ভাসান চর নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র, উত্তাল হাতিয়া

news paper

হাতিয়া সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৩-৪-২০২৫ বিকাল ৫:১৬

151Views

সরকারি গেজেট  ভূক্ত নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ৫ নং চর ঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত "ভাসান চর‌" নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা বাসীর গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে হাতিয়া বাসীর পক্ষ থেকে সভা সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।‌ গঠন করা হয়েছে হাতিয়া ভাসান চর‌ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ । ভাসান চরের মাটি  হাতিয়া বাসীর ঘাঁটি,  ঠেঙ্গার চর ভাসান চর‌, আমার মাটি আমার ঘর , ইত্যাদি শ্লোগানে উত্তাল হাতিয়া দ্বীপ। নোয়াখালীর  হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে উঠে নতুন একটি চর  "ভাসানচর "।  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন (মরহুম ) প্রথমে চরটি পরিদর্শনে এসে চরের কিছু অংশ পানিতে ভাসমান দেখে নামকরণ করেন ভাসানচর । কিন্তু ওই চরের পূর্ব নাম ছিল জালিয়ার চর। এর পাশে আরেকটি চর আছে নাম ঠেঙ্গার চর। এটি ও হাতিয়ার অংশ।‌হাতিয়া ভাসান চর‌ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা অধ্যাপক হারুন অর রশিদ শামীম জানান,  এসকল চর সংলগ্ন নদীতে এক সময় অনেক ডাকাতি হতো এবং চরে জলদস্যু দের আস্তানা ছিল। ওই সময় ডাকাতির সকল মামলা হাতিয়া থানায় করা হতো। কারণ সন্দ্বীপ নিকটবর্তী হওয়ায় যখন ভূক্ত ভোগীরা সন্দ্বীপ থানায় মামলা দায়ের করতে যেতো তখন সন্দ্বীপ থানা থেকে বলা হতো এটা হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত। তাই আপনারা ( ভূক্ত ভোগীরা) মামলা করতে হলে হাতিয়া থানায় মামলা করতে হবে। ওই সময় তারা কোন ভাবেই এটি সন্দ্বীপ এর বলে দাবি করেনি এবং করতে চাইনি।   পরে হাতিয়া উপজেলা প্রশাসন ওই চরের মৌজার নকশা তৈরি করে ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু হঠাৎ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ভাসান চরে রোহিঙ্গা শরণার্থী দের কে আশ্রয় দিবে।‌  রোহিঙ্গাদের কথা শুনে ওই সময় হাতিয়া বাসীর মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হলে ও মানবিক কারণে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে কেউ বিরোধীতা করেনি। এদিকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা যখন এখানে বসবাস শুরু করে  তখন দেশে বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে ভাসান চর‌ নামটি। নতুন ভবন নির্মাণ, রাস্তা ঘাট নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল থেকে শুরু করে  ওই চরের সকল উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নোয়াখালী জেলা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় হাতিয়া উপজেলার অংশ হিসেবে। সকল নির্মাণ সামগ্রী ও নেয়া হয় হাতিয়া থেকে।  ওই  সময় প্রচুর কষ্ট  করতে হয়েছে হাতিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে। পরবর্তীতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতি এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার ৫ নং চর ঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচর,  শালিক চর , চর বাতায়ন,  চর মোহনা , চর কাজলা, কেওড়ার চর এর  মৌজা সমূহ এবং জে এল নম্বর সমূহ যথাক্রমে ৮৫, ৮৬ ,৮৭, ৮৭ ,৮৯, ৯০ নিয়ে  "ভাসান চর" থানা গঠন করা হয়। যা ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনে প্রকাশিত হয়। নোয়াখালীর ভাসান চর‌ থানা পুলিশ সুপার নোয়াখালী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।  ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কার্যক্রম ও শুরু করা হয় নোয়াখালীর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে।     ‌ ‌                      নোয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, ভাসানচর নোয়াখালী জেলার মধ্যে জেগে ওঠা একটি চর। ১৯৯৮ সালে ওই চরে বনবিভাগ বনায়ন শুরু করে। তখন থেকেই এখন পর্যন্ত ভাসান চরে বনায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে  নোয়াখালী জেলা ‌বনবিভাগ। বর্তমানে চরটির আয়তন    ৭২১ বর্গকিলোমিটার   ।   এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয় । গত ৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে   ঢাকাস্থ হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতি ডাঃ প্রফেসর জাহিদুল আলম জাতীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভাসান চর‌ একটি মীমাংসিত বিষয় । এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত। অথচ সন্দীপের পক্ষ থেকে  ভাসান চর‌ কে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাওয়ার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা আমরা হাতিয়া বাসী  কোনভাবেই মেনে নেব না। আমরা শান্তি পূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি আইনী লড়াই চালিয়ে যাব।  তিনি আরো বলেন,   একটি মীমাংসিত বিষয় কে সামনে এনে সন্দ্বীপ এর পক্ষ থেকে আঞ্চলিক বৈষম্য এবং সংকট সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে । হাতিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন বলেন,  সন্দ্বীপ এলাকা ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার একটি পরগনা বা প্রশাসনিক থানা ছিল। এটি ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত হাতিয়ার সাথে সংযুক্ত সংসদীয় এলাকা যার নেতৃত্ব দিয়েছে হাতিয়া বাসী। অথচ  গত ৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা ভাসান চর কে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত দেখিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।  এ নিয়ে হাতিয়া বাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভাসান চর‌ যাতে হাতিয়া থেকে কেড়ে নিতে না পারে সেই জন্য হাতিয়া বাসীর উদ্যোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী ও হাতিয়া উপজেলায় সভা সমাবেশ মানব বন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ভাসান চর‌ হাতিয়ার ই অংশ দাবি করে একটি পোস্ট দিয়েছেন এবং বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন।এক ই দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন হাতিয়ার কৃতি সন্তান জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা কারী মূল হাই নাঈম।নোয়াখালী জেলার        হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাসান চর‌ 
 কে  চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সাথে সংযুক্ত করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে হাতিয়া উপজেলায় অবস্থান ধর্মঘট , মানববন্ধন , সভা  সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আন্দোলন চলমান রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হাতিয়া দ্বীপ সমিতি ও হাতিয়ার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন ও মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।  এক ই দাবিতে চট্টগ্রামে হাতিয়া বাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদীতে ও একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।


আরও পড়ুন