বিএনপির বিকল্প তৃণমূল!

news paper

ইউসুফ আলী বাচ্চু

প্রকাশিত: ২০-৯-২০২৩ বিকাল ৫:৮

2Views

হঠাৎ করেই তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এসেছে। দলটির চেয়ারম্যান হয়েছে বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী। এছাড়া মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন দলটির আরেক পোড়খাওয়া নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ নিয়ে রাজনীতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে এ দলটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিএনপিকে বঞ্চিত এবং বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা এ দলে যোগ দিতে পারেন। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে আমুল পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটা সরকারের এক প্রকার নীল নকশা।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বিএনপি সাবেক দুই নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও শমসের মবিন চৌধুরী খুবই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। সমসের মবিন চৌধুরীর আন্তর্জাতিক মহলে তার গ্রহণ যোগ্যতা অনেক। পাশাপশি তৈমুর আলম খন্দকার দেশের রাজনীতিতে তিনি একজন পরিচ্ছন্ন নেতা। এদের এই নেতৃত্বের কারণে বিএনপির অনেক নেতা এখানে যুক্ত হবে এবং বিভিন্ন সময় যাদেরকে অন্যায়ভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা যুক্ত হবে। ফলে তৃণমূল বিএনপি বিকল্প হতে পারে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটি থাকবে বিশেষ ভূমিকায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক  উপাচার্য ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে একটি দলের নতুন নেতৃত্ব যাদের হাতে দেয়া হয়েছে, তারা দু’জনই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মতো মূল দলের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপি করা হয়েছে। এটা কতটুকু স্থায়ী হবে তা এখন বলা যাবে না। তবে বিএনপিতে একটি ধাক্কা লাগতে পারে। বিশেষ করে সারাজীবন রাজনীতি করে যারা কিছুই পায়নি তারা এ দিকে ঝুকবে।
এতে সামনের নির্বাচনে কিছুটা প্রভাব পড়বে। এনমকি বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তৃণমূল বিএনপি বিকল্প হতে পারে। তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি যেদিন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় তার তিনদিন পর দলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মারা যান। এরপর তার মেয়ে দলের দায়িত্ব নেন এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য লোকদের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি থেকে ২০১৫ সালে পদত্যাগ করেন শমসের মোবিন চৌধুরী। এরপর ২০১৮ সালে বিকল্প ধারায় যোগদান করেন। ওই সময় তাকে বিকল্প ধারায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেলেও বর্তমানে দলের সঙ্গে তাকে দেখা যায় না। তবে বিএনপি’র সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে মূলত কূটনৈতিক বিষয়ে কাজ করতেন তিনি। 
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার অভিযোগে ২০২২ সালে তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। কিন্তু বহিষ্কারের পরেও দলের প্রত্যেক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। সর্বশেষ ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার জন্য লিখিত আবেদনও করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। 
এবিষয় তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, দেড় বছর হলো আমি বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেয়া হয়নি। আমার তো রাজনৈতিক পরিচয় দরকার। আর কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন। এজন্যই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 
সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন একটি দলের নেতৃত্বে আসার পর, রাজনৈতিক ভাবনা কী আপনার? এ প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম বলেন, ‘যেহেতু আমি রাজনীতি করতে চাই, কথা বলতে চাই, গণমানুষের পক্ষে থাকতে চাই, সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই। এ জন্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে গেছি। আমি তো জীবনের যে অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থাতেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রাজনীতি করেছি। আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষ। নতুন দলে এটাই হবে আমার রাজনৈতিক ভূমিকা।’তা ছাড়া, বিএনপি থেকে সাবেক বা বহিষ্কার হওয়া অনেকেই এখানে যোগ দেবেন। নতুন আসা অনেকেই সাবেক বিএনপির হবে। তবে তাদের নাম-পরিচয় আপাতত বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে বিএনপি মনে করছে, তৃণমূল বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি ভাঙার নতুন দোকান। তারা মনে করছেন, এই দোকান শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয় বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙার একাধিক চেষ্টা করা হবে এটা আমরা জানি। এর আগেও বিএনপিকে ভাঙার জন্য সরকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। ১৬ বছরে বিএনপিকে কেউ ভাঙতে পারেনি। এবারও সেই চেষ্টা সফল হবে না।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, তৃণমূল বিএনপিতে বিএনপির অনেক নেতাই যোগ দিতে পারেন। একাধিক বিএনপির নেতার সঙ্গে তৃণমূলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যারা তারেক জিয়ার দ্বারা নির্যাতিত নিপীড়িত, তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে পছন্দ করছেন না, তারেক জিয়ার কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বকে যারা এক ধরনের দাসত্ব বলে মনে করছেন তারাই তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিকে সংগঠিত করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায় তাহলে তারা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। আবার অনেকেই মনে করছেন যে, বিএনপির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা এই দলটিতে যোগ দেবেন। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ কোনোদিন রাজনৈতিক দল ভাঙার চেষ্টা করে না।
উল্লেখ্য, তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার পর পরই দলের প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই দলটিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের ভিতর ও বাইরে থেকে প্রচণ্ড চাপ আসতে থাকে। পরে দলটির দায়িত্বে আসেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা। প্রতিষ্ঠার ৮ বছরে এসে গতকাল মঙ্গলবার তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তাতেই দলটির নেতৃত্বে এলেন এই দুই নেতা। কাউন্সিলে নির্বাহী সভাপতি হয়েছেন অন্তরা সেলিমা হুদা। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কন্যা।


আরও পড়ুন