বালাগঞ্জ হসপিটাল; ২বছরেও মেলেনি প্রসাশনিক অনুমোদন, সেবা বঞ্চিত লাখো মানুষ

news paper

বালাগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০-৪-২০২৫ বিকাল ৫:৮

195Views

ইমারত নিয়ে যান, শুধু সেবার মান ভালো করে দেন। চোখের সৌন্দর্য্যে শরীরের ব্যথা কমবে না। ইমারত রেখে ফ্লোরে সেবা নেয়া লাগে..! সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা ফ্লোরে শুয়ে এমন মন্তব্য করছেন রোগীরা। ২বছর আগে ৭তলা ভবনের কাজ শেষ হলেও উপজেলা সদরের অবস্থিত ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া হাসপাতালটি প্রশাসনিক অনুমোদন না মেলায় পূর্বের নিয়মেই চলছে সেবা। 
বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। জোড়াতালি দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। শুধু চিকিৎসক সংকটই নয়, রয়েছে নার্স সংকট, প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সংকট, টেকনেশিয়ানের সংকট, অফিস স্টাফ, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরও সংকট। মূলত চারজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীর ভিড় থাকলেও, নেই ডাক্তার..! সেবা দিতে বসানো হয় মাস তিনেক ট্রেনিংয়ের নার্সদের। সরকারি হাসপাতালের এমন পরিস্থিতে বাধ্য হয়ে পল্লী চিকিৎসকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বেশিরভাগ রোগীরা। তবে সেখানে গিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন তারা। সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারা ও বেশি লাভের আশায় রোগীদের নিম্নমানের ওষুধ দেয়ায় সারছে না রোগ। আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া হাসপাতালটির কাজ ২০২৩ সনে সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না মেলায় পূর্বের নিয়মেই চলছে সেবা। হাসপাতালে ১৪ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও কাগজে কলমে আছেন ৯জন বাস্তবে আছেন ৪জন, দীর্ঘদিন ধরে ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেপি দাসকে রোগী দেখাসহ প্রশাসনিক কাজকর্ম ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে ব্যস্ত থাকতে হয়।আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মামুন আহমেদ ভর্তিরত রোগীদের সেবা দেয়ার পর জরুরী বিভাগে আসা জটিল রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে হাসপাতালের একাধিক পদটিও শূন্য রয়েছে। রয়েছে নার্স সংকট। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্ট জনিতনিত রোগে ভর্তি হওয়া এক রোগী মেঝেতে (ফ্লোরে) শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সেবার মান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত বড় বিল্ডিং রেখে ঝড়- বৃষ্টির দিনে নিচে (ফ্লোরে) পাতলা কাপড়ের উপরে চিকিৎসা নিচ্ছি। সীট নাই, ডাক্তার নাই, নার্স নাই কে দেখবে আমাদের। ৭ তালা বিল্ডিং দিয়ে কি হবে যদি নিচে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আমি আসলাম ঠান্ডা জনিত কারণে, আমি আছি নিচে শুয়ে.! সফিক মিয়া বলেন, ৯ দিন ভর্তি, ডেইলি একবার মামুন ডাক্তারে দেখে যান। ডাক্তার নাই, নার্স নাই রোগ সারাতে এসে উল্টো রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। আনোয়ার হোসেন নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা বলেন, সকালে একবার ডাক্তারের দেখা মিলে, নার্স একজন থাকে। কোনো সমস্যা হইলে ডাকলে আয়। পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাজনগরের রামপুর থেকে আসা জোসনা বেগম বলেন, একজন ডাক্তার দিয়ে কীভাবে ভর্তির রোগীরা সেবা পাবে। ভর্তিরত রোগী বেতাহুঞ্জার রাবিয়া বেগম বলেন, আমরা চাই নতুন হাসপাতলের উঠতে। এখানে ছাদ ছুঁয়ে পানি পরে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেপি দাস বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় রোগীদের নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করতে পারছি না। কোনো উপায় না পেয়ে ফ্লোরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আমার কাছে সর্বোচ্চ ৩১টি সীটের বরাদ্দ আছে। এর বাড়তি ঔষুধ ও খাবারও বণ্ঠন করতে পারছি না’।


আরও পড়ুন