মরিচা পড়া দা, ব‍ঁটি, কাঁচিতে শান দিয়েই চলে ভূমিহীন আমিরুলের সংসার

news paper

জামাল বাদশা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ১৭-৮-২০২১ বিকাল ৫:১৫

16Views

পুরনো কাঁচি, ব‍ঁটি, চাকু কিংবা দা ধার (শান) দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করাই তার কাজ। গ্রামের ভাষায় ধার করা (শান দেয়া) কাজে ব্যবহার করা এই মেশিনের নাম শান মেশিন। নিজের তৈরি এই শান মেশিনে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এবং বিভিন্ন হাট-বাজারে গত ৩৫ বছর ধরে গিয়ে শান দেয়ার কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটোর্ধ ভূমিহীন আমিরুল ইসলাম। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই অনেক কষ্টে পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে তার। শেষ বয়সে এসে বসবাস করতে হচ্ছে ছেলের কেনা জমিতে। তাও আবার দুর্বিষহ অবস্থা। নেই মাথাগোঁজার ভালো ঠাঁইটুকুও। তবুও নিরুপায় হয়ে সেখানেই বাস করছেন।
 
আমিরুল ইসলাম উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের ভূল্ল্যারহাট ডাঙ্গাপাড়া ‍ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত ছমির উদ্দিন পাইকারের ছেলে। তার নিজের বলতে কিছুই নেই, ছেলের জমিতে একপাশে ঘর করে রাতযাপন করেন তিনি।  
 
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিন কালীগঞ্জ বাজারে দেখা যায়, আমিরুল শান দেয়া মেশিনটির চাকা সাইকেলের প্যাডেলের মতো পা দিয়ে সজোরে ঘুরিয়ে শান দিচ্ছেন। এতে একটি পাথরের প্লেট সজোরে গোরাতে হচ্ছে তাকে। ঘূর্ণয়মান ওই পাথরের প্লেটের কার্নিশে লোহার চাকু, দা ও কাঁচি স্পর্শ করলে ঘর্ষণে ধার উঠে যায়। এ সময় ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকিও বের হয়। এই আগুনের ফুলকি ছিটকে আসে, যা শরীর ও চোখের জন্য  ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে দুই পায়ে প্যাডেল ঘোরানোর কাজ খুবই পরিশ্রমের। শরীরে না কুলালেও জীবিকার তাগিদে তাকে শান দেয়া মেশিনের প্যাডেল ঘোরাতে হচ্ছে।
 
এ সময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে কখোনো স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাল্যকাল হতেই জীবিকার তাগিদে পরের ক্ষেতে কামলা (দিন হাজিরা) খেটে সংসারে আয়-উপার্জন করতে হয়েছে। যখন ২৫ বছর তখন থেকেই একটি শান দেয়া মেশিন কাঠের ফ্রেমে তৈরি করে শুরু করেন গ্রাম-গঞ্জে হাট-বাজারে গিয়ে মরিচা ধরা পুরনো কাঁচি, দা ও চাকুতে ধার ওঠানোর কাজ। পরে পুরাতন বাইসাকেল কিনে সেটাতে শান দেয়ার পাথর সেটিং করে ৩৫ বছর ধরে ওই মেশিনেই চলছে এ কাজ। প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২৫০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই চলছে পরিবারের ভরণ-পোষণ।
 
সংসারে আমিরুলের দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখনো তাকে এই বয়সে এসে জীবিকার তাগিদে শান দেয়ার কাজ করতে হচ্ছে।তি নি বলেন, আমি একজন ভূমিহীন মানুষ। এই বয়সে এসে শান দেয়ার কাজ করতে ইচ্ছ‍া করে না। অন্য কোনো কাজও জানা নেই। মরার আগ পর্যন্ত শান দেয়ার কাজ করে বাঁচতে হবে। সারাদিন কাজ করে বাড়িতে যাই কিন্তু শান্তিমতো ঘুমানোর অবস্থা নেই বাড়িতে। প্রধানমন্ত্রী যদি দয়া করে একটা ঘর দিতেন তাহলে শান্তিতে ঘুমানোর অন্তত একটা ব্যবস্থা হতো।

আরও পড়ুন