চৌগাছায় চড়ক পুজায় উৎসব
প্রকাশিত: ১৩-৪-২০২৫ রাত ৯:৫২
যশোরর চৌগাছায় ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দুদের অন্যতম আরেকটি ধর্মীয় উৎসব চড়ক পূজা সম্পন্ন হয়েছে। চৈত্র মাসের শেষ দিনে খেজুর গাছের খেজুর পাড়ার মধ্য দিয়ে তারা এই পূজার উৎসব সম্পন্ন করেন। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে উপজেলার আদিবাসীরা এই পূজা উপলক্ষে উৎসবে মেতে ওঠেন।
জানা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে চড়ক পূজা। প্রতি বাংলা সনের চৈত্র মাস এলে তাদের চড়ক পূজার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসব পালন করলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক প্রসারে উৎসবটি পালন করেন। বৃহস্পতিবার তাদের দীর্ঘ একমাসের নিরামিষ খাওয়াসহ নানা ধর্ম কর্ম পালন শেষে বিকালে চলে খেজুর গাছের খেজুর ভাঙ্গা উৎসব। চৌগাছা থানার পূর্ব পাশে আদিবাসী মহল্লার শত শত নারী-পুরুষ এমনকি উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ খেজুর গাছের এই খেজুর ভাঙ্গা কর্মযজ্ঞ দেখতে আসেন। বিকেল পাঁচটার দিকে খেজুর গাছের গোড়াই দীর্ঘ সময় তারা নানা ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পূর্ণ করে অন্তত পাঁচজন সন্ন্যাসী গাছে উঠে পড়েন। গাছের কাটাকে তারা ভয় না পেয়ে উঠে যান খেজুরের ওই গাছের মাথায়। এরপর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ওই সকল সান্ন্যাসী খেজুর গাছের মাথায় কর্মযজ্ঞ শেষ করে নিচে নেমে আসেন।
চৌগাছা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা দুষ্টু সরদারের ছেলে সাধু সৌরভ সরদার জানান, তাদের এই সাধু সংখ্যা দেড় শতাধিক। তারা চৈত্র মাস পড়ার সাথে সাথে পরিবার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তারা দীর্ঘ একমাস নিরামিষ খেয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যান। আজ বৃহস্পতিবার সকলে বিকেল চারটার দিকে মহল্লায় একটি খেজুর গাছের নিচে উপস্থিত হন এবং রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেন।
আদিবাসী মহল্লার গৃহবধূ সুচিত্রা সরদার জানান তাদের ১২ মাসের ১৩ পূজার মধ্যে চড়ক পূজা অন্যতম। চৈত্র মাস এলে আমাদের ঘরে ঘরে উৎসবের বন্যা বয়ে যায়। আমাদের মহল্লার দেড় শতাধিক ছেলেরা সন্ন্যাসী সে যে এই পূজায় অংশ নেয়। তারা দীর্ঘ এক মাস শুধুমাত্র নিরামিষ খেয়ে জীবন যাপন করেন। আজকে খেজুর ভাঙার মধ্য দিয়ে তাদের নিরামিষের কর্মযজ্ঞ এবং ধর্মীয় উৎসব সম্পন্ন হল।
চড়ক পূজা পরিচালনায় থাকা আদিবাসী মহল্লা বাসিন্দা নিমাই সর্দার জানান, খেজুর ভাঙার মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘ একটি মাসের ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। খেজুর গাছে ওঠা সন্ন্যাসী ছেলেরা অত্যন্ত সাহসী এবং ধর্মীয় কর্মযজ্ঞের প্রতি মনোযোগী। তারা অন্তত ৫০ ফুট উঁচু খেজুর গাছে উঠে পূজার কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে।
এদিকে একাধিক সনাতন ধর্ম অবলম্বীরা জানান চড়ক পূজা তাদের অন্যান্য পূজার মতোই
ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। উপজেলার আদিবাসীরা এই উৎসবটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করাই তাদেরকে আমরা সাধুবাদ জানাই।