ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে হতাশ রায়গঞ্জের কৃষকরা

news paper

সাইদুল ইসলাম আবির, রায়গঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭-১১-২০২৪ দুপুর ২:২৪

64Views

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে উপজেলার কৃষকদের মাঝে হতাশাও দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে কৃষক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ, সার, ও কীটনাশকসহ সেচের জন্য ডিজেল ক্রয় করাসহ নানান কারণে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে।

ফলে তারা খুব একটা লাভবান হতে পারবেন না। কৃষকের অভিযোগ, সরকার তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না কেনায় কখনই ন্যায্যমূল্য পান না। তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়,  ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষি থেকে ধান কিনতে চায় না খাদ্য বিভাগ। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্গাচাষিদের নাম তালিকাভুক্ত না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। চাল কেনায় খাদ্য বিভাগের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

অভিযোগ করে চাষীরা আরো জানান, তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য এবারেও পাবেনা অথচ কম মূল্যে ধান কিনে ব্যবসায়ীরা চাল বানিয়ে সরকারি খাদ্য গুদামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা এবারও হাতিয়ে নেবে। আর সাধারণ কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গেলে খাদ্য কর্মকর্তারা নানান অজুহাত দেখিয়ে ধান ক্রয় করতে অনীহা প্রকাশ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। 

শুধু তাই নয় প্রতিবারই খাদ্য বিভাগ ধান চাল সংগ্রহ অভিযানের নামে গল্প বানায় কিন্তু প্রকৃত কৃষক আর বর্গাচাষিদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে না বলেও অভিযোগ সাধারণ কৃষকদের।

রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শষ্য ভাণ্ডার  খ্যাত এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে ১৯ হাজার ২শ' ৩০ হেক্টর জমিতে। ধান চাল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

সরেজমিনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার  বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দিগন্ত জোড়া মাঠে সোনালী ধানে ভরপুর হয়ে গেছে। প্রতিটি ধান গাছে থোকায় থোকায় ধান ধরেছে।  জমির পাকা ধান কাটায় কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় তারা। এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ভালো ফলন হয়েছে। আমরা অনেক খুশি।
ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘সার-কিটনাশকসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। আমরা আমাদের উৎপাদন ব্যয় মোতাবেক ধানের দাম পাচ্ছি না।’

পৌর সভার বেতুয়া এলাকার বর্গা চাষী আসাদুল্লাহ সরকার বলেন, এবার ইউরিয়া সার পাওয়া গেলেও ডিওপিসহ অন্যান্য সারের দাম অনেক বেশি ছিল। সেই সঙ্গে জমি তৈরি করার সময় এবং চারা রোপনসহ বিভিন্ন সময় জমিতে সম্পূরক সেচ দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষেত মজুরদের মজুরি এখন ৫'শ থেকে ৬শ' টাকা দিতে হয় তার ওপর দুপুরে এক বেলা ভাত খাওয়াতে হয় ফলে ধান উৎপাদনে খরচ এখন অনেক বেশি লাগে।

ধামাইনগর ইউনিয়নের বাকাই গ্রামের কৃষক নুর হোসেন, জিন্নাহ, মাছুদ রানা, সায়দার আলীসহ অনেকেই জানান, খাদ্য গুদামে ক্ষুদ্র প্রান্তিক আর বর্গাচাষিরা ধান নিয়ে গেলে ধান কিনতে চায় না। তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে আসতে বলে। কিন্তু উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা তালিকা করার সময় বর্গাচাষিদের নাম তালিকা ভুক্ত করে না। তারা জমির মালিককে খোঁজে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জমির মালিক নয় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক আর বর্গাচাষিরাই মূলত ধান চাষ করে। ফলে তাদের নাম তালিকাতেই আসে না যার কারণে তারা ন্যায্য মূল্য কখনই পায় না। 

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানান খাদ্য বিভাগ ধান কাটামাড়াইয়ের পর পরেই যদি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করতো তা হলে কৃষকরা একটু হলেও লাভবান হতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এ অঞ্চলে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উপজেলার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে চাল অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটাবে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার দরের বিষয়টি নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। তবে এবার শুনছি খাদ্যবিভাগ সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে, সেটা হলে হয়তো কৃষকরা লাভবান হবেন।


আরও পড়ুন