাদেরকেও আমরা অনুরোধ করে থাকি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মালামাল যাতে কেনে। এছাড়া আমরা কিছু শিল্প নিবন্ধন দিয়ে থাকি যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে সহজ হয়। এ ধরনের কাজগুলো করে থাকি যদিও এগুলো রুটিন কাজ। এছাড়া আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেছি বিশেষ করে এনবিআরে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছি, কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বায়ত্তশাসিত  প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমইউ করেছি। যাতে আমাদের উদ্যোক্তারা সুবিধা পেতে পারে। 

গার্মেন্টস শিল্প প্রসঙ্গে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, চামড়াশিল্প উন্নয়নে এখন জোর না দেওয়া হয় তাহলে আসলে এই সেক্টর দাঁড়াতে সমস্যা হবে। চামড়া শিল্প একটি সম্ভাবনামাই সেক্টর এই সেক্টরকে বাদ দিয়ে আমরা চলতে পারব না এ জন্য সরকারের অগ্রাধিকার  হচ্ছে চামড়া শিল্প। এজন্যই ট্রেনিং করানো এবং সাসটেইনেবল গোল অর্জনের চেষ্টা। ওয়ার্কারদের দেখা এবং পরিবেশের বিষয়টা মাথায় রাখা, ট্যানারী মালিকদের জন্য যে সমস্ত প্রশিক্ষণ দরকার ব্যবস্থা করা। এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে এখন কাজ করতে হবে। এগুলো বিসিকেরও অগ্রাধিকার এবং আমি মনে করি এটা শুধু বিসিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিডা, বেপজা, শিল্প মন্ত্রণালয়, গার্মেন্টস সেক্টরটা হয়তো এখন ভালো আছে হয়তো পাঁচ বছর বা ১০ বছর পরে এ অবস্থা থাকবে না কম্পিটিশন মার্কেটে। এক্ষেত্রে চামড়া শিল্প আমাদের বড় একটা সেক্টর।


আরও পড়ুন