ঢাকা মহানগরে বিএনপির জগাখিচুড়ি কমিটি

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩-৮-২০২১ দুপুর ১১:২

3Views

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি বিলুপ্ত করে গত ২ আগস্ট নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুই কমিটিতেই নতুন ও পুরাতনের সমন্বয় করা হয়েছে। এই সমন্বয় করতে গিয়ে সমন্বয়হীনতা দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করছেন নেতা কর্মীরা।

তারা বলছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে জগাখিচুড়ি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং দলের প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বলয়ের পরিচিতদের নিয়ে এই দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভক্ত নেতা কর্মীদেরকে এক প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যেও অনেক ত্যাগী ও যোগ্যরা বাদ পড়েছেন বলে নেতা কর্মীদের অভিযোগ।

ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও দলের ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

সোমবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগরের এই দুই কমিটি অনুমোদন করেছেন।

নগর বিএনপির ঘোষিত কমিটিতে মহানগর উত্তরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুইজনই মহানগর কেন্দ্রিক রাজনীতিতে নতুন মুখ। ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২ আসন থেকে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী এই নেতা মহানগর দক্ষিণের বিষয়ে বেশি আলোচিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত উত্তরের দায়িত্ব দিয়ে চমক সৃষ্টি করা হয়েছে।

অন্যদিকে উত্তরের সদস্য সচিব হিসেবে আলোচিত আমিনুল হক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে একের পর এক চমক সৃষ্টি করছেন। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই অধিনায়ক ২০১৫ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। তরুণ নেতা হিসেবে শুরু থেকেই আলোচিত এ নেতা ২০১৬ সালে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক হন। পরবর্তীতে দলের বিভিন্ন প্রয়োজনে তার উপর নানাবিধ দায়িত্ব অর্পণ করেন বিএনপির হাই-কমান্ড। এতে সন্তুষ্ট হয়ে এবারও তাকে দলের গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে দলটির নেতা কর্মীরা জানান।

জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন, দলের পক্ষ থেকে তার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা তিনি নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালন করবেন। দলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিবেন। এর জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত তিনি।

মহানগর উত্তরে কাইয়ুম বলয় হিসেবে পরিচিতদেরকেও সমন্বয় করা হয়েছে। বিগত দিনে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পৃথক পথচলা নেতাদেরকেও এখানে পদায়ন করা হয়েছে বলে এবার তেমন অসন্তোষ হবে না বলে আশাবাদী বিএনপি।

কমিটিতে নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তাবিথ আউয়ালকে সিনিয়র সদস্য করা হয়েছে। যাতে কমিটি গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন নেতা কর্মীরা।

গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণে মহানগর রাজনীতির দুই বিপরীত মেরুকে সমন্বয় করা হয়েছে। বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলয়ের পরিচিত ও মহানগর কেন্দ্রিক রাজনীতির অভিজ্ঞ নেতা আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যদিও আব্দুস সালাম এখন উভয় বলয়ের সাথে সমানতালে সম্পর্ক বজায় রেখে রাজনীতি করছেন। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আসন হিসেবে তিনি মহানগর উত্তরে অবস্থিত ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলয়ের হিসেবে পরিচিত মহানগর কেন্দ্রিক রাজনৈতিক নেতা রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। রফিকুল আলম মজনু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। যদিও তার নির্বাচনী আসন ফেনী-১ আসন।

তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক কমিটির নেতৃবৃন্দ মহানগর কমিটি থেকেই নেতৃত্ব নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিলেন। সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন নেতারা। কিন্তু দুইবার দায়িত্ব পালনকারী এই নেতাকে নিয়ে দলের নতুন পরিকল্পনা থাকায় তাকে এবার এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ দিকে উদীয়মান নেতা হিসেবে পরিচিত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে সিনিয়র সদস্য করা হয়েছে। যদিও তার প্রত্যাশা ছিলো সদস্য সচিবের। কিন্তু নতুন মুখ হিসেবে তাকে রাজনৈতিক হিসেবে দক্ষ করার জন্য বিএনপির হাই-কমান্ড এ পদে আনয়ন করেছেন বলে জানা গেছে।

রফিকুল আলম মজনু বলেন, দল তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। অন্যদিকে ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণের কমিটিতে ছাত্রদলের তিন নেতাকে পদায়নে নেতা কর্মীদের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। এমনকি ছাত্রদলের এই তিন নেতারাও এমন পদ প্রত্যাশা করেন নাই।

নেতা কর্মীদের মতে, অনেক যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেয়া হয়েছে এই কমিটিতে। এর মধ্যে মহানগর কমিটির সাবেক সিনিয়র সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবীব, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেয়া শেখ রবিউল আলম রবি, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ প্রয়াত নাসির উদ্দিন পিন্টুর অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা বাদ পড়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ এবং এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তরের কমিটি করা হয়েছিলো। গত বছর হাসান করোনায় আক্রান্ত হয়ে আহসান উল্লাহ হাসান মারা গেলে এই দায়িত্ব পান আবদুল আলিম নকী।

 


আরও পড়ুন