বোয়ালমারীতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হল কথিত মাদক ব্যবসায়ীর ঘর-বাড়ি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে লিটন
প্রকাশিত: ২৮-১২-২০২৪ দুপুর ১১:৫০
বোয়ালমারী উপজেলার বানিয়াড়ী গ্রামে একটি বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়াগেছে। গত ২০ ডিসেম্বর গ্রামের মোঃ লিটন মোল্যার বাড়িতে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ এ হামলায় অংশ নিয়ে লিটনের বসত ঘরের সমস্ত মালামাল,রান্না ঘর,টয়লেট,বাড়ির চারপাশের টিনের বেড়া ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বলে জানাগেছে। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হামলার কারণ সম্পর্কে বাদী ও বিবাদী পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ লিটন মোল্লা জানান,তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যাক্ত করে আসছিল গ্রামের মৃত শামসেল শেখের ছেলে মিরাজ শেখ। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মিরাজ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা লিটনের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এ ছাড়াও লিটনের পরিবার ধর্মীয়ভাবে কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী। সে মোতাবেক সপ্তাহে একদিন তার বাড়িতে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। একারণে গ্রামের বাসিন্দাদের একটি অংশ তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। এসব নিয়ে বিরোধের জের ধরেই গ্রামের প্রভাবশালী মোঃ লিয়াকত হোসেন,পান্নু শেখ ও ইলিয়াস শেখের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে লিটন মোল্লার বাড়িতে হামলা করে নজিরবিহীন তান্ডব চালায়। হামলাকারীরা লিটনের বসত ঘরের টিনের বেড়া,শোকেইচ,বৈদ্যুতিক মিটার সহ অন্যান্য আসবাব পত্র কুপিয়ে,পিটিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি টয়লেটের প্যানও। লিটন জানান,তার বাড়ির চার পাশের রঙিন টিনের বেড়া,ঘরের দরজা-জানালা হামলাকারীরা খুলে নিয়ে যায়।লুটে নিয়ে যায় আরো বেশ কিছু মূল্যবান মালামাল। লিটন বলেন ঘটনার একদিন আগে বিবাদীরা কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে। পরের দিনই তারা আমার বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দেয়। ঘটনার পর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তারা আমাকে গ্রামছাড়া করতেই এমন ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে। লিটনের স্ত্রী মাহমুদা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,ঘটনার সময় শিশু সন্তানকে নিয়ে বাথরুমে পালিয়েছিলাম।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পাষন্ডরা বাথরুমের দরজা ভেঙে আমাদের মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা চায়না আমরা গ্রামে বসবাস করি। আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? লিটনের মা সুফিয়া বেগম বলেন,আমার ছেলে নিরাপরাধ। তার স্ত্রীকে মিরাজ আজে-বাজে কথা বলে। এর প্রতিবাদ করা কি অন্যায়? লিটন সুফী তরিকার লোক। কোন অন্যায় কাজের সাথে নেই। তবে মাঝে-মধ্যে একটু-আধটু সিদ্ধি সেবন করে। এরজন্য কি তাকে মেরে ফেলতে হবে,ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিতে হবে? আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই। অপরদিকে বিবাদী পক্ষের দাবি,লিটন মোল্লা পেশাদার মাদক কারবারি। সে নিজে যেমন মাদক খায় তেমনি বেচা-কেনাও করে। তার কারণে গ্রামের যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। অনেক সতর্ক করার পরও সে কোন কর্ণপাত না করায় এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সমাজ বিরোধী কাজের জন্য গ্রামের প্রতিটি মানুষ তার উপর ক্ষুদ্ধ। ধর্ম চর্চার নামে লিটনের বাড়িতে গান-বাজনা আর গাঁজার আসর বসানো হয়। এ কারণে মসজিদে নামাজ আদায় করা যাচ্ছিলনা।
এলাকার মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি বাহাদুর মোল্লা,স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওঃ হাসমত আলী,লিটনের মামলার বিবাদী লিয়াকত হোসেন বলেন,বানিয়াড়ি গ্রামটি এখন মাদকের অভয়ারণ্য। এর জন্য দায়ী লিটন। সে কারো বাধা নিষেধ মানেনা। উল্টো প্রতিবাদকারীদের হুমকি ধমকী দেয়। গ্রামের প্রায় প্রতিটি যুবকই আজ নেশাগ্রস্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই গ্রামবাসীর সর্ব সম্মত সীদ্ধান্তে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে উত্তেজিত কিছু ছেলে-পেলে লিটনের বাড়ি ভাংচুর করলেও তার কোন মালামাল লুট করেনি। তার বাড়ির সব আসবাবপত্র তার শশুর পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জামাল মোল্লা বলেন, লিটনের কিছু দোষ-ত্রুটি আছে এটা যেমন সত্য তেমনি তার ঘর-বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে- সেটাও সত্য। এর বাইরে কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম রাসূল বলেন, বানিয়ারির ঘটনায় একটি দরখাস্ত আমি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।