ফুলবাড়ীতে ২ ফিট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা মেয়ে চাঁদনী আক্তারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় গরিব বাবা-মা

news paper

উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী

প্রকাশিত: ২৭-৩-২০২৫ দুপুর ৪:২০

155Views

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি মিয়া পাড়া নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার(১৪)। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামনাকৃতির) উচ্চতা ২ ফিট ৮ ইঞ্চি। নানা প্রতিবন্ধকতা কে উপেক্ষা করে লেখা পড়া চালিয়ে গেলেও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাবা-মা। যতই দিন যাচ্ছে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ততই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে।

উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামের মোঃ চাঁদ মিয়া ও রত্না বেগম দম্পতির কন্যা চাঁদনী আক্তার তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। ছাত্রী হিসেবে একেবারেই খারাপ না, লেখাপড়ার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ থাকায় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো নিয়মিত স্কুলে যায় সে।

চাঁদনীর বাবা চাঁদ মিয়া ও মা রত্না বেগম জানান, জন্মের সময় চাঁদনী আর দশটা বাচ্চার মতো সুস্থ সবল ছিল। জন্মের কিছু দিন পরে তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। অভাব অনটনে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তার বাড়ন্ত কমে যায় পরবর্তীতে সুস্থ হলেও আশানুরূপ উচ্চতা হয়নি। তাঁরা আরও জানান,মেয়েটা এখনও পর্যন্ত খুব নাজুক একা একা কিছুই করতে পারেনা খাওয়া-দাওয়া গোসল,পোশাক পরিধান সহ সবকিছু আমাদেরকে করে দিতে হয়। একা স্কুলে যেতে পারেনা প্রতিবেশী সহপাঠীদের সাথে পাঠাতে হয়। আমরা না থাকলে সে কেমন করে চলাফেরা করবে, ভবিষ্যতে কি হবে একা কি করবে মেয়েটাকে নিয়ে সেটাই আমাদের একমাত্র দুঃশ্চিন্তা।

চাঁদনী আক্তারের সহপাঠী দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মনিরা খাতুন জানান,আমি চাঁদনী কে প্রতিদিন আমার বাই-সাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাই। কোন কারণে আমার একদিন যাওয়া না হলে সেদিন তারও যাওয়া হয় না। আর নাহলে সেই দিন তার বাবা-মা তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আনা করতে হয়।

চাঁদনী আক্তার জানান,স্কুল খোলা থাকলে মনিরা আন্টির বাই সাইকেলে চড়ে যাই। কোন কারণে আন্টি একদিন না গেলে আমারও সেই দিন যাওয়া হয় না। আমার স্কুলের সহপাঠী,স্যার ম্যাডাম সবাই আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। বাবা দীন মজুরি করে কোনমতে আমাদের সংসার চলে। আমার লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার খুব ইচ্ছে তাইতো স্কুলের উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজিবর রহমান জানান, চাঁদনী উচ্চতায় দুই ফিট আট ইঞ্চি হত্তয়ায় তার বাবা-মা তাকে নিয়ে সব সময় দুঃশ্চিন্তা করেন।পরিবারের একজন সদস্য প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারটিকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করা হয়, এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। আমরা সব সময় চাঁদনীর সফলতা কামনা করি।

শিমুলবাড়ি মিয়া পাড়া নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, নাজমা বেগম জানান, চাঁদনী নামের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ওই শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।সে উচ্চতায় দুই ফিট আট ইঞ্চি তার বাবা একজন দীন মজুর। অন্য শিক্ষার্থীর চেয়ে আলাদা হত্তয়ার পরও সে নিয়মিত স্কুলে আসে,এবং লেখা পড়ার প্রতি তার আগ্রহ আছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে সে নিয়মিত উপবৃত্তি পেয়ে আসছে। উপবৃত্তির পাশাপাশি চাঁদনী কে আরও কিছু সহায়তা করা গেলে ভালো হত। চাঁদনী পড়ালেখা করে নিজেই প্রতিষ্ঠিত হোক এটা আমাদের প্রত্যাশা।


আরও পড়ুন