যে বিষয়গুলো বিশ্ব মানচিত্রে সফল এক বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি 'অস্বাভাবিক' চিঠি লিখতে কংগ্রেসম্যানদের অনুপ্রাণিত করেছে

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ৭-৬-২০২৩ দুপুর ৩:৪৩

6Views

১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক দেশ এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আয়তন ছোট্ট হলেও তার সফলতার পরিধি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেক বেশি। ১৯৭১ এ যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে বাংলাদেশের পদচারণা উন্নয়নের এমন কোনো শাখা নেই যে তাতে রাখেনি। বিগত এক যুগ ধরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের মানদন্ড অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আবার জাতিসংঘের মানদন্ড অনুসারে ২০১৮-২১ সালের পর্যালোচনায় ধারাবাহিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করে। গত দশকে কভিড-১৯-এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় ও সামাজিক সূচকগুলোর মধ্যে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগিয়ে। এর সঙ্গে রয়েছে এমডিজি ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য ও দারিদ্র্য নিরসনে অসামান্য অর্জন।আমাদের দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মুখে তা খুব বেশি উচ্চারিত না হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম,নামকরা অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের চোখ এড়ায়নি। তারা নির্ধিদ্বায় বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরেছেন।
আমেরিকার নিউইয়র্কভিত্তিক অন্যতম সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (৩ মার্চ, ২০২১) বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির ‘বুল কেস’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে পত্রিকাটি বলেছে, বাংলাদেশের রফতানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামে যে উন্নয়ন মডেল দেখা গিয়েছে তার সবচেয়ে কাছাকাছি মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি ধনী ছিল, আর বাংলাদেশ এখন ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী।
আরো এক খ্যাতনামা পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস (১০ মার্চ, ২০২১) শিরোনাম লিখেছে ‘বাইডেনের পরিকল্পনা দারিদ্র্যের জন্য কি কাজে লাগতে পারে? বাংলাদেশের দিকে তাকাও।’ ৫০ বছর আগে গণহত্যা, অপরিুছন্নতা ও ক্ষুধায় মৃত্যুর মধ্যে জন্ম লাভ করে বাংলাদেশকে মনে হয়েছিল আশাহীন। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বেড়েছে। করোনার আগের চার বছরের গড় প্রবৃদ্ধি চীনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর পেছনে অন্যতম রহস্য হলো মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মে অংশগ্রহণ। বাংলাদেশে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। নিউইয়র্কভিত্তিক ম্যাগাজিন নিউজ-উইক তাদের একটি প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম গতিশীল ও সম্ভাবনাময়ী দেশ। ২০০৯ থেকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত রূপান্তর ঘটেছে এবং আগামী অর্ধশতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের শুধু আঞ্চলিক পাওয়ারহাউজ নয় বরং বৈশ্বিক পাওয়ারহাউজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্রডকাস্টার ‘ডয়েচে ভেলে’ও (১৬ ডিসেম্বর, ২০২১) এক শিরোনামে লিখেছে, ‘বাস্কেট কেস থেকে উদীয়মান অর্থনৈতিক তারকা।’ ৫০ বছরে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। জাপানভিত্তিক পৃথিবীর বৃহত্তম আর্থিক সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার (২৩ নভেম্বর, ২০২০) শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ সঠিক কারণে তার সমালোচনাকারীদের হতবাক করে দিয়েছে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক ডিপ্লোমেট ম্যাগাজিন (১৫ মার্চ, ২০২১) বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পেছনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্য ভারতের মতো রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে যায়নি। ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস্ অব ইন্ডিয়া (৩ এপ্রিল, ২০২২) লিখেছে, বাংলাদেশ কেন ভারতকে অনেক পেছনে ফেলেছে? ১৪ বছর আগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের মাত্র অর্ধেক ছিল। অথচ গত বছর ভারতকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। সহস্রাব্দের দ্বিতীয় দশকটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সোনালি দশক। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য তা শুধু ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
অর্থনীতির বাইরেও বাংলাদেশের ধারাবাহিকভাবে দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণ হলো গত দুই দশকে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সূচক যেমন স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, রাজনীতিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফরচুন ম্যাগাজিনের (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯) ইন্ডিয়া সংস্করণে বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, ‘বছরের অর্থনৈতিক মিরাকল।’ উচ্চ প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে জেন্ডার অসমতা দূরীকরণ; সব ক্ষেত্রে যদি কোনো দেশ প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে থাকে সেটি হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় শক্তি হিসেবে ধরা হয়েছে কর্মজীবী নারীদের। কারণ জেন্ডার সমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে হার মানিয়েছে। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ, ভারতে ২০ ও পাকিস্তানে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ যে এগিয়েছে নারীর কর্মক্ষেত্রে অধিক অংশগ্রহণ অন্যতম কারণ।
ভারত ও শ্রীলংকার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রগতির ব্যাপারে পাকিস্তানের পত্রিকাগুলো অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত। ‘বাংলাদেশ থেকে সাহায্য’ ঠিক এ নামেই শিরোনাম দিয়েছে পাকিস্তানের দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকা (২৪ মে, ২০২১)। ২০ বছর আগেও এটা অচিন্তনীয় ছিল যে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ হবে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ‘অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজে’ পরিণত হবে। আর পাকিস্তানের শোচনীয় অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ থেকে সাহায্য নিতে হবে। পত্রিকাটি বলছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০ বছরে ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা পাকিস্তানের আড়াই গুণ বেশি। বাংলাদেশের রফতানি ২০০০ সালে পাকিস্তানের অর্ধেক ছিল। ২০ বছরে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ৭০০ শতাংশ যা পাকিস্তানের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। বাংলাদেশের রফতানিআয় এখন পাকিস্তানের দ্বিগুণ।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নামকরা অর্থনীতিবিদ যারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এখনো পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের মূল্যায়ন কী তা জানা দরকার। স্টিফান ডারকন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক পলিসির অধ্যাপক। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর ব্রিটিশ বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টে (ডিএফআইডি) প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি একটি বই লিখেছেন, ‘গ্যাম্বলিং অন ডেভেলপমেন্ট: হোয়াই সাম কাউন্ট্রিজ উইন অ্যান্ড আদারস লুজ।’এ বইয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে যার নাম ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার কাব’।এতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিগত তিন দশকের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বে অন্যতম সফল গল্পগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ কিছু ক্ষেত্রে অনেক ভালো করেছে যেমন যথার্থ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গার্মেন্টস শিল্প কিংবা প্রবাসে কর্মজীবী পাঠানোর সুযোগের ক্ষেত্রে বহির্মুখী প্রবণতাকে উৎসাহ দেয়া।এর ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন সম্ভব হয়েছে। তিনি অধ্যায়ের শেষ বাক্যে বলেছেন,‘হতে পারে আগামীতেও বাংলাদেশ আমাদের প্রতিনিয়ত অবাক করে দিতে থাকবে।’
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ তার একটি নিবন্ধে (২৫ মার্চ, ২০২১) উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ হেনরি কিসিঞ্জারের ‘বাস্কেট কেস’ থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে। এ অর্থনৈতিক রূপান্তরের পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক উপাদান নিহিত রয়েছে। প্রগতিশীল সামাজিক নীতি ও কিছুটা ঐতিহাসিক ভাগ্য এ দুইয়ের ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে উদীয়মান ‘টাইগার’ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও অপ্রত্যাশিত সাফল্য গাথা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বের বাইরে রাষ্ট্রনায়করাও বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রশংসা প্রকাশ করেছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মতে, বাংলাদেশের মানুষ পরিশ্রমী ও আত্মনির্ভরশীল। ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিগত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটেছে এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্যের ভাগ কমাতে সাহায্য করেছে। একই সুর পাওয়া যায় জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেইয়ারের ভাষায়ও। বর্তমান বাংলাদেশ হলো উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও গতিশীল গণতন্ত্রের দেশ। বাংলাদেশ উদ্ভাবনী উন্নয়ন নীতির মাধ্যমে দারিদ্র্য কমাতে সক্ষম হয়েছে।
আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টেটিভ গ্রুপের বাংলাদেশের ওপর বিশেষ প্রতিবেদন ‘দ্য ট্রিলিয়ন ডলার প্রাইজ’ অনুযায়ী ২০১৬-২১ এ সময়ে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তার তুলনীয় দেশ ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে অনেক বেশি ভালো করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে  ভোক্তাদের আশাবাদ, ভোগ বৃদ্ধি (বিশ্বের নবম ভোগ বাজার), তরুণ শ্রমশক্তি (জনসংখ্যার মধ্যমা বয়স ২৮), উচ্চ অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, ডিজিটাল গতিবেগ (১৭৭ মিলিয়ন মোবাইল ব্যবহারকারী), সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি (বিগত দশকে তিন গুণ বেড়েছে), ব্যক্তি খাতে দ্রুত বৃদ্ধি, দ্রুত বর্ধনশীল গিগ অর্থনীতি (বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারের ১৫ শতাংশ)। বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি ১০ শতাংশ হারে বাড়ে তাহলে ২০৩০ সালে, ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০৪০ সালে ট্রিলিয়ন ডলারের বড় ইকোনমিতে পরিণত হবে।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ  বিশ্ব মানচিত্র প্রতিনিয়ত  এমন সফলতার পদচিহ্ন রেখে যাওয়া গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ যড়যন্ত্র। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ এক চক্রান্ত।  
কট্টরপন্থী রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা তাদের রাজনৈতিক অনুশীলনে অস্বাভাবিক এমন একটি চিঠি লিখতে কী অনুপ্রাণিত করেছিল তা নির্ধারণ করা কিছুটা কঠিন। মনে হচ্ছে হয় ভূ-রাজনৈতিক হিসেব বা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিরোধী দলগুলোর এই দুই কারণে এই ধরনের একটি চিঠি অনুমোদন করে কংগ্রেসম্যানরা তাদের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে। চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের মধ্যে, বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য বেছে নিচ্ছে। গত কয়েক বছরে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ‘চীন-ঝুঁকে পড়া’ দেশ হিসেবে দেখছে। যেহেতু বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে, সেহেতু চিঠিটি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্যের একটি পণ্য হতে পারে। চিঠিটি বর্তমান সরকারের ওপর চাপ হিসেবে কাজ করতে পারে। কেন কংগ্রেসম্যানরা এমন অস্বাভাবিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল তার একটি ব্যাখ্যা। অন্যদিকে, এটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর লবিং-এর ফসল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিং একটি আইনি প্ররোচনা প্রক্রিয়া কিন্তু বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক জায়গায় এটি অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। ২০১৮ সালের পলিটিকো রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষে লবিং করার জন্য আব্দুল সাত্তার নামে একজন দলের সদস্যের মাধ্যমে দুটি কোম্পানি- ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস এবং রাস্কি পার্টনারস নিয়োগ করেছে। ব্লু স্টারের সাথে চুক্তির মূল্য ছিল আগস্ট মাসে $২০,০০০ এবং ২০১৮ সালে বাকি বছরের জন্য মাসে $৩৫,০০০। রাস্কি পার্টনারস ব্লু স্টারের একটি উপ-কন্ট্রাক্টর হিসাবে কাজ করত এবং আগস্ট  মাসে $১০,০০০ এবং মাসে $১৫,০০০ মূল্যের পেমেন্ট পাবে বছরের বাকি সময়। যুক্তরাষ্ট্রের মঞ্জুরিপ্রাপ্ত র‌্যাব ও তার সাত সদস্যের উপর নিষেধাজ্ঞার পর আরও একবার সামনে এল লবিং প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি লবিস্ট ফার্ম এবং আরেকটি ২০১৯ সালে ভাড়া করেছিল। তার মতে, বিএনপি এবং জামায়াত মোট আটটি লবিস্ট ফার্মকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগ করেছিল। এর মধ্যে মার্কিন সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি ফার্মকে ১৩২ হাজার ডলারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত লবি সংস্থাগুলিই কংগ্রেসম্যানদের চিঠিটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুসরণ করেছিল। সংখ্যালঘু জনসংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা অনুমান লবিস্টদের দ্বারা খাওয়ানো ভুল তথ্য হতে পারে। কারণ কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের ন্যূনতম দক্ষতার কারণে এগুলো অজানা ছিল। এটা স্পষ্ট যে চিঠিটি কংগ্রেসম্যানদের জন্য তাদের রক্ষণশীল এবং ডানপন্থী রাজনৈতিক বিশ্বাস বিবেচনা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অস্বাভাবিক। তবুও, তারা তাই করেছে। সুতরাং এই চিঠির পিছনে একমাত্র কারণ হলো এই যে, চিঠিটি নিঃসন্দেহে ভূ-রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা বিএনপি-জামায়াত লবি দ্বারা প্রভাবিত।


আরও পড়ুন