বৃষ্টিতে বারহাট্টার জনপদে প্রশান্তির ছোঁয়া
প্রকাশিত: ১২-৫-২০২৫ দুপুর ২:২২
দেশ জুড়ে বয়ে চলা টানা কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে হাঁপিয়ে উঠেছিল জনজীবন। ভ্যাপসা গুমোট আবহাওয়ায় জনজীবনে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তীব্র তাপদাহের পর অবশেষে বারহাট্টার প্রকৃতি জুড়ে নেমে এলো স্বস্তির পরশ। দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির।
গ্রীষ্মের খরতাপে ক্লান্ত বারহাট্টার জনপদে রবিবার বিকেলে হঠাৎ কালো মেঘের আড়াল থেকে নেমে আসা বৃষ্টি ও ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শে তাপদগ্ধ জনজীবনে নেমে আসে স্বস্তি। অথচ বৃষ্টি নামার আগে রবিবার দুপুরেও তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করছিল। বিকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির সাথে শীতল হাওয়া চলে সারা রাত জুড়ে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। বৃষ্টির পরশে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন। স্বস্তির বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষদের মুখে ফুটেছে হাসি। কাজের ফাঁকে কেউ কেউ বৃষ্টিতে গা ভিজিয়ে নিচ্ছেন আবার কেউ বাড়ির ছাদে উঠে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে উপভোগ করেছেন বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতির পরশ।
গতকাল বিকাল থেকে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিকালে আচমকা বৃষ্টিতে বিভিন্ন দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পথচারী। শিশু, কিশোর, মধ্য বয়সী, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীকে আবার প্রতীক্ষিত বৃষ্টিতে ভিজতেও দেখা গেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ, ভিডিও আপলোড, সেলফিসহ বৃষ্টির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে প্রকাশ করেছেন স্বস্তির অনুভূতি। এছাড়াও সরা রাত থেমে থেমে বৃষ্টি ও সকালের ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার মাঠ-ঘাট ও নিচু রাস্তায় পানি জমছে।
উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজার এলকার কলেজ পড়ুয়া রাকিব, রকি, নাঈম, আসমা বাজার এলাকার ঝন্টু, রাজন নামের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, 'বেলা ৪টার দিকে আচমকা আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে বাতাস শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। তখন অনেক মানুষ বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে আসে। আমরাও এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে রাস্তায় চলে এসেছি।'
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের শারমিন, পপি, নূপুর ও মনসুর আহমাদ মহিলা কলেজের জিন্নাত, নিঝুম এবং বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) ববি, চম্পাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, বিকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অনেক দিন গরমে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি পর হঠাৎ বৃষ্টিতে যে অনুভূতি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বাড়ির আঙিনায় কিছুক্ষণ ভিজেছি। আরও ভিজতে ইচ্ছে করছিল। তবে বজ্রপাতের ভয়ে ঘরে ঢুকে গেছি। পরে আর বের হতে সাহস পাইনি।
মৌজ আলী নামে এক রিকশাচালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, 'এই কয়েক দিন অনেক গরম পড়ছিল। রিকশা চালানো ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। আজ বৃষ্টি হলো। বৃষ্টিতে ভিজেই রিকশা চালাচ্ছি, শরীরটাকে একটু ঠান্ডা করে নিচ্ছি। আজকের অনুভূতিটা অন্যরকম। যদি বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে গরম কমবে। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ শান্তি পাবে।'
উপজেলা সদরের বৃ-কালিকা এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা নীলুফার ইয়াসমিন বলেন, অনেকদিন অপেক্ষার পর আজ একটু শান্তি পেলাম। তীব্র গরমে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আজকের বৃষ্টি যেন প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে।বৃষ্টি প্রতিটা ফোঁটায় জন জীবনে স্বস্তির নিশ্বাস হয়ে এসেছে।
ঝর্ণা আক্তার নামে আরেক শিক্ষিকা বলেন, কয়েক দিনের তীব্র গরমে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। এবার বৃষ্টিতে পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ায় খুবই ভালো লাগছে। বাচ্চারাও খুব আনন্দ করছে। সত্যিই এ বৃষ্টিটা স্বস্তির ও প্রশান্তির।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এই অবস্থায় আগামী ৪-৫ দিন বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।