শাহ আলী থানায় অভিযোগ দায়ের

মিরপুর-১ মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর মানবপাচার সিন্ডিকেট

news paper

মনিরুজ্জামান মনি

প্রকাশিত: ২৮-৫-২০২৫ দুপুর ১২:২৪

617Views

টাকা নামক সোনার হরিণ খুঁজতে মানুষ পাড়ি জমায় দুর প্রবাসে । ভবিষ্যত একটি ভালো জীবনের স্বপ্ন নিয়ে জমি জায়গা, সহায় সম্বল সব বিক্রি করে গচ্ছিত টাকা গুলো তুলে দেয় বিভিন্ন এজেন্সির কাছে, কখনো বা দালালের মাধ্যমে চলে যায় মানব পাচারকারী চক্রের হাতে । কেউ কেউ চড়াই উৎরাই পার করে বিদেশের মাটিতে পৌছালেও ভাগ্য সবার সহায় হয়না।

সোনার হরিণ ধরা না দিলেও কারো কারো উপর নেমে আসে অত্যাচার ও নির্যাতনের খড়গ। তাদেরকে বিদেশের মাটিতে জিম্মি করে, নিয়মিত অত্যাচার ও নির্যাতন করে দেশে থাকা পরিবারের লোকজনের নিকট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা । তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে মিরপুর-১ নম্বর মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সপ্তম তলায় খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে।

শাহ আলী থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,মোঃ আল আমিন(৪৮),  পিতা- মোঃ ইস্রাফিল মোল্লা, মাতাঃ আকলিমা খাতুন, ঠিকানাঃ  গ্রামঃ কার্পাসডাঙ্গা, ডাকঘরঃ কার্পাসডাঙ্গা, থানা- দামুরহুদা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা। তার ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ মোল্লাকে সংসারে অভাব অনটনের জন্য বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তের এক পর্যায়ে জনৈক রিপন (৩০), পিতাঃ অজ্ঞাত, মাতাঃ অজ্ঞাত, ঠিকানাঃ গ্রামঃ সুবলপুর, ডাকঘরঃ কার্পাসডাঙ্গা, থানা- দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা এর  সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম চিতলার মোঃ বকুল মিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুর-১, শাহআলী, ঢাকা তে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে  গত ২৭ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে কিরগিজিস্তানে পাঠানোর কথা হয়। তখন সে আমাকে বলে কিরগিজিস্তানে তার অনেক কোম্পানি ও এজেন্টের সাথে যোগাযোগ আছে এবং সে অনেক লোক সেখানে পাঠিয়েছে। আমি তার কথায় সরল বিশ্বাসে আমার ছেলেকে কিরগিজিস্তানে পাঠানোর জন্য আলোচনা করি। তখন সে বলল আমার ছেলেকে ফ্যাক্টোরির কাজে পাঠাবে। যার জন্য সে আমাকে  নিয়ে যায় মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্স এর সপ্তম তলায় মোঃ শাহাবুদ্দিন খান ওরফে শিহাব, স্বত্ত্বাধীকারি- খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর নিকট। এক পর্যায়ে তার সাথে কথা হয় যে আমার  ছেলেকে সর্বমোট- ৪,৮০,০০০/- (চার লক্ষ আশি হাজার) টাকায় কিরগিজিস্তানের ফ্যাক্টরি ভিসায় পাঠাবে। ৪,৮০,০০০/- (চার লক্ষ আশি হাজার) টাকার প্রথমে পাসপোর্ট এর সাথে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার), কিরগিজিস্তান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেখিয়ে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা নেয়। পরবর্তীতে  সে আমাকে কিরগিজিস্তান এর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে ভিসা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে কিরগিজিস্তানে না পাঠিয়ে আমাদের অমতে জোর পূর্বক উজবেকিস্তানে পাঠানো কথা বলে আর যদি আমরা না পাঠাই তাহলে আমাদের প্রদানকৃত সকল টাকা বাদ বলে হুমকি দেয় এবং বলে সে উজবেকিস্তানে টুরিষ্ট ভিসায় পাঠিয়ে সেখানে কাজের ব্যবস্থা করে দিবে। আমরা আর কোন উপায় না পেয়ে তার কথায় ভরসা করে রাজি হই। সে আমার ছেলেকে গত ২৭/০৮/২০২৪ইং তারিখে ২,১০,০০০/- (দুই লক্ষ দশ হাজার) টাকা নিয়ে উজবেকিস্তানে টুরিষ্ট ভিসায় পাঠায়। উজবেকিস্তানে যাওয়ার পর আমার ছেলেকে দীর্ঘ ১ মাস রাখে কিন্তু সে কাজও দিতে পারেনি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলো ভিসাও রিইস্যু করতে পারেনি।  খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল মালিক মোঃ শাহাবুদ্দিন খান শিহাবের পরামর্শে পার্শ্ববর্তী দেশ তাজাখিস্তানে তার লোকদ্বারা নিয়ে যায়। সেখানে সু-দীর্ঘ ৯ মাসের উপরে বিভিন্ন স্থানে তারা রেখে দেয়। তাকে কোন প্রকার চাকুরীর ব্যবস্থা বা কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পারায় আমার ছেলের খাওয়া ও থাকা বাবদ প্রতিমাসে ২০-২৫ হাজার টাকার মতো আমার নিকট থেকে নিচ্ছে। আমি টাকা না পাঠাইলে আমার ছেলের খাওয়া থাকা বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি বার বার আমার ছেলেকে দেশে নিয়ে আসার জন্য বললেও মোঃ শাহাবুদ্দিন ও মোঃ বকুল মিয়া আমার কথায় কর্ণপাত না করিয়া কালক্ষেপন করিতেছে। আমার ছেলে অবৈধ থাকার কারণে গত ২ (দুই) মাস যাবৎ উক্ত দেশের পুলিশ আমার ছেলেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করছে। যাহা সইতে না পেরে যে কোন মুহুর্তে আত্মহত্যা বা যে কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এর পরেও  মোঃ শাহাবুদ্দিন ও মোঃ বকুল মিয়া কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বরং আমি বার বার তাদের দারস্ত হলে তারা আমার নিকট উলটো আমার নিকট আরো ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবি করতেছে এবং আমাকে নানা প্রকার হুমকিধামকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি আর কোন উপায় না পেয়ে থানায় হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে  সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি। 

অনুসন্ধানে মিরপুর শাহআলী থানাধীন মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়  ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম তলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য এজেন্সীর  অফিস, যার বেশিরভাগই অবৈধ দালালদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, বিদেশে লোক পাঠালেও তাদের নেই কোন সঠিক কাগজপত্র, অভিযুক্ত খান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে গিয়ে দেখা যায় , একটি নাম সর্বস্ব পত্রিকার স্টিকার দিয়ে সুন্দর করে সাজানো, জানা যায় রেজিস্ট্রেশন বিহীন  নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাইনবোর্ড টানিয়ে তার আড়ালে মানব পাচার করছে  সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি ।

পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক পরিচয় দানকারী, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর শাহাবুদ্দিন ওরফে শিহাব  এর ছত্রছায়ায়, বিদেশে কাজ দেওয়ার নামে টুরিস্ট ভিসায় লোক পাঠাই সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি । বিদেশে পাঠিয়ে তাদেরকে নির্যাতন করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতি মোটা অংকের টাকা ।

এবিষয় জানতে অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন ওরফে শিহাব নিকট ফোন করা হলে, তিনি সবকিছু স্বীকার করে নিলেও , আব্দুল্লাহ নামের ঐ ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে যে টাকা লাগবে তার অর্ধেক টাকা ছেলের বাবার কাছ থেকে নিয়ে দিতে বলেন ।

শাহাবুদ্দিন খান ওরফে শিহাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের  শেষ নাই, সাংবাদিক ও পুলিশের উপস্থিতিতে তার অফিসে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জসীম নামে একজন ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বছরে পর বছর ঘুরছেন বলে জানান, এছাড়া আরো কয়েকজনের টাকা ও পাসপোর্ট নিয়ে রেখে দিয়েছে বলে তথ্য এসেছে ।

এ বিষয়ে জানতে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা, শাহ আলী থানা পুলিশের এসআই রুবেল হোসেন বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে বাদী এবং অভিযুক্তদের সাথে কথা হয়েছে, অভিযুক্তরা একদিনের সময় নিয়েছে । যদি তারা ছেলেটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না নেয়, বিষয়টি  ফায়সালা করে না দেয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।


আরও পড়ুন