বারহাট্টায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

news paper

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২-৬-২০২৫ দুপুর ৩:৪৭

68Views

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা চার দিন ধরে বৃষ্টি ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমে যাওয়ায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন খামারিরা। আবহাওয়ার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পশুর হাটগুলোতে জমে উঠেছে বেচাকেনা। ক্রেতারা হাটে ঘুরে ঘুরে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানির পশু দেখছেন এবং দাম যাচাই করে কিনছেন।

সরেজমিনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর গরু, ছাগল উঠছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। ছোট বড় সকল বয়সী মানুষ গরু ও ছাগল কিনতে সকাল ১১ টার পর থেকেই হাটে ভিড় করছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে হাটে চলছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। বাজারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ছোট ও মাঝারি আকারের গরু ও ছাগলের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা দাম যাচাই বাছাই করে তাদের পছন্দ মতো বাজেটে কোরবানির পশু কিনছেন। এবছরেও ছোট ও মাঝারি আকারের পশুর চাহিদা বেশি। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে তারা বলছেন, এ বছর কোরবানি হাটে পশুর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তবুও ঈদ যেহেতু সন্নিকটে তাই দামাদামি কথা মাথায় বেশি না রেখে দাম একটু চড়া হলেও পছন্দের পশুটি কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

উপজেলা সদরে গত শনিবার পশুর হাট পরিচালনাকারী ইজারাদার ও খামারিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদের আর ৪ দিন বাকি আছে। এই সময়ে পুরোদমে হাট-বাজার জমতে শুরু করার কথা। কিন্তু চারদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে হাটে পশু যেমন কম আসছে, তেমনি ক্রেতার সমাগমও কম। ফলে গরু বেচাকেনা কমে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হাটের ইজারাদার ও খামারীরা।

উপজেলা সদরের গোপালপুর এলাকা থেকে কোরবানির পশু কিনতে আসা শাহজাহান মিয়া, গোলাম আজাদ, বাউসী ইউনিয়নের রহিস উদ্দিন, শামসুল হক, সাহতা ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ও চিরাম ইউনিয়নের নিজাম উদ্দিন, শামাল মিয়ার সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, গত শনিবার বৃষ্টির মধ্যে বাজার ঘুরে গরু পছন্দ করা খুব কষ্ট দায়ক ছিল। দিনের যে অবস্থা সকালে বৃষ্টি হওয়ার পর এখন রোদের দেখা মিললো। হাটে বড়, মাঝারি ও ছোট গরুসহ পর্যাপ্ত কোরবানির পশু আছে। গতবারের তুলনায় এবার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি চাইছে বিক্রেতারা। ব্যাপারীরা গরুর দাম ধরে রেখেছে, দাম কামাচ্ছে না। আর কিছুক্ষণ দেখে গরু কিনে ফেলবেন তারা।

উপজেলা সদরের আরেকজন ক্রেতা বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে মাঝারি আকারের গরু খুঁজছি। দামে মিলছে না, তাই কিনতে পারছি না। গতবারের তুলোনায় এবার গরুর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। আজ আর গরু কেনার ইচ্ছে নেই। মঙ্গলবার বারহাট্টা বাজার আছে তাই কয়েকটা গরু দেখে তাড়াহুড়ো করে গরু না কিনেই ফিরে যাচ্ছি।

ঠাকুরাকোনা এলাকা থেকে দশটি গরু নিয়ে সকালে হাটে এসেছেন গরু ব্যাপারী মোশারফ হোসেন তিনি বলেন, সদরের বাজারে গত শনিবার দশটা গরু লইয়া গেছিলাম কিন্তু বৃষ্টির লাইগ্যা সারাদিনে একটাও বেচতে পারি নাই। আইজ সকাল থেকে যে বৃষ্টি নামছিল ভাবছিলাম আইজও শনিবারের মতো হইবো কিন্তু সকাল ১০ টার পরে রোদ উঠছে। ৪০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা দামে দুইটা গরু বিক্রি করছি। বাকিগুলো লইয়্যা বিপদে আছি ক্রেতারা খালি দরদাম করে। প্যাক-কাদায় বাজার ভরে গেছে। এইরহম দুর্ভোগের মধ্যে আছি যে কওনের মতন না।

একই কথা বললেন উপজেলার মাছিয়ালা গ্রাম থেকে আসা খামারি মজিবুর মিয়া তিনি বলেন, খামার করতে বিভিন্ন সময় ব্যাংক লোন নিয়েছি। পশু পালন করতে আমাদের যা খরচ হয়েছে, বাজারের যা অবস্থা তাতে আমরা খরচ পুষিয়ে তুলতে পারছিনা। অন্যদিকে আমরা ব্যাংক থেকে নেওয়া লোন শোধ করতে পারছি না। বৃষ্টি যদি না হয় তবে আজ ও আগামী বাজারে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো।

হাটের আয়োজক ও হাট মালিকরা বলছেন, ইজারায় টাকা বেশি দিয়ে হাট কিনতে হয়েছে তাদের। যার ফলে অন্য বছরের চেয়ে এবার পশু প্রতি সামান্য কিছু টাকা এবার বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে এটা অবশ্যই সকলের সাধ্যের মাঝে এবং এতে ক্রেতারা কেউ অসন্তুষ্ট নয় বলেও জানান হাট কর্তৃপক্ষের লোকজন। তারা জানান, সুন্দর পরিবেশে ও নিরাপদে গরু কেনাবেচা হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে কোরবানির পশু রয়েছে। প্রতিটা হাটের পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমাদের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো অসুস্থ গরু কেউ যেন বিক্রি করতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে।

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, কোরবানির হাটে ক্রেতা- বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সড়কগুলোতেও নিরাপত্তার জন্য টহল টিম রয়েছে। এদিকে পশুর হাটগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন