বারহাট্টায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
প্রকাশিত: ৪-৬-২০২৫ দুপুর ১:৫৫
পবিত্র ঈদুল আযহার বাকি হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকদিন। টানা প্রায় ৪ দিন বৃষ্টি থাকায় আশানুরুপ ক্রেতা না পেয়ে হতাশায় সময় কাটাছিলেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিন ধরে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বারহাট্টায় শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে ঈদের জমজমাট বাজার।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহাকে ঘিরে রঙ বেরঙের পোশাকের সমাহারে দোকান সাজিয়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে জমে উঠেছে বেচাকেনা। সকাল থেকে রাত অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কেনাকাটায় ছন্দ ফিরে আসায় খুশি ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এরই মধ্যে পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে নতুন কাপড় কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন বিভিন্ন ছোট-বড় শপিংমল, বিপণী বিতানসহ ছোট ছোট দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারের কাপড়পট্টির বিভিন্ন বিপণী বিতান, শপিংমল, তৈরি পোশাকের (গার্মের্ন্টস পণ্য) দোকান, আসমা বাজারের বিভিন্ন বিপণী বিতান এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক বাজারের ছোট-বড় দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নতুন পোশাকে ঈদ উদযাপনে কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতারা। অপর দিকে বিক্রেতারা ক্রেতাদের বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্য পছন্দ করাতে বেঁছে নিচ্ছেন বিভিন্ন কৌশল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তরুণ-তরুণীসহ নানান বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠে উপজেলা সদরের বিপনী বিতানগুলো। পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতারা ঘুরছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইন আর মডেলের পোশাক শোভা পাচ্ছে দোকানগুলোর ডিসপ্লেতে। উপজেলা সদরের ছোট-বড় সব শ্রেণির দোকানেই নেমেছে ক্রেতাদের ঢল। ক্রেতারা ভিড় করছেন শাড়ি, থ্রিপিস, বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, পায়জামা, টিশার্টসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে। তবে পুরুষ ক্রেতার তুলনায় নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি লক্ষ করা গেছে। পোশাক ছাড়াও জুতা ও প্রসাধনীর দোকানে ভিড় বেড়েছে। অনেকে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং জুয়েলারিও কিনে নিচ্ছেন। অপর দিকে দর্জিপাড়ায় কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। দিন-রাত নিরলস ভাবে কাজ করছেন তারা।
উপজেলা সদরের গোপালপুর ও আসমা বাজারের কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বললে তারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরেই বাজারে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আসে এবং এ সময় বেচাবিক্রিও বেশি হয়। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন ডিজাইনের মালামাল সাজিয়ে রেখেছি। কিন্তু কোরবানির ঈদে পশু কেনাতেই ক্রেতাদের বাজেট থাকে বেশি তাই রোজার ঈদের তুলনায় পোশাকের বেচাবিক্রি কম হয়।
তারা জানান, এবার ঈদের পোশাক এক হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। মেয়ে শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে, লং ফ্রক ও পারর্টি ফ্রক। এছাড়াও আছে, লেহেঙ্গা ও লং কামিজ। গরমে ছেলে শিশুদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সুতি টি-শার্ট ও শার্ট এবং বিভিন্ন ডিজাইনের প্যান্ট। ঈদে তরুণদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে প্রতিবারের মতো এবারও তোলা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি।
উপজেলা সদরের বর্ষা বস্ত্র বিতানের লিটন দও, হাসিব বস্ত্রালয়ের আব্দুল গনি, খান বস্ত্রালয়ের টিটু খান, অসীম বস্ত্রালয়ের জ্যোতিষ পালের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঈদের আর মাত্র ২ দিন বাকি। গত তিন দিন ধরে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে বিক্রি কম হয়েছে। ক্রেতারা আসতে পারেননি। বিকেলের দিকে ক্রেতার সংখ্যা বেশী হয়।
তারা বলেন, আমাদের ঈদ কালেকশনের তালিকায় এমব্রয়ডারি থ্রি পিস ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দামের আছে। টাঙ্গাইল শাড়ি ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, জামদানী ১০০০ টাকা ১২০০ টাকা, কাতান ১৫০০ টাকা থেকে ১০০০০ টাকা দামের রয়েছে। বর্তমান বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। শাড়ি, থ্রি-পিস, ছিট কাপড় সব কিছুরই দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কম হচ্ছে ঠিকই কিন্তু একেবারে যে বিক্রি হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আমাদের হাতে ২ দিন আছে। দিন ভালো থাকলে আশা করছি ভালো বিক্রি হবে।
উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারের জননী গার্মেন্টসের পলাশ মোল্লা, খান গার্মেন্টসের টিটু খান, ভাই ভাই গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী রুবেল জানান, ঈদকে ঘিরে আমরা বিভিন্ন ধরনের নতুন পোশাকের কালেকশন রেখেছি। যেমন- নাইরা ১৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা, গারারা ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা, সারারা ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা দামের আছে। এছাড়াও ছোটমনিদের জন্য রয়েছে প্লাজু, স্কার্ট, পরি ড্রেস, কামিজ। এগুলো ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দামের রয়েছে। গত দুই দিন বিক্রি ভালোই হয়েছে। আশা করি ঈদের আগে বিক্রি আরও বেশি হবে।
অপরদিকে কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত টেইলার্সদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, নিম্ন চাপের কারণে গত কয়েকদিন বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকায় কাপড় সেলাই করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে গতকাল থেকে লোডশেডিং কিছুটা কম থাকায় মনে আশা জেগেছে সঠিক সময়ে কাজ ডেলিভারি দিতে পারবো।
উপজেলা সদরের যশমাধব গ্রাম থেকে কেনাকাটা করতে আসা জুঁই, শেফালী, হোসনা পারভীন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি পোশাকে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা বেড়েছে। বাচ্চাদের জন্য কাপড় কিনেছি, প্রতিটি পণ্য আগে হাজারের নিচে হলেও এবার হাজার টাকার ওপরে কিনতে হচ্ছে। এবার মার্কেটে এসে শান্তি পাচ্ছি না। গত বছর পোশাকের দামের চেয়ে এ বছর পোশাকের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।
কাপড়, জুতার পাশাপাশি ঈদের অন্যতম আকর্ষণ গহনা। কসমেটিকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রুপার ওপরে মিনাকারির কাজ, কৃত্রিম মুক্তা, পুঁতিরস মালা, কানের দুল, চুড়ি, আয়না, কাপড় ও সুতার তৈরি বিভিন্ন ধরনের গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। বেচাকেনাও হচ্ছে ভাল বলে জানান বিক্রেতারা।
বড় বড় মার্কেট, বিপণী বিতানের মতোই ফুটপাতেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা চলছে জানিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, মার্কেটের জিনিস আর আমাদের জিনিসের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আমাদের দোকান ভাড়া লাগে না। তাই আমাদের এখানে মালামালের দাম অনেক কম। রোজা শুরু থেকেই ভালো বিক্রি হচ্ছে। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে এবং বিক্রিও ভালো হচ্ছে। একই চিত্র রয়েছে শহরতলীর বাজারগুলোতে, শহরতলীসহ গ্রামের হাট বাজারগুলোতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত লোকজন ভিড় করছে, শহড়তলীসহ গ্রামের হাট বাজারগুলোতে স্বল্পদামে ঈদের কেনাকাটা করতে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান বলেন, উপজেলা সদরের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলছে। কেনাকেটা নির্বিঘ্ন ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।