চবির আইন বিভাগের অনুষ্ঠানে জুলাই গণহত্যার সমর্থনকারী শিক্ষক রুমান শুভ, ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনার ঝড়
প্রকাশিত: ৫-৫-২০২৫ দুপুর ৪:২২
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদ ও এ কে খান ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে 'ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎ পুনঃকল্পনা' কে সামনে রেখে ৭ম এ কে খান মেমোরিয়াল আইন বক্তৃতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, গণহত্যাকে সমর্থন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মাদকের আসর বসানোসহ বেশকিছু অভিযুক্ত আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ'র উপস্থিতি নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।
রোববার ( ৪মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এ কে খান অডিটোরিয়ামে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আইন বিভাগের আঙিনায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভর পুনর্বাসন জবাব চাই।
শত শত শিক্ষার্থী নিপিড়নের সরাসরি অভিযুক্ত যেই রোমান প্রতিদিন ডিপার্টমেন্টে আসছে। এতে
আইন বিভাগের শিক্ষকরাও তার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সাথে উদাসীন আচরণ করেই যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে সে আজও সপ্তম একে খান স্মারক বক্তব্যে অংশগ্রহণ করে। তবে কি আইন বিভাগে ফ্যাসিস্ট রোমানকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে?
মো. রুমান রহমান নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন,
এই শিক্ষকের সাথে কোথাও দেখা না হোক! ২০২২ সালে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েরকে শিবির ট্যাগ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলো। জোবায়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের মেসেঞ্জার গ্রুপে থাকায় ওই গ্রুপের সবাইকে মানসিক টর্চার করা হয়েছিলো। শিবিরের সাথে কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীকে শাটলে নাশকতার ভুল অভিযোগ এনে বহিষ্কার করেছিলো এই শিক্ষক।
এখন তাকে গুরুত্বপূর্ণ সভা/সেমিনারে দেখা যায়! সমাবর্তনে সাথে সাথে লীগ পুনর্বাসন ভালোই চলছে এই প্রশাসনের! আইন বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর রোমানকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ছেড়ে দেবে নাহ।
সৈয়দ আহমেদ সিয়াম লেখেন, ক্যাম্পাসে আইন বিষয়ক একটা প্রোগ্রামে চিফ জাস্টিস এসেছে। সেই প্রোগ্রামে স্টেজে রোমান স্যারের মতো নিষ্ঠুর মানুষও ছিলো৷ রোমান স্যারের মতো মানুষ এখনো সদর্পে প্রোগ্রামে থাকছে। এই রোমান স্যার আমাদের সাথে কী কী করেছে তা কারোরই ভুলে যাবার কথা না। আমি জাস্ট স্পিচলেস দম বন্ধ হয়ে আসছে। জুলাই মরে গেছে। আমরা ভিসি-প্রক্টরের গায়েবানা জানাজা পড়বো।
সরওয়ার মাহমুদ লেখেন, চিফ জাস্টিসের সাথে এক মঞ্চে একই কাতারে এমন লোকও আছে যাদের হাতে পরোক্ষভাবে তরুয়া, ফরহাদ এবং মাহবুবের কপাল ফাটা রক্ত লেগে আছে।
গতবারের মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলনে গণহত্যাকে সমর্থনের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আইন অনুষদের দেয়ালে দেয়ালে রোমানকে অপসারণের পোস্টার লাগানো এবং অবস্থান কর্মসূচি থেকেডিন বরাবর রোমানের অপসারণের দাবি জানিয়ে দরখাস্ত দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২১ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ড এবং ২৪ এর গণহত্যাকে সমর্থন দেওয়া, ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে কাজ করা, ছাত্রদের নিজের বাসায় ডেকে মাদকের আসর বসানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত জীবন ও আইন বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, ছাত্রদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা, ছাত্রলীগকে মদদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা, ক্লাস পরিচালনাকালীন সময়ে এবং নিজ অফিসকক্ষে ডেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেওয়া, ক্লাসের মধ্যে ছাত্রদের টার্গেট করে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং সহকারী প্রক্টর থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাম্পাসের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে শিক্ষক রোমান শুভর বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ'র সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ড. বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম. জাফর উল্লাহ তালুকদার, আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. রকিবা নবি, এ কে খান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সচিব জনাব সালাহউদ্দিন কাসেম খান এবং ট্রাস্টি জনাব এ. এম. জিয়াউদ্দিন খান।