ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অচলাবস্থা: রফিকুল আমিনই কি মূল বাধা?
প্রকাশিত: ২-৬-২০২৫ দুপুর ৪:১৪
আলোচিত কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড আবারো সংবাদ শিরোনামে। এক সময়ের বহুমাত্রিক ব্যবসায়িক বিস্তারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের আশার আলো জাগানো প্রতিষ্ঠানটি আজ গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রফিকুল আমিন-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং প্রতারণার অভিযোগের পাহাড়। বিনিয়োগকারীদের মতে, তিনিই বর্তমানে কোম্পানি পুনর্গঠনের প্রধান অন্তরায়।
ট্রি-প্ল্যানটেশন প্রকল্প: কোটি টাকার প্রতারণা
ডেসটিনির সবচেয়ে বিতর্কিত প্রকল্প "ট্রি-প্ল্যানটেশন"-এ মিথ্যা গাছের হিসাব দেখিয়ে প্রায় ১,৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে দাবি করা হয় ১ কোটি ৭৪ লাখ গাছের অস্তিত্ব, কিন্তু তদন্তে এসব দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এতে প্রায় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ
দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—ডেসটিনির হিসাব থেকে ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা অনিয়মিতভাবে স্থানান্তর করা হয়। এই অর্থে রফিকুল আমিন ও তার পরিবারের নামে জমি, ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি এবং বিদেশে অর্থ পাচারের প্রমাণ মেলে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও অভিযোগ
বর্তমানে ডেসটিনির ৪৬ লক্ষ বিনিয়োগকারী ও ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। হাইকোর্টের ১৭৩/২২ রায়ের আলোকে বোর্ড গঠিত হলেও তার কার্যক্রম খুব ধীরগতির। বিনিয়োগকারীদের দাবি—রফিকুল আমিনই কোম্পানি পুনর্গঠনের প্রধান বাধা। তার নেতৃত্বাধীন প্রতারণামূলক কাঠামোর কারণেই কোম্পানি আজ এই অবস্থায়।
অনলাইনে গুজব ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র
একাধিক বিনিয়োগকারীর অভিযোগ, রফিকুল আমিন গং অনলাইনে প্রচার চালিয়ে কোম্পানির পুনর্গঠনের পথে বাধা দিচ্ছে এবং হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও তাদের অভিযোগ।
বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
বর্তমান বোর্ডের কিছু সদস্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগ উঠেছে, তারা রফিকুল আমিনের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে কোম্পানিকে আবারো প্রতারণার চক্রে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রধান দাবি:
দ্রুত কোম্পানি পুনরায় চালু করা
হাইকোর্টের ১৭৩/২২ রায় কার্যকর করা
রফিকুল আমিন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
৪৫ লক্ষ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক তদারকি
প্রশাসনের নিরবতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
এত বড় পরিসরের ইস্যু সত্ত্বেও হাইকোর্ট নিযুক্ত বোর্ড বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো স্পষ্ট ঘোষণা বা অগ্রগতির খবর মেলেনি। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগকারীদের চাপ বাড়ছে, এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে আরও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ডেসটিনির ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে—স্বচ্ছতা, আইনের শাসন এবং দায়িত্বশীল প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর।