হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগী, বেশিরভাগেরই ঠাণ্ডাজ্বর ও নিউমোনিয়া

news paper

মাগুরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১-১০-২০২৪ দুপুর ৩:৫৫

89Views

আবহাওয়াজনিত কারণে মাগুরায় নিউমোনিয়া, ঠাণ্ডাজ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এরমধ্যে দুই মাস থেকে এক-দেড় বছর বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এতে মাগুরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে চাপ রয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও। প্রতিদিন ঠাণ্ডজ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে ৬০০ থেকে ৮০০ শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ে আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের অতিরিক্ত যত্ন ও অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে তিল পরিমাণ পা ফেলার জায়গা নেই। এমনকি গেট পর্যন্ত পাটি বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু রোগীরা। একদিকে শিশু রোগীদের যেমন চাপ, তেমনই লোকবল সঙ্কটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।

গত ৯ দিনে অর্থাৎ ১৩ থেকে ২১ অক্টোবর সকাল ৯টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৯০০ রোগী। এরমধ্যে অর্ধেকই নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজ্বরে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাই।
 
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মোবাবশা বেগম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে এবার শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পা ফেলার জায়গা নেই। একদিকে লোকবল সঙ্কট, অপরদিকে রোগীদের চাপ সামলাতে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে।

চিকিৎসা নিতে আসা মাগুরা সদরের এক ব্যক্তি বলেন, গত চার দিন আগে হঠাৎ করেই আমার ছেলে প্রচণ্ড জ্বর ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করেও কাজ না হলে দুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা অপর এক ব্যক্তি বলেন, আমার নাতি জ্বর ও ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। অবস্থা বেগতিক হলে গত শনিবার সকালে ভর্তি করি। ওয়ার্ডে কোনো জায়গা না থাকায় নাতিকে মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছি।

মাগুরা সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাই বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, পাশাপাশি বেড়েছে বয়োবৃদ্ধের আক্রান্তের সংখ্যা ৷ তবে এরমধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আবহাওয়া ও দূষণগত কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বাড়ছে। বিশেষ করে চলমান আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক মানুষ সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

ডা. মো. এহসানুল হক মাসুম জানান, এই সময়ে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের কারণ, লক্ষণ, অ্যাডিনো ভাইরাস ও করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই চিকিৎসকের মতে, শুষ্ক মৌসুম ও ধুলাবালিসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছরই এই সময়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বাড়ে। এতে বেশি সংক্রমিত হয় শিশুরা।

তিনি জানান, কখনো কখনো ভাইরাসজনিত কারণে সর্দি-কাশি হয়। আবার কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও হয়। চলমান মৌসুমে সাধারণত শুষ্ক কাশি বেশি হয়। অনেক সময় কাশিতে শ্বাসকষ্ট হয়। দম বন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি হয়, যা শিশুদের জন্য বেশি কষ্টকর। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা লাগার পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে তা নিউমোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়। তবে সব শিশুর ক্ষেত্রে এটা হয় না।

তিনি আরো জানান, যদি শুধু শুষ্ক কাশি থাকে, তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঠাণ্ডা লাগলে শিশুরা যদি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নেয়, শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাস নেয়ার সময় শব্দ হয়, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় বা খুব বেশি জ্বর হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বর থাকা না থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর থাকাটা ইনফেকশনের সাইন। তবে যদি জ্বর না থেকে শুধু কাশি হয়, সেটা মূলত অ্যালার্জি ও আবহাওয়াজনিত কারণে হয়।


আরও পড়ুন