রফিকুল আমীন: মাইন্ড হ্যাকার নাকি ঠাণ্ডা মাথার প্রতারক?
প্রকাশিত: ৪-৬-২০২৫ দুপুর ১:৫২
রফিকুল আমীন—নেটওয়ার্ক মার্কেটিং জগতে এক আলোচিত নাম। কেউ তাকে ‘প্রভাবশালী উদ্যোক্তা’ বলেন, কেউ বা সরাসরি ‘প্রতারক’। কিন্তু সবচেয়ে রহস্যময় বিষয় হলো—সমালোচকদেরও অনেকে তার প্রতারণা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
তার কথার ধরণ, উপস্থাপনার কৌশল ও মনস্তত্ত্ব বোঝার ক্ষমতা এতটাই প্রবল যে, একবার তার সংস্পর্শে এলে অনেকেই যেন যুক্তির জালে আটকে পড়েন।
ডেসটিনির উত্থান ও পতন
২০০০ সালের শুরুতে “ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড”-এর মাধ্যমে বিকল্প ব্যবসায়িক মডেল চালু করে তিনি সাড়া ফেলেন। হাজার হাজার মানুষ এতে যুক্ত হন। পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়, এবং হাজারো মানুষ হারান তাদের সঞ্চয়।
তবুও থেমে থাকেননি রফিকুল। জেলখানার ভেতর থেকেই শুরু করেন নতুন প্রজেক্ট—“কো-শেয়ার”। ‘গ্ল্যাক্সি ওয়াইড মার্কেটিং’ নামে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে ১ লাখ টাকায় শেয়ারহোল্ডার এবং ৫ লাখ টাকায় ডিরেক্টর বানানোর প্রলোভন দেখান।
প্রজেক্ট না প্রতারণা?
প্রজেক্টের নাম ছিল আকর্ষণীয়—“রি-সার্কুলেটিং অ্যাকোয়া কালচার সিস্টেম (RAS)”। পরিকল্পনায় ছিল সামুদ্রিক মাছ চাষ, পর্যটন, বারবিকিউ, এমনকি মাছের শরীরের চাপ মাপার জন্য ডাক্তার নিয়োগ!
কিন্তু বাস্তবতায় আসেনি এক ফোঁটা জল কিংবা একটি ফান্ড—সবটাই ছিল কল্পনার ঘোর।
তার প্রভাব ও কৌশল
প্রাক্তন বিনিয়োগকারীদের মতে, রফিকুল একজন ‘মানসিক কারিগর’। কেউ তাকে প্রশ্ন করলে, তিনি এমনভাবে উত্তর দেন যে মূল প্রসঙ্গই হারিয়ে যায়।
রাজনীতি ও পুনরাবৃত্তি
সাজা ভোগের পর মুক্ত হয়ে ‘আম জনগণ পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার আগের বিনিয়োগকারীদের এবার তিনি ব্যবহার করছেন ‘কর্মী’ হিসেবে। এতে অর্থ ফেরত চাওয়ার দাবি কমে গেছে, অনেকে বুঝতেই পারছেন না যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।
রফিকুল আমীন কি একজন প্রগতিশীল উদ্যোক্তা, যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে থেমে যাননি? নাকি তিনি এক ‘মাইন্ড হ্যাকার’, যিনি মনস্তত্ত্ব ও কথার জোরে গড়েছেন আরেকটি প্রতারণার সাম্রাজ্য? বিশ্লেষকদের মতে, তার পরিকল্পনাগুলো যতই আকর্ষণীয় হোক, সেগুলোর বাস্তব রূপ প্রায় নেই বললেই চলে।নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের ইতিহাসে রফিকুল আমীনের নাম লেখা থাকবে—কিন্তু সেটা গৌরবের জন্য, না প্রতারণার, তা বলবে সময়। প্রশ্ন হলো—তিনি কি কখনো জবাবদিহি করবেন? আর রাষ্ট্র কি পারবে এই ‘চাতুর্যময়’ মানুষটিকে মোকাবিলা করতে?