কুরবানির শিক্ষা গুরুত্ব ও তাৎপর্য
প্রকাশিত: ২৯-৫-২০২৫ দুপুর ৪:২৬
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা, যেখানে ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা হিজরি বর্ষপঞ্জির ১০ই জিলহজ্জ ঈদুল আজহার দিন আদায় করতে হয়, এটি শুধু পশু জবাই নয়, বরং এটি হচ্ছে আল্লাহর প্রতি নি:স্বার্থ ভালবাসা,আনুগত্য ও আত্তত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত । কুরবানির মধ্যে লুকিয়ে আছে বহু মুল্যবান শিক্ষা ও তাৎপর্য।
কুরবানির পরিচয়: কুরবানুন আরবি শব্দটির অর্থ- নৈকট্য লাভ, উৎসর্গ,ত্যাগ ইত্যাদি। ব্যাপক অর্তে যে সমস্ত বস্তু দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হয়, তা জবেহকৃত বস্তু হোক বা অন্য কোন দান খয়রাত তাকেই কুরবানি বলে। ( ইমাম রাগিব)
ইমাম আবু বকর জাসসাস রা: বলেন মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনার্থে কৃত প্রত্যেক নেক আমলকে কুরবানি বলে। ইসলামি পরিভাষায়- নির্ধারিত নিয়মে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তারই নামে জবাই করাকে কুরবানি বলে।
কুরবানির ফজিলত : কুরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক মহৎ ইবাদত। এতে তাক্বওয়া প্রকাশ পায় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। হযরত আয়েশা রা: এর বর্ণনা মতে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন কুরবানির দিনে কুরবানি অপেক্ষা মানুষের আর কোন আমল আছে যা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়? কুরবানির সেই পশু রোজ হাশরে তার সকল শিং ও পায়ের হ্মুর নিয়ে হাজির হবে, কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগন অতি আহলাদের সাথে খুশির সাথে তোমরা কুরবানি করো,তিরমিযী।
অন্য হাদিসে এসেছে কুরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটা করে নেকি দেয়া হয়।
কুরবানির শিক্ষা:
কুরবানি আমাদের শিখায় আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্য ও ত্যাগের মানসিকতা, হযরত ইব্রাহিম আ: ও হযরত ইসমাইল আ: এর ঘটনা থেকে আমরা শিখি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় জিনিসও ত্যাগ করতে হতে পারে। এটি আত্মগ্যাগ,ধর্য্য,তাক্বওয়া এবং আল্লাহর উপর পুর্ণ ভরসার শিক্ষা দেয়। পাশাপাশি কুরবানি সমাজে সহানুভূতি, সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলে।কুরবানি আমাদের মনকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্য দৃড় করে তোলে। নিয়তে শুদ্বতা ও পরিপক্কতা আমল কবিলের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, যা কুরবানির অন্যতম শিক্ষা। আল্লাহ বলেন আপনি বলুন আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং মরণ সবকিছু আল্লাহর জন্য। (সুরা আন আম -১১২)
কুরবানি একটি হ্রদয়ের ইবাদত যেখানে পশু নয় ত্যাগ হয় অহংকার স্বার্থ আর প্রবৃত্তির দাসত্ব। এটি মানুষকে শেখায় কেবল রক্ত নয়, চাই হ্রদয়ের নি: সার্থ সমর্পণ।কুরবানির মাধ্যমে মুসলিম জীবনে জেগে উঠে আত্মত্যাগ, আল্লাহ ভীতি ও মানবতার এক অনন্য সৌন্দর্য।
লেখক মাওলানা গোলাম মোস্তফা, সহযোগী অধ্যাপক তালশহর ডিগ্রি ফাজিল মাদ্রাসা।