৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ!
অবশেষে সেই পাসপোর্ট পরিচালক মামুন বরখাস্ত
প্রকাশিত: ২৯-৪-২০২৫ দুপুর ২:১
অবশেষে দুর্নীতির অভিযোগে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক সেই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বরখাস্ত করলো সরকার। চাকরি জীবনে মামুনের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে দৈনিক সকালের সময়ের বিশেষ প্রতিনিধি মো. আলমগীর হোসেন ও ষ্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান রনজু ২০২৪ সালের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (৯ পর্ব) প্রকাশ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। জানা যায়, ওই সময় তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মামুন। আমাদের টিম আব্দুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ি টাংগাইল জেলার গোপালপুরের শাখারিয়াসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান করে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার বাড়ী, ফ্ল্যাট ও প্লটের সন্ধান পায়- যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের- মামুনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়টি আমলে নেয় দুদক, শুরু হয় তদন্ত। বেরিয়ে আসে তার ৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের ফিরিস্তি। এরমধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির ১১/৩ নম্বর রোডে ৭৭ নং বার্ড়িতে স্ত্রীসহ নিজের নামে ২২৫১ বর্গফুটের একটি বিশাল ফ্ল্যাট কিনেছেন। ৫০, ভুতের গলি ধানমন্ডিতে কিনেছেন ১১৫০ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট।বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৪ নম্বর রোডের এফ ব্লকে রয়েছে ১১০০ বর্গফুটের মাঝারী সাইজের একটি ফ্ল্যাট। পশ্চিম ঢাকার হাজারীবাগ চরকঘাটায় সিকদার রিয়েল এস্টেট থেকে কিনেছেন ১৪০০ বর্গফুটের বড় সাইজের ২টি ফ্ল্যাট। শুধু কি তাই, নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ২২৩ নং হোল্ডিং-এর বহুতল ভবনে গ্যারেজসহ ১৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। মোহাম্মদপুরের কাটাসুর হলি হাসিনা নামের ৭ তলা ভবনের গ্যারেজসহ ১১০০ বর্গফুটের আরো একটি ফ্ল্যাট। মোহাম্মদপুরের চাঁদ হাউজিংয়ে বি- ব্লকে আছে ১১০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট।
আরো আছে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর ৪০/৩ এ ১১০০ বর্গফুটের ৩য় এবং ৫ম তলায় দুটি ফ্ল্যাট। আব্দুল্লাহ আল মামুনের সম্পদের ফিরিস্তির এখানেই শেষ নয়, ঢাকার মোহাম্মদপুরের আউট প্লানের ৮ নম্বর রোডের ১০৭ নম্বর প্লটেও আছে তার জমি। কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুরে ০.১৮৩ অজুতাংশ নাল জমিরও মালিক তিনি। এতো গেল সম্পদের হিসাব। অস্থাবর সম্পদের মাঝে রয়েছে কারি কারি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. আগারগাঁও শাখায় ৩টি একাউন্টে আছে বিপুল পরিমাণ টাকা। আলীকো ইন্সুরেন্সে জমা আছে ৩,৫৫,০০০ এবং ২,৪৪,৬৪,০০০ টাকার বীমা কিস্তি।
দুদকের তদন্ত চলাকালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে গত বছরের শেষদিকে সিলেট কার্যালয়ে বদলি করে। অত:পর দুদকের তদন্তে দুই কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুই কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সই করা প্রজ্ঞাপনে রোববার (২৭ এপ্রিল) এ বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বতি জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এর চার্জশিট চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে গৃহীত হয়।সেহেতু আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৩৯ (২) এর বিধি মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, দুই কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুই কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন দাখিল করা সম্পদ-বিবরণীতে এক কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। তবে দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, দুই কোটি ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য শাস্তিযোগ্য করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া তিনি দুই কোটি ৮১ লাখ ২ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন এর প্রতিক্রিয়া জানতে তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।