অবৈধভাবে সরকারি গাছ কর্তন, তদন্ত প্রতিবেদনে গড়িমসি

news paper

তাপস কুমার রায়, তারাগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪-৫-২০২৫ রাত ৯:৪৭

125Views

অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাঁটায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।   টেন্ডার বা বন বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই ওই কর্মকর্তা তার অফিস চত্বরের থাকা ৮/১০টি বিভিন্ন প্রজাতির সরকারি গাছ কেটেছেন। এ ঘটনায় দৈনিক সকালের সময় পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ সহ স্থানীয়রা মানববন্ধন করলে- ১৯/০৩/২৫ইং জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তদন্তের পর বিভাগীয় পূনঃতদন্ত হয় ২২/০৪/২৫ইং। গত ২২ এপ্রিল রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ডেপুটি চিপ ইপিডিমিওলজিস্ট ডা. রফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিভাগীয় পূনঃতদন্তকালে স্থানীয়জন ও গণমাধ্যম কর্মীরা কর্তনকৃত গাছের গোড়ার অবশিষ্ট অংশ বিশেষ (প্রমাণাদি) তদন্ত কর্মকর্তাদের সরেজমিনে (অফিস চত্বর) ঘুরিয়ে দেখান এবং গাছ কাটার প্রিণ্ট ছবি সহ লিখিত স্বাক্ষী দেন। 

স্থানীয়রা বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চত্বরের প্রধান ফটক ও মূল ভবনের পিছনে থাকা মেহগনি, কাঁঠাল, জাম্বুরা ও আম সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে কাটা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাছগুলো কেটে বিক্রি করেন। আমরা তো প্রত্যক্ষদর্শী, আমাদের সামনে গাছ কেটেছে এবং বিক্রি করেছে।
প্রসঙ্গতঃ তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস চত্বরের গাছগুলো কাটার ঘটনায় টেন্ডার বা বন বিভাগের পরামর্শ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ ও উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুজ্জামান  নিশ্চিত করেন। এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে অফিস সাক্ষাৎকারে গাছ কাটার বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি ভুল বসতঃ গাছগুলো কেটেছেন বলে জানান। আবার বিভাগীয় পূনঃতদন্তকালে স্থানীয়জন ও গণমাধ্যম কর্মীরা তদন্ত কমিটিকে কর্তনকৃত গাছের দৃশ্যমান গোড়া সহ গাছ কাটার সমস্ত তথ্য প্রমাণ দেখান। 
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম তারাগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছে ব্যাকডেটে গাছ কাটার অনুমোদন পত্র চেয়েছিলেন। উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা, চাকরিবিধি ও নৈতিক মূল্যবোধ থেকে ব্যাকডেটে গাছ কাটার অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে তিনি গাছ কাটার প্রমাণ লোপাট করতে কর্তনকৃত গাছের গোড়ার অবশিষ্ট দৃশ্যমান অংশ কেটে ফেলেন। অবৈধ ভাবে গাছ কাটার সাথে অফিসের আরো কয়েকজন স্টাফ জড়িত আছেন।
অথচ গাছকাটার পুনঃতদন্তের বিষয়ে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই বলেন- তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি, হেড অফিসে পাঠিয়েছি। তদন্তে গাছকাটার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে, গোপনীয়তার স্বার্থে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। 
তদন্তের বিষয়ে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বক্তব্যের বরাদ দিলে (গাছকাটার সত্যতা পাওয়া যায়নি) তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. রফিকুল আলম বলেন, আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পুনঃতদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। এতে স্পষ্ট যে ডেপুটি চিপ ইপিডিমিওলজিস্ট ডা. রফিকুল আলমের নেতৃত্বে হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক হয়েছে।
সেই মর্মে, জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও পরিবেশ রক্ষায় তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাছকাটার বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে স্ব-দপ্তর (প্রাণিসম্পদ দপ্তর) ব্যতিত অন্য কোন দপ্তর দিয়ে উচ্চতর তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।
উল্লেখ্য যে, এর আগে, ‘শোভা বর্ধনের নামে সরকারি গাছ কাটলেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা’, 
 "প্রকল্পের টাকা লুটপাটের অভিযোগে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি’ এবং "অবৈধভাবে সরকারি গাছ কেটেও বহাল তবিয়তে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা" শিরোনামে গত ৮ মার্চ, ১৮ মার্চ এবং ২১ এপ্রিল দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায়  সংবাদ প্রকাশ হয়।


আরও পড়ুন