বগুড়ায় সাংবাদিক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সমাবেশ ওসির প্রত্যাহার দাবী

news paper

সেলিম সরকার, বগুড়া

প্রকাশিত: ৫-৫-২০২৫ দুপুর ৪:৫৩

275Views

বগুড়ায় ফেসবুকে বাউল গানের কয়েকটি লাইন পোস্ট করার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকিরের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বগুড়ার সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজ। সোমবার দুপুর ১টায় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় এ কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচী থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়াহেদ ফকিরের নিঃশর্ত মুক্তি ও বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।

গত শনিবার রাতে শহরের সাতমাথা এলাকা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে তাঁকে আটক করা হয়। সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দীনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁকে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা থেকে আটক করে প্রথমে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেয়, পরে সেখান থেকে নেয়া হয় বগুড়া সদর থানায়। রাতভর তাকে থানা হাজতেই আটক রাখা হয়। পরদিন রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বাদী হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। পরে শাজাহানপুর উপজেলার খরনা কর্মকারপাড়ার পলাশ কুমার মহন্ত নামের সাধারণ এক হিন্দু ব্যক্তিকে দিয়ে রোববার রাতে মামলা করানো হয়।

বগুড়া সদর থানায় আটক থাকাবস্থায় সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকির দাবি করেন, তিনি ধর্ম নিয়ে কিছু লেখেননি। যে লেখা নিয়ে এত বিতর্ক, সেটি একটি প্রচলিত বাউল গানের কলি। তাঁর ভাষায়, “আমি ব্যক্তিগত রোষানলের শিকার। একটি মহল আমার পেছনে লেগেই আছে। এবার তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে।”

এদিকে, মামলা কিংবা ওয়ারেন্ট ছাড়াই একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বগুড়ার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার সকালে বগুড়ার সদর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে ওয়াহেদ ফকিরের জামিনের আবেদন করা হলে, আদালত তাঁর জামিন না মঞ্জুর করেন। এরপর দুপুর একটার দিকে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের ব্যানারে বগুড়ার সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজ মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদের অবসান হলেও বগুড়া সদর থানার ওসি ফ্যাসিবাদকে লালন করে চলেছেন। কোনো মামলা কিংবা ওয়ারেন্ট ছাড়াই সাংবাদিক ওয়াহেদকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম মইনুদ্দীন চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। এ সময় তাঁরা বলেন, সাংবাদিক ওয়াহেদ জুলাই বিপ্লবের একজন স্টেক হোল্ডার। তিনি পুলিশের নানা অপকর্ম নিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছিলেন। সে কারণেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ধুয়া তুলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পেছনে মূলত: দুর্নীতিবাজ পুলিশ ও দুর্নীতিবাজ কতিপয় সাংবাদিক জড়িত। সমাবেশ থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকিরকে নিঃশর্ত মুক্তি ও বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম মইনুদ্দিনকে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক প্রতীক ওমর এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বগুড়া প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, বিএফইউজের সাবেক সহকারী মহাসচিব মহসিন আলী রাজু, মীর সাজ্জাদ আলী সন্তোষ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংসদ (বাসাস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক এফ শাহজাহান, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, জাসাস এর সভাপতি মমিনুর রশীদ সাইন, বগুড়া প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজ মণ্ডল, সিনিয়র সাংবাদিক ইনছান আলী, রেজাউল হক বাবু, বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের সমন্বয়ক তানভীর আলম রিমন প্রমুখ।


আরও পড়ুন