বাবা-মেয়ে’র রাজত্বের ১৬ বছর : কৌশলে ভূমি দখল করতেন এমপি বাহার
প্রকাশিত: ২০-৮-২০২৪ দুপুর ৪:২৯
জমি দখলে সিদ্ধহস্ত এমপি বাহাউদ্দিন বাহার। ১৫ বছরে বাহার ও সহযোগীরা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখল করেছে। ফাঁকা ও বিরোধপূর্ণ জমি পেলেই বাহিনী নিয়ে সেই জমিতে হামলে পড়তেন। দখল হওয়া অধিকাংশ জমিই স্থানীয় হিন্দুদের। কান্দিরপাড় মোড় থেকে একটু দূরে সোনালী ব্যাংকের সামনে মনোহরপুর মৌজায় ৬৬২ নং দাগে এপি ঔষধালয় ও হিন্দুদের প্রায় ৭০ শতাংশ জমি দখল করে সোনালী স্কয়ার নামে ১১তলা রাজকীয় ভবন নির্মাণ করেছেন এমপি বাহার। জমির মালিক ছিলেন শিক্ষক মনিন্দ হালদার, কৈলাশ চন্দ্র দত্ত ও ইন্দ্রভূশন দত্ত। এই জমি উদ্ধারে কুমিল্লা ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলছে। মামলা নং-২৩৫। এই ভবনে ফ্লাট কিনে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। জমির বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভবনের ৫২টি ফ্লাট বিক্রি করেও ক্রেতাদের দলিল করে দিতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, আমি ৯তলায় ৮৭ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট কিনেছি।
কিন্তু এখনো দলিল করে দেয়নি। দলিল করতে বললে তিনি কয়েক কিস্তিতে টাকা ফেরত নিতে বলেছেন। কিন্তু দলিল দিতে পারবে না। কান্দিরপাড় মোড়ে লিজের নামে টাউন হলের জমি দখল ৫তলা টাউন হল সুপার মার্কেট নির্মাণ করেছেন। মার্কেট থেকে মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। মার্কেটে তার ‘হোটেল সোনালী’ নামে আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে এখন ১৫তলা ভবন নির্মাণের চেষ্টা করায় বাধার মুখে পড়েছেন বাহার। এ ছাড়া জমি না দেয়ায় সোনালী স্কয়ারের প্রবেশপথে শরিফ ট্রেডার্সের ৩টি দোকান দখল করে দুই বছর ধরে তালা মেরে রাখেন বাহার অনুসারীরা। দোকান মালিক রাসেল আহমেদ পুলিশ সুপার, ডিসি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম ভাইয়ের বাসায় গেছি সেই অজুহাতে এমপির পিএস ইকবাল দোকানে তালা দিয়েছে।
ভয়ে এখনো দোকান খুলতে পারিনি। আসলে মার্কেটের জন্য জায়গা চেয়েছিল আমরা দেইনি দেখে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। রামঘাট জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে আরএস ২৮৫ নং দাগে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ১০ শতাংশ জমি জালিয়াতি করে নিজের নামে নিয়ে ৯তলা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করেন বাহার। ভবনের ৩টি ফ্লোরে গেস্ট হাউজ, আবাসিক হোটেল, জিমনেশিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া ও স্পোর্টস কর্ণার করেছে। সেখানে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। কেউ কেউ এই ভবনকে সোনালী স্কয়ার-২ নামেও ডাকেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, জমিটি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের। সেই জমি একজন ব্যক্তি লিখে দেন কীভাবে? দলিল দেয়ার সময় দাতা সফিউল আহাম্মদ বাবুল ২০১৭ সালের জুলাইতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারই ছিলেন না। তাহলে সে কোন ক্ষমতা বলে মুক্তিযোদ্ধাদের জমি লিখে দেন। এই দলিল পুরোটাই জাল ও অবৈধ। আমরা বিষয়টি ডিসিকে জানিয়েছি।
এ ছাড়া কান্দিরপাড়ে পরিত্যক্ত লিবার্টি সিনেমা হলের ৭০ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি দখল করেন বাহার। অভিযোগ আছে, এজন্য তিনি জমির মূল মালিক রাম চাঁদ ক্ষেত্রীর সন্তান সাজিয়ে ভারত থেকে বিধান সাহা নামের এক ব্যক্তিকে এনে এনআইডি করে জমি দলিল করে নেয়ার চেষ্টা করনে। পরে ধরা পড়ে যাওয়ায় সাব-রিজিস্ট্রার অফিসে নিজের অনুসারী আবুল বাসার সাজ্জাদকে দিয়ে জোরপূর্বক রেকর্ড রুমে ঢুকে অফিস সহকারী ছামাদকে জিম্মি করে দলিল ঘষামাজা করে আকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নং-১৫(১১)২০। নগরীর কালিবাড়ির একটি প্রাচীন স্কুল দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন বাহার।
এ ছাড়া কুমিল্লা টাউন হল পাঠাগারের পেছনে একটি পুকুর লিজের নামে দখল করে ভবন নির্মাণের চেষ্টা করার মধ্যেই পালাতে হলো বাহারকে। কুমিল্লা ক্লাবও বাহারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই ক্লাব থেকে প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা আয় হয়। তবে টাকার হদিস থাকে না। ছাতিপট্টি বজ্রপুর মৌজায় বিএস ১৪১৭৬ নং দাগে দশপূজা কালিবাড়ি মন্দিরের ২৬.৫ শতাংশ জমি দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে রাখা হয়। সাবেক এমপি বাহারের অনুসারী নান্টু মল্লিকের নেতৃত্বে ভুয়া ছেলে নিয়ে এই জমি দখল করা হয়।
এই জমি নিয়ে ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলছে। মামলা নং-৮০/১৫। রিভিশন নং-১৮/২৩। এ বিষয়ে মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানিক কুমার ভৌমিক বলেন, যারা দখলের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই সাবেক এমপির লোক। এমপির সভা সমাবেশে সম্মূখসারিতে এরাই থাকে। বাহারের ইশারা না থাকলে মন্দিরের জমি দখলের এত সাহস তাদের কখনোই হতো না। হয়তো বাহার সব জানেন। এমপি হওয়ার পরে ২০১০ সালে কুমিল্লা ডায়বেটিক হাসপাতাল দখলে নেন বাহার। দখলে নিয়ে স্ত্রী নাসরিন বাহারকে হাসপাতালের সভাপতি করেন। বর্তমান এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। হাসপাতালের কেনাকাটা, প্যাথলজি সব বাহারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এ ছাড়া আলেখারচরে ৫তলা বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি ও চক্ষু হাসপাতালটি ২০১৮ সালে দখলে নেয়া হয়। এই হাসপাতালে নিজের লোককে বসিয়ে টাকা তোলা হয়। বছরে প্রায় ৫০ লাখের বেশি টাকা আসে এই হাসপাতাল থেকে। ভিক্টোরিয়া ’ল কলেজের সামনে জেলা তথ্য অফিসের জমি জোরপূর্বক লিজ নিয়ে ৯তলা ভবন করে নিজের লোকজনকে রুম বরাদ্দ দিয়েছে সাবেক এমপি বাহার। অভিযোগ আছে, ’ল কলেজে আধুনিক ক্লাসরুম দেয়ার কথা বলে এই ভবন লিজ নেয়া হয়।
এ ছাড়া কুমিল্লা পার্ক রোডের সামনে বাদুরতলা রাস্তা দখল করে ১০টি দোকান বানিয়ে তা ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন বাহার। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে ৩টি দোকান নির্মাণ করে ভাতিজা আব্দুল আজিজ সিহানুককে দিয়েছেন। রাজগঞ্জ দেশালীপট্টিতে কেটিসিসিএ’র সমবায় মার্কেট দখল করে রেখেছেন বাহারের ভাগিনা জুনায়েদ সিকদার অপু। ৩তলা মার্কেটের প্রায় ৮০টি দোকান থেকে মাসে ভাড়া তুলে নিজের পটেকে ভরেছেন অপু। সমবায়ের সদস্যরা প্রতিবাদ করে একাধিকবার মারধরের শিকার হয়েছেন।
ফুটপাথ, ইজিবাইক, বাস ট্রাক থেকে আদায় ৫০ কোটি:
কুমিল্লা শহরের ফুটপাথ, হাটবাজার, সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, বাস-ট্রাক, কুলিবিট, বাড়িঘর নির্মাণে চাঁদা, ময়লা নিয়ন্ত্রণ করে বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হতো। চাঁদার এক এক স্পট নিয়ন্ত্রণ করতেন এক এক জন। তবে পুরো শহরের প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন বাহাউদ্দিন বাহার। মুরাদপুর হাউজিং এস্টেট নিয়ন্ত্রণ করতেন আব্দুর রহমান শহিদ, চকবাজার এলাকার কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিল ও রোকনউদ্দিন রোকন, পুলিশ লাইন থেকে ঝাউতলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাদিকুর রহমান পিয়াস, আদালতপাড়া ও কাপ্তান বাজার জহিরুল ইসলাম রিন্টু, রেসকোর্স থেকে বাদশা মিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন সরকার মো. জাবেদ, শাশনগাছা ও দুর্গাপুর সদর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাভেল। কান্দিরপাড় থেকে রাজগঞ্জ বাজার মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম সাদি, টমসম ব্রিজের আশপাশের এলাকা একক নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান শাওন, আশ্রাফপুর, বিশ্বরোড দেখেন রাসেল ও অপু, কুমিল্লা রেল স্টেশন ও ধর্মপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন আমিনুল ইসলাম মিঠু, রানিরবাজার ও তালপুকুরপাড় স্বপন, টুটুল ও মুন্না, পদুয়ার বাজার স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা অপু, জাঙ্গালীয়া বাসস্ট্যান্ড ও টার্মিনাল যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আবু সালেহ বাসেল।
শহরে চাঁদার প্রধান স্পট ছিল সাব রেজিস্ট্রার অফিস। খাজনা খারিজ, হেবা দলিল, তারিখ ভুল, নাম ভুল, ব্যাকডেটে দলিল, বয়স পাল্টে দেয়া, বিএসে ভুলেও দলিল হওয়া, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে দলিল হয়। এখানে দৈনিক প্রায় ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। টাকা তুলতেন ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম সারোয়ার শিপন। সম্প্রতি কুমিল্লা শিতলভাণ্ডার মিষ্টির দোকান দুইমাস বন্ধ রাখেন বাহারের লোকজন। অভিযোগ, বাহারের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা সিহানুক শিতলভাণ্ডার থেকে ৫০ লাখ, মাতৃভাণ্ডার থেকে ৮০ লাখ, ভগবতি পেড়াভাণ্ডার থেকে ৩০ লাখ, মুসলিম সুইটস থেকে ২ লাখ এককালীন চাঁদা নিয়ে দোকান তাদের চালাতে অনুমতি দেন।
যেভাবে গোমতী নদী বাহারের নিয়ন্ত্রণে:
গোমতী নদীর কমপক্ষে দেড়শ’ পয়েন্ট দিয়ে ড্রেজার লাগিয়ে দিনেরাতে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করেছে সাবেক এমপি বাহারের অনুসারীরা। বিক্রি হয়েছে গোমতীর চর ও বাঁধ। প্রতি শতক ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দরে এই জমি বিক্রি করা হয়। সাদা স্ট্যাম্পে লিখে দেয়া হয় এই জমি। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোথাও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে। কোথাও নদীর বাঁধের ভেতরের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কোথাও নদীর বাঁধ ও সড়ক কেটে পাইপ দিয়ে বালু ফেলে জলাশয় ভরাট চলছে। শুধু টিক্কারচর ও বানাসুয়া পয়েন্ট থেকে কোটি কোটি ঘনফুট মাটি কেটে নেয়া হয়। এতদিন বালু ও মাটি কাটার কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন সদর দক্ষিণ থানার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছান রফি রাজু। তিনি বাহার সমর্থিত চেয়ারম্যান। ট্রাক ভরে মাটি যাচ্ছে সাকুরা ব্রিক্স, তিতাস, রাজা মিয়া ব্রিক্স ফিল্ড, ইয়াসিন ব্রিক্স, সাকুরা-২ ইটভাটায়। প্রতি ট্রাক্টর মাটি ২২০০ টাকা, ডাম্প ট্রাক ৩০০ টাকা বিক্রি করা হয়। দৈনিক প্রায় ৫০ থেকে ৭০ ট্রাক মাটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মাটি ও বালু সরিয়ে নেয়া হয়। এই পুরো টাকাই বাহারের পকেটে যেতো।
হিন্দুদের পুকুর ভরাট করে প্লট বিক্রি:
বাহার এমপি হওয়ার পরে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা শহরের প্রায় ৩৭টি পুরোনো পুকুর ও দীঘি দখল করে ভরাট করা হয়। সাবেক এমপি নিজে ও তার সহযোগীরা এই দখলে জড়িত ছিলেন। অভিযোগ আছে, প্রতি পুকুর ভরাট করে ৫০ শতাংশ প্লট দিতে হতো বাহারকে। গেল বছর ঘোষপাড়ার কালীমন্দির সংলগ্ন প্রায় এক একর আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করে দখল করা হয়। কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল এই পুকুর দখল করে নেন। ২০১৮ সালে কুমিল্লা খ্রিস্টানপাড়ার পুকুর দখল করে গোমতী নদী থেকে বালু এনে ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রোমেল। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যায়ক্রমে মাটি ভরাট করে যেসব পুরোনো পুকুর দখলে নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে। বাগিচাগাঁও, অশোকতলা, রাজগঞ্জ পানপট্টি, পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকার পুকুর, দক্ষিণ চর্থার একাধিক পুকুর, চকবাজার বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পুকুর, ঠাকুরপাড়া, মদিনা মসজিদ রোড এলাকার পুকুর, জোড়পুকুর বিষ্ণুপুর, কালিয়াজুড়ি, ছোটরা, স্টেশন রোড বিআরটিসি বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পুকুর, বাগিচাগাঁও মসজিদ সংলগ্ন পুকুর, ধর্মপুর রেলগেট সংলগ্ন পুকুর, ধর্মপুর খাদ্য গোডাউন সংলগ্ন পুকুর, প্রফেসরপাড়া, হাউজিং এস্টেট এলাকায় আমদীঘি। দখল হওয়া পুকুর উদ্ধারে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ আন্দোলন করে কাজ হয়নি। এসব পুকুরের জমি শত শত কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
যার আশ্রয়ে হত্যা মামলার আসামিরা:
২০০১ সালে ভিক্টরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক দুলাল হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন বাহার। পরে ২০১৮ সালে দুলাল হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকেও হত্যা করা হয়। ১৯৯৮ সালে জাহিদ বাবু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আনোয়ার হোসেন মিঠু বাহারের প্রধান সহযোগী ছিলেন। ২০১৭ সালে জিলানী হত্যার প্রধান আসামি চিকে সহিদ ও ২নং আসামি ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসানও বাহারের অনুসারী ছিলেন। এ ছাড়া ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল হত্যা, আক্তার হত্যা, সুমু হত্যাও বাহারের ইশারায় হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুমিল্লা ইপিজেডে লুটপাট: বাহার ও তার অনুসারীদের চাঁদাবাজির বড় স্পট ছিল কুমিল্লা ইপিজেড। ইপিজেডের ৯৭টি নিটিং, প্রিন্টিং, ডায়িং, লেদার, জিপার কারখানার সমস্ত ওয়েসটেজ ও ঝুট নিয়ন্ত্রণ করতেন এমপি বাহারের অনুসারী ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসেম। ইপিজেজ থেকে ঝুটের ট্রাক বের হলেই ট্রাক প্রতি ২ লাখ টাকা দিতে হতো। এতে দৈনিক অন্তত ১০টি ট্রাক থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। চাঁদার টাকা বাহারের জামাতা সাইফুল ইসলাম রনির হাত ঘুরে বাহারের মেয়ে সূচনার কাছে চলে যেতো। কারখানার বর্জ্য শোধনাগার বন্ধ রেখে বর্জ্য খালে ছেড়ে দিতে সহায়তা করায় ইপিজেড থেকে মাসে প্রায় ৭ কোটি টাকা তুলে নিতেন বাহারের ভাগিনা সহিদ ওরফে চিকে সহিদ।
কুমিল্লা স্টেডিয়াম সিন্ডিকেট:
২০১৫ সালে কুমিল্লা স্টেডিয়াম আধুনিকায়নের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন লোটাস কামাল। তবে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। বরাদ্দের টাকাও লোপাট হয়ে গেছে। এমনকি স্টেডিয়ামের বিভাগীয় খেলায় লোটাস কামাল প্রধান অতিথি হলেও তাকে কুমিল্লায় ঢুকতে দেয়নি বাহার সমর্থকেরা। স্টেডিয়ামের সিঁড়ির নিচে প্রায় দেড় শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মাসিক ভাড়ার প্রায় ১০ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতেন বাহারের লোকজন। স্টেডিয়াম উন্নয়ন তহবিলের টাকাও নয়ছয় করার অভিযোগ আছে বাহারের বিরুদ্ধে।